ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কক্সবাজার পর্যটনে হতাশা

প্রকাশনার সময়: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৪১ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৪৯

কক্সবাজারের পর্যটনে চরম হতাশা বিরাজ করছে। পর্যটনে চলমান ভরা মৌসুমের এ সময়ে বালিয়াড়ি ও আশপাশের পর্যটন স্পটগুলো লোকারণ্য হয়ে থাকার কথা থাকলেও শূন্যতা সর্বত্র। হাতে গোনা কিছু পর্যটকের উপস্থিতি আশানুরূপ ব্যবসা হচ্ছে না। ফলে লগ্নি ফিরে আসা নিয়ে চরম দুঃচিন্তায় রয়েছেন পর্যটনের ব্যবসায়ীরা। সেন্টমার্টিন ভ্রমণ সংকুচিত হওয়াসহ নানা কারণে এবার কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম কমছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার নয়া শতাব্দীকে বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ সময় হতেই কাগজে-কলমে পর্যটন মৌসুম। নভেম্বরের শেষ আর ডিসেম্বরের শুরুতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে ভ্রমণপিপাসু পরিবারগুলো কক্সবাজারে আসেন-সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যান। কর্পোরেট অফিসগুলোর অনেকে বার্ষিক কনফারেন্সগুলো কক্সবাজারেই করেন। এখন মৌসুমের মাঝামাঝি সময় চললেও পর্যটক খরা চলছে বলা যায়। বিগত সময়ে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পর্যটকে টইটম্বুর হতো কক্সবাজার। অনেক পর্যটক হোটেলে রুম না পেয়ে সড়কের কিনারে, বালিয়াড়ি, গাড়িতে রাত কাটানোর চিত্রও অতীতে সবাই দেখেছে- কিন্তু শুক্রবার বিজয় দিবস এবং শনিবার সপ্তাহিক ছুটি থাকলেও হাতে-গোনা পর্যটকই এবার কক্সবাজারে এসেছে। ১৫-২০ পার্সেন্ট রুমই বুকিং ছিলো এবার। আমরা চরমভাবে হতাশ। পর্যটক সেবাই প্রস্তুতি থাকলেও বালিয়াড়িসহ কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো অনেকটা নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। এতে ধার-দেনায় লগ্নিকরা ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন সময় পার করছেন।

হোটেল-মোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার রিয়াদ ইফতেখার নয়া শতাব্দীকে বলেন, সপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে সৈকতের বালিয়াড়িতে লোকজনের ভীড় বাড়ে। এবার ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং সপ্তাহিক ছুটি একইদিন পড়েছে। এতেও আগের মতোই লোকসমাগম হয়েছে। বালিয়াড়িতে ভীড় বাড়লেও সকলেই পর্যটক নন। এখানে সৈকত দর্শণার্থীর সংখ্যা বেশি, যারা কক্সবাজার শহর কিংবা আশপাশের এলাকা হতে আসেন আর সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে যান। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ও কক্সবাজারের স্থল উপজেলার লোকজন কক্সবাজারে দিনে এসে দিনেই ফিরে যান।

ট্যুরস অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম নয়া শতাব্দীকে বলেন, কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটকদের ৭০ শতাংশ সেন্টমার্টিনের নৈঃস্বর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে যান। সেই হিসেবে গত কয়েক দশক ধরে প্রবালদ্বীপকে ঘিরেই কক্সবাজারের পর্যটন। কিন্তু চলতি মৌসুমে অদৃশ্য কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেটা জেনেই কক্সবাজারে পর্যটক আসা কমেছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল শুরু না হলে মৌসুমের বাকি সময়ও একইভাবে মন্দা যাবে- এতে সন্দেহ নেই।

সুগন্ধা ঝিনুক মার্কেট সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম নয়া শতাব্দীকে বলেন, অনেক গণমাধ্যম আমাদের পর্যটনকে ধ্বংসের দ্বারপান্তে নিয়ে যাচ্ছে। সৈকতের বালিয়াড়িতে লোক উপস্থিতি দেখলেই প্রতিবেদন করে ‌'পর্যটকে ভরপুর কক্সবাজার'। কিন্তু কারা পর্যটক এবং কারা দর্শণার্থী এটা পৃথক করার সক্ষমতা অনেকেই রাখেন না। ভিডিও প্রতিবেদন যারা করেন, তারা পুরো সৈকতে যেখানে কয়েকজন জটলা করেন তাদের ধারণ করেন, খালি অংশটা এড়িয়ে যান। সেটা প্রচার হলে সারা দেশ এবং পৃথিবীবাসী ও সরকার ভুল ম্যাসেজ পান। এছাড়া কোথাও 'পান থেকে চুন খসলে' ভেতরের খবর বের করার আগে নেগেটিভ প্রচারণা করেন। এসবই কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করছে। আমরা যারা পর্যটনকে উপলক্ষ করে ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় লগ্নি করেছি তাদের সর্বস্ব হারানোর উপক্রম হয়েছে।

সী-ক্রোজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ নয়া শতাব্দীকে বলেন, প্রতিবছর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে ১০টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করে। কিন্তু এবার কক্সবাজার থেকে কর্ণফুলি জাহাজটি ছাড়া টেকনাফ থেকে কোনো জাহাজ চলাচল করছে না। কর্ণফুলি জাহাজে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ব্যয়বহুল। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পর্যটকরা এটাতে ভ্রমণ করতে পারেন না। এছাড়া কর্ণফূলী জাহাজের ধারণ ক্ষমতাও কম। তাই মধ্য ও নিম্নবিত্ত পর্যটকের কক্সবাজার ভ্রমণে আসা বিগত সময়ের চেয়ে কমেছে। টেকনাফে বর্তমান ঘাট থেকে সমস্য হলে সাবরাংয়ের জেটি দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু করা যায়। এখান হতে জাহাজগুলো সেন্টমার্টিন ঘাটে পৌঁছানো অধিকতর সহজ- ভাড়াও বাড়বে না সময়ও কম লাগবে।

সেন্টমার্টির দ্বীপের আবাসন ব্যবসায়ী মো. দিদারুল আলম নয়া শতাব্দীকে বলেন, সেন্টমার্টিনের প্রায় ১০ হাজার মানুষের ৯০ শতাংশই পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত। বাকি ১০ শতাংশ মানুষের রুটিরুজি নির্ভর করে সাগরে মাছ ধরায় ৷ আর পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত ৯০ শতাংশ মানুষের আয় হয় মাত্র ৪ মাস। বাকি সময়গুলো ৪ মাসের আয় দিয়ে অতিবাহিত করে। কিন্তু ভরা মৌসুমেও দ্বীপে আশানুরূপ পর্যটক যেতে না পারায় আমাদের লগ্নি উঠে আসবে বলে মনে হয় না। আয় বন্ধ থাকায় ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে আমাদের। দ্বীপের অধিকাংশ হোটেল ভাড়ায় নেয়া- তারাও আমার মতো অবস্থা পার করছে। তাই বাকি সময়ের জন্য হলেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হোটেল ও ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু নয়া শতাব্দীকে বলেন, সারা বছরই কক্সবাজারে পর্যটন জমানো সম্ভব। কিন্তু সেভাবে সুযোগ-সুবিধা গড়ে না ওঠায় পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে আবাসন ও খাবার প্রতিষ্ঠান এবং অন্য ব্যবসাগুলো সাজিয়ে প্রস্তুত করা হয়।

অর্ধসহস্রাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজ ভরমৌসুমেও পর্যটক না পেয়ে হতাশায় ভূগছেন। আমাদের শতকোটি টাকা ঋণ চলমান, ব্যবসা না পেলে ঋণের কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খেতে হয়। কমবেশি সবাই এ সমস্যায় পতিত হন। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরণের লোকসানের শঙ্কা রয়েেছে।

কক্সবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহম্মদ শাহীন ইমরান নয়া শতাব্দীকে বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। এর প্রসারে সরকার করণীয় সবকিছুই করছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ নাব্যতা সংকট জনিত কারণে। বিকল্প প্রস্তাবণা নিয়ে আমরা উর্ধতন মহলে লিখেছি। এখানে নৌ-মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা আছে। আমাদের পাঠানো চিঠির বিষয়ে নির্দেশনা এলে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ