ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চলন‌বি‌লে ১ হাজার টন মধু আহরণের সম্ভাবনা

প্রকাশনার সময়: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ২১:৫০

চলনবিল শুধু মাছ, ধান, সরিষা ও রসুন নয় এখন মধু উৎপাদনেও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। হলুদ সরিষা ফুলের মাঠ এখন মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিলটি। এখন এ অঞ্চলের ফসলের মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, সঙ্গে মধু উৎপাদনে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। মৌচাষিরা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন, চলনবিল অঞ্চল থেকে ১ হাজার টনের অধিক মধু আহরণ সম্ভব, য‌দি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলনবিল অঞ্চলের ৯টি উপ‌জেলার চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন আগাম ও নাবী জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। চলনবিলে মাঠের পর মাঠ দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর থোকা থোকা হলুদ ফুলের চাদর বিছানো।

নয়নাভিরাম সেই সরিষা ক্ষেতের আইলে আইলে এখন শুধুই সারি সারি মৌ-বাক্স। ইউরোপিয়ান হাইব্রিড এপিস মেলিফেরা মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিলাঞ্চল। ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি উড়ে গিয়ে সরিষা ফুলে বসছে। কিছুক্ষণ পর পর মধু নিয়ে উড়ে এসে মৌমাছির দল ফিরছে মৌ-বাক্সে। চলতি মৌসুমে যদি আবহাওয়া অনুকূল থাকে তাহলে চলনবিল থেকে ১ হাজার টনের অধিক মধু আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান যার বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৩শ টাকা হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। প্রায় এক মাস আগে বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৩ শতাধিক প্রশিক্ষিত মৌখামারি চলনবিলে অস্থায়ী আবাস গেড়েছেন। মৌচাষিরা সরিষার জমির আইলে ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার মৌবাক্স বসিয়েছেন। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সরষে ফুলের মধু আহরণ চলে।

মাগুড়া জেলা থে‌কে আসা মৌচা‌ষি র‌ফিকুল জানান, মধু সংগ্রহের জন‌্য আমরা বি‌ভিন্ন সম‌য়ে বি‌ভিন্ন জায়গায় অবস্থান ক‌রি। যেমন- স‌রিষা ফু‌লের জন‌্য সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া, লিচু ফু‌লের জন‌্য দিনাজপুর ও না‌টোর, কুমড়া ফু‌লের জন‌্য ঠাকুরগাঁও, কা‌লো‌জিরা ফু‌লের জন‌্য শরীয়তপুর এবং তিল ফু‌লের জন‌্য নিজ এলা‌কা‌তেই অবস্থান ক‌রি। ত‌বে বছ‌রের ৪ থে‌কে ৫ মাস চি‌নি খাই‌য়ে মৌমা‌চি‌দের‌কে বাঁচি‌য়ে রাখ‌তে হয়।

পরিবেশবিদরা জানান, মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না, ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে ক্ষেতে কম কীটনাশক ব্যবহার হওয়ায় উপকৃত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির এজেন্টরা চলনবিলের মাঠ থেকে অপরিশোধিত মধু অগ্রিম কেনা শুরু করেছে।

তাড়াশ হাসপাতালের চিকিৎসক বিউ‌টি রাজ জানান, প্রাচীনকাল থেকে মধু বহু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

মধু পরিপাকে সহায়তাসহ নানা জটিল রোগ নিরাময়ে সহায়তা ক‌রে থাকে। এছাড়া মধুতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও ভেষজ গুণ রয়েছে।

উপ‌জেলা কৃ‌ষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ব‌লেন, চল‌তি বছ‌রে তাড়াশ উপ‌জেলায় দে‌শের বি‌ভিন্ন অঞ্চল থে‌কে প্রায় ৫৫ জন মৌচা‌ষিরা ৬৬৮১ টি মৌবাক্স দি‌য়ে মধু সংগ্রহ কর‌ছেন। যে সকল স‌রিষার জ‌মি‌তে মধু সংগ্রহ করা হয় সে সকল জ‌মি‌তে ফলনও ভা‌লো হয়।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ