শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত পশ্চিম বগুড়ার আদমদীঘিতে প্রচুর পরিমাণে শীতের শাকসবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তবে বাজারে আমদানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। সবচেয়ে দাম কমেছে মুলার। পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি মুলা এখন ১ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন চাষিরা। এদিকে মূলার গায়ে দাগ হওয়ায় বাজারে চাহিদা না থাকায় এবং মুলা বাজারজাত করতে শ্রমিকের মূল্যও উঠবেনা চিন্তা করে ফসলি জমি থেকে এসব মুলা তুলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার ছাতিয়ানগ্রামের দূর্গাপুর মাঠে গিয়ে দেখা গেছে শত মণ মুলা তুলে ফেলা দেওয়া হচ্ছে। এসব মুলার জমিতে এখন অন্য ফসল চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের মুলা চাষি নাদিরা বেগম বলেন, এবার ১৫ শতাংশ জমিতে মুলার আবাদ করেন। বাজারে মূলার দাম না থাকায় এবং মুলার গায়ে দাগের কারণে তিনি জমি থেকে নিজেই মুলাগুলো তুলে ফেলে দেন। আরেক কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি খরচ তুলতে কয়েকমণ মুলা হাটে নিয়ে এসে বিপদে পড়েন। এক টাকা দরেও মুলা বিক্রি করতে পারনেনি। এবার মুলা চাষ করে তিনিও হতাশ হয়েছেন। এজন্য মুলা তুলে ফেলে দিয়ে তিনি ওই জমিতেই অন্য শাক-সবজি চাষ করবেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি রবি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩১৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে এবার ৩২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে শাক-সবজির দাম কিছুটা বেশি থাকলেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় কমেছে দাম। এখানকার শাক-সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম হাটের মুলা ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী ও সোহেল রানা জানান, শুরুর দিকে আশানুরূপ দাম পেলেও মুলার বাজারমূল্যে দ্রুত ধস নেমেছে। শুরুর দিকে আড়াই হাজার টাকা মণ থাকলেও এখন ৪০ টাকা মণ দরে মুলা বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া হাটে প্রচুর মুলার আমদানি হয়েছে। তাই দাম কম। ফলে মুলা নিয়ে হাটে এসে ক্রেতার অভাবে বসে থাকতে হয়। কেউ দামই করছে না। এ কারণে কৃষকের লাভতো দূরের কথা খরচও উঠছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া আবহওয়া ভালো থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছেড়ে গেছে। এবার অন্য সবজির সঙ্গে চাষিরা একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ মুলা চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হওয়ায় হাট-বাজারে আমদানিও বেশি। তাই দাম দ্রুত কমে যাচ্ছে।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ