ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশ্বের সবচেয়ে বড় কুরআন শরিফ দেখতে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশনার সময়: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ২৩:১৬

সাতক্ষীরার হাবিবুর রহমানের হাতে লেখা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কুরআন শরীফের দুদিনব্যাপী প্রদর্শনীর শেষ দিনেও উপচেপড়া ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো।

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নারী-পুরুষ, শিশুসহ সকল বয়সের মানুষ হাতে লেখা মহাগ্রন্থ আল কোরআন কাছ থেকে দেখেন। শুধু সাতক্ষীরা নয় খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার হাজারো মুসলিম গাড়ি ভাড়া করে এসে ভিড় জমিয়েছেন।

রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা শহরতলীর মেহেদীবাগের ‘মসজিদে কুবায়’ সমাপনী অনুষ্ঠানে মসজিদে কুবা পরিচালনা কমিটির সভাপতি দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নুর ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন লেখক হাবিবুর রহমান, ফিফার রেফারি তৈয়ব হাসান সামছুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, সমাজসেবক আবুল কালাম বাবলা, মসজিদে কুবা’র ইমাম মুফতি সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। মোনাজাত পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মসজিদের খতিব মাওলানা সাইফুল্লাহ।

হাবিবুর রহমান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশপোল এলাকায় মো. আজিজুর রহমান ও ফিরোজা পারভীন দম্পত্তির সন্তান।

হাবিবুর রহমান বলেন, আমি কখনও মাদ্রাসায় পড়িনি। ২০০৩ সালে সাতক্ষীরা শহরের পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ২০০৫ সালে এইচএসসি ও পরবর্তীতে এলএলবি সম্পন্ন করেছি। ২০১৩ সালের দিকে সাতক্ষীরা শহরের সমাজ সেবা অফিসে কম্পিউটার ইনস্ট্রাকটর হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে ব্যবসা করছি। সমাজসেবা অফিসে কাজ করার সময় থেকে সমাজের অসহায় অবহেলিত গরিব মানুষের দূরবস্থা দেখে তাদের পাশে থেকে চিকিৎসাসেবার জন্য কিছু একটা করার আগ্রহ জাগে। তখন থেকে আমি চিন্তা করি এমন কিছু করব, যা বিশ্ব রেকর্ড করব। সেই চিন্তা থেকেই মাথায় আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআন হাতে লেখার বুদ্ধি। ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারি কোরান শরীফ হাতে লেখা শুরু করে চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর শেষ করি।

তিনি আরও বলেন, এ কুরআন শরিফের দৈর্ঘ্য ৩৩৫ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ২৬৪ সেন্টিমিটার, ওজন ৪০৫ কিলোমিটার। দীর্ঘ ৬ বছর ৮ মাস ২৩ দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৪২ পাতার কুরআন শরীফ হাতে লিখেছি। লাল, নীল, সবুজ ও কালো রঙের চারটি কলাম শোভা বাড়িয়েছে ঐশী বাণীর। এতে ৩৪০৮টি আর্ট পেপার ও ৬৬০টি কলম ব্যবহার করেছি। এছাড়া এক পাতা লেখা হলেও অন্যপাতা ফাঁকা রাখা হয়েছে। মার্জিন জিডাইনে আল্লাহর নাম লেখা হয়েছে। সেখানে সর্বমোট ৩ লাখ ৫০ হাজার বার আল্লাহর নাম লেখা হয়েছে।

ইউটিউব দেখে তিনি এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা নিয়েছেন বলে জানান। ৬টি কুরআন শরীফ দেখে তিনি এটি লিখেছেন। এটি লেখার পর তিনজন হাফেজ এবং একজন মাওলানা দিয়ে পুরো কুরআন শরীফ পড়ানো হয়েছে। তারা বলেছেন কোনো সমস্যা নেই।

হাতে লেখা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুরআন শরীফ কিভাবে দাবি করছেন এমন, এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, দুবাই এক্সপোতে ২০২০ বড় একটি কুরআন শরীফ প্রদর্শীত হয়েছিলো। সেটার দৈর্ঘ ছিলো ২৫৯ সেন্টিমিটার (৮. ৫ ফুট) ও প্রস্থ ছিল ১৯৮ সেন্টিমিটার (৬.৫ ফুট) এবং আমার লেখা ১৪২টি পাতা কুরআনের ৩৩৫ সেন্টিমিটার (১০ ফুট) দৈর্ঘ্য ও ২৬৪ সেন্টিমিটার (৮ ফুট) প্রস্থ। সে কারণেই এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাতে লেখা কুরআন শরীফ বলে দাবি করছি।

তিনি আরও বলেন, মসজিদে কুবায় দুদিনের প্রদর্শনীতে যেভাবে মানুষের সাড়া পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।

মানবসেবার জন্য হাসপাতাল তৈরিতে তিনি প্রায় সাত বছর আগে ইউটিউব দেখে এ উদ্যোগ নিয়েছি। বিশ্বের কোনো সহৃদয়বান আমার এ কুরান শরীফ সংগ্রহ করলে সেই অর্থ দিয়ে হাসপাতাল তৈরি করব। খুলনার টুটপাড়া থেকে পরিবারসহ হাতে লেখা কুরআন শরীফ দেখতে আসেন আবু রায়হান নামে একজন।

তিনি বলেন, আমি এক মাধ্যমে জানতে পেরে এই কুরআন শরীফ দেখতে আসলাম। আল্লাহ পাকের কালাম মহাগ্রন্থ আল কোরআন কাছ থেকে দেখে খুবই ভালো লাগছে। যতটুকু জেনেছি, হাতে লেখা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুরআন শরীফ।

মসজিদে কুবার ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, হাবিবুর রহমানের হাতে লেখা কুরআন শরিফ কয়েক পারা পড়ে নির্ভুল পেয়েছি। আমাদের মসজিদের প্রদর্শনীর প্রথমদিনে কয়েক হাজার নারী-পুরষ এটি দেখেছেন। এটি দেখে সবাই অভিভূত। ৩০ পারার ঝকঝকে হরফে লেখা ১১৪টি সূরার এই কোরআন দেখে বোঝার উপায় নেই এটি ছাপা নাকি হাতে লেখা। হাবিবুর রহমান যে উদ্দেশ্য নিয়ে লিখেছেন, তার উদ্দেশ্যে পূরণ হোক, এই দোয়া করি। বিশ্বের কোনো সংস্থা এটিকে তাদের সংগ্রহে রাখুক এই প্রত্যাশা করি। দুদিনে কয়েক হাজার মানুষ এটি পরিদর্শন করেছে।

সাবেক ফিফার রেফারি ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত তৈয়ব হাসান সামছুজ্জামান বাবু বলেন, সাতক্ষীরার হাবিবুর রহমানের হাতে লেখা কুরআন শরিফটি শনিবার সকাল থেকে মাসজিদে কুবায় প্রদর্শনী শুরু হয়। দুদিনে নারী-পুরুষসহ কয়েক হাজার মানুষ এটি দেখতে এসেছেন। বিশেষ করে নারীরা এটি দেখতে আসছেন। নারীদের জন্য আলাদা করে পর্দার মধ্যে থেকে দেখানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, হাবিবুর রহমানের হাতে লেখা কুরআন শরীফ বিশ্বের সবচেয়ে বড় কিনা সেটা বলা না গেলেও, এটি অনেক বড় কুরআন শরিফ সেটাতো বলা যায়। এটি আসলেও বিশ্বের বড় কুরআন কিনা ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সেটা পরীক্ষা-নিরক্ষা করা হবে। এটি করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সাহায্য করা হবে। পরে হাবিবুর রহমানকে মসজিদে কুবার পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।

এর আগে ১৭ ডিসেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা শহরতলীর মেহেদীবাগের ‘মসজিদে কুবায়’ এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ