ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেন পড়বেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে?

প্রকাশনার সময়: ২৭ জুন ২০২৩, ১৮:৫০

ভাষাহীনদের ভাষা দিবে কে? সমাজের এমন অসংখ্য বিচ্ছিন্ন, বিপন্ন, ছিন্নমূল, অসহায় মানুষেরা রয়েছে, যাদের কোনো ভাষা নেই, কে তাদের হয়ে কথা বলবে? একটি অসহায় জীবনকে বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরবে? কার একটি লেখা, একটি প্রতিবেদন বিপর্যস্ত জনজীবনে নিয়ে আসবে স্বস্তি?

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে যারা প্রথম জীবনে বড় বড় কোম্পানির মালিক কিংবা অনেক বড় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন অথচ শেষ জীবনে তারা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং কারাবন্দীও হয়েছেন। এর কারণ কী? কারণ সবাই আসলে নিজের জন্য ভোগ বিলাসের জীবন চায় না, অনেকে তার সেল্ফ অ্যাক্চুয়ালাইজেশনের খোঁজ করে, পৃথিবীতে কিছু অবদান রেখে যেতে চায়, শোষক দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করে একটি শান্তির সমাজ চায়, রাষ্ট্র যন্ত্র ঠিক পথে চলুক এমনটা চায় আর সেই জবাবদিহিতার জায়গাটুকু তৈরি করার জন্যই তারা সাংবাদিকতায় আসে।

ঢাবিতে গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

বাংলাদেশে সাংবাদিকতার প্রথম পাঠশালা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আজকে পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটি অসংখ্য মেধাবী ছাত্র ও সুদক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করেছে যারা দেশ এবং দেশের বাইরে খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো সাহসের সাথে পালন করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগ অসংখ্য সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, গবেষক তৈরি করেছে এবং করে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা সকলের আগ্রহের প্রথম সারিতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এলিট সাবজেক্ট হিসেবে পরিচিত। ক্যাম্পাস জীবনে অন্য যেকোনো সাবজেক্ট থেকে এই সাবজেক্ট শিক্ষার্থীদের কিছু অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা দিবে।

কেন পড়বেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে?

বলে রাখা ভালো, এই বিভাগ শুধু সাংবাদিকতা শিক্ষা দেয় না, গণযোগাযোগ নিয়ে এখানে বিস্তর আলোচনা করা হয়। সফলভাবে যোগাযোগ করতে পারার ব্যাপারটা পৃথিবীর সকল পেশা ও বৃত্তিতে সফল হওয়ার একটি প্রধান পূর্বশর্ত। আমরা প্রতিনিয়ত যে নিজের মনের সাথে নিজেই কথা বলি সেইধরনের যোগাযোগ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ, আবার, একইসাথে গণমাধ্যম তথা মিডিয়ার কলাকৌশলসহ সকল প্রকার যোগাযোগের ধারণা দেয়ার পাশাপাশি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে একটি চ্যালেঞ্জিং এবং গুরুত্বপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতার খুঁটিনাটি শেখানো এবং শিক্ষার্থীদের ক্রিটিকাল থিংকিং করতে উদ্বুদ্ধ করাই গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উদ্দেশ্য।

সামাজিক বিজ্ঞান (Social Science) অনুষদভুক্ত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়টি আপনাকে প্রবেশ করাবে জ্ঞানের সমুদ্রের মতো বিশাল একটি পরিসরে।

কী কী পড়ানো হয়?

যোগাযোগ বা কমিউনিকেশনের বিভিন্ন ধারণা, মিডিয়া, মিডিয়ার বিভিন্ন কলাকৌশল, সাংবাদিকতার ক্রিয়াকৌশল এবং খুঁটিনাটি। যেহেতু একজন সাংবাদিককে জ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখার মৌলিক ধারণা রাখতেই হয়, তাই, বাংলাদেশ ও বিশ্বের ইতিহাস, কম্পিউটার বিজ্ঞান, অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিসংখ্যান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব রাজনীতি, সাইকোলজি, সমাজবিজ্ঞান, আইন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ভাষা ও সাহিত্যের মৌলিক জ্ঞান (বাংলা ও ইংরেজি), পাবলিক স্পিকিং, ভিডিও এডিটিং এবং ব্রডকাস্টিং জার্নালিজমসহ প্রায় সকল বিষয়েরই Essence (সারাংশ) সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয় এই বিভাগে।

পড়াশোনার ধরণ:

সেমিস্টার সিস্টেম। বছরে দুইটি করে চার বছরে মোট ৮টি সেমিস্টার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে সেশনজট না থাকায় সময়মতোই পরীক্ষা নেয়া হয় এবং ফল প্রকাশ করা হয়।

চান্স পাওয়ার ক্রাইটেরিয়া:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলারে সাবজেক্টভিত্তিক রিকোয়ার্মেন্ট জানিয়ে দেয়। নম্বরভিত্তিক শর্ত পূরণ করতে পারলে এবং মেরিট লিস্টে সাধারণত প্রথম ৫০০ জনের মধ্যে থাকলে (সমসাময়িক পরিসংখ্যান হিসেবে) এই বিভাগে ভর্তি হওয়া যায়।

চাকরির বাজার কেমন?

প্রথম কথা হলো পৃথিবীর কোনো দেশেই সাংবাদিক হতে হলে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়তে হয় না। যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থীই সাংবাদিকতা করতে পারেন। তবে, বাস্তবতা হলো এই যে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পড়ে গেলে আপনি অনেক দিক দিয়েই অন্যদের চাইতে নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবেন। আর যারা সাংবাদিক হতে চান না,তারা কি এখানে পড়বেন না?

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মূল লক্ষ্য এটা নয় যে আপনি শুধু সাংবাদিকতা পেশাতেই যাবেন। সাংবাদিকতা ছাড়াও শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার যোগাযোগ, গণযোগাযোগ বা জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তা এবং সর্বোপরি একজন দক্ষ ও চৌকস প্রফেশনাল তৈরি করাও এই বিভাগের অন্যতম উদ্দেশ্য।

এই ডিসিপ্লিনে পড়ার পর আপনার যে যে ক্যারিয়ারের সুযোগ হতে পারেঃ

সাংবাদিকতাঃ রিপোর্টার, ইডিটর, সংবাদ পাঠক,উপস্থাপক,মিডিয়া অ্যাডভাইজার ইত্যাদি।

পাবলিক রিলেশনস : জনসংযোগ কর্মকর্তা,কমিউনিকেশন অফিসার,মিডিয়া প্ল্যানার, পাবলিসিটি ম্যানেজার, স্পেশাল ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর, নিউজ রাইটার।

শিক্ষকতা : দেশের অনেক পাবলিক, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে জার্নালিজম বিষয়টি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার ভালো সুযোগ আছে। বিসিএসে এখন পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডার না থাকায় আপনি এখান থেকে কলেজের শিক্ষক হতে পারবেন না। তবে,স্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ থাকবে।

বিসিএস, ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি:

যদিও এই বিভাগের জন্য বিসিএসে কোনো আলাদা কোটা নেই,যোগাযোগে দক্ষতা অর্জন করতে পারায় এবং মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট হওয়ায় এই বিভাগ থেকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস,বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারি ব্যাংকগুলোয় অনেকেই সুযোগ করে নিচ্ছেন।

বিদেশি গণমাধ্যম গুলোতেও রয়েছে ব্যাপক চাকরির সুযোগ। নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারলে খুব সহজেই বিবিসি, সিএনএন, ডয়চে ভেলে এবং অন্যান্য জায়গায় সম্ভাবনা থাকবে।

জার্নালিজমের শিক্ষার্থীদের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে ক্যাম্পাস জার্নালিস্ট হিসেবে এবং পত্রিকা অফিস কিংবা মিডিয়া হাউজে সংবাদকর্মী হিসেবে ছাত্রাবস্থাতেই কাজ পাওয়া যায় অনেক। বেতন কম হলেও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ থাকে শিক্ষার্থীদের জন্যে। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে সে জায়গায় কাজের সুযোগও পেতে পারে।

এছাড়াও ফটোগ্রাফি, ফিল্ম মেকিং, ভিডিও এডিটিং, ফিল্ম রিডিং প্রভৃতি বিষয়ের উপর বাধ্যতামূলক কোর্স থাকায় প্রফেশনাল জীবনে অনেকেই নাটক, সিনেমা নির্মাণ এবং পরিচালনাকে বেছে নিতে পারেন।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ কেমন?

যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডায় এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকবে বেশি। তাছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশেও স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। সেজন্যে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা এবং অন্যান্য গুনাবলি থাকা খুব জরুরি।

কেন পড়বেন না এই বিভাগে?

যেকোনো বিভাগ চয়েস করার প্রথম শর্ত হচ্ছে সে বিষয়ে প্রতি আগ্রহ থাকা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একটি বিশেষ দিক হলো এই বিভাগে নিজের ইচ্ছে বা আগ্রহ থেকে না আসলে আপনার মানিয়ে নিতে অসুবিধা হবে। র‍্যান্ডমলি কিংবা অন্যের কথায় এই বিভাগে আসলে আপনার পরবর্তীসময়ে অসুবিধা হতে পারে। পড়াশোনা বোরিং মনে হতে পারে। অনেক ডাইনামিক এবং মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট হওয়ায় পড়াশোনার চাপ বেশি মনে হতে পারে অনেক সময়। প্রেজেন্টেশন এবং অ্যাসাইনমেন্টের চাপ থাকবে নিয়মিত। পড়াশোনা না করে ভালো ফলাফল করা কঠিন হয়ে যাবে। সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় এই বিভাগের সিজি কম থাকে এবং যথাযথ মানদণ্ডের মধ্য দিয়েই উত্তরপত্র মূল্যয়ন করা হয়।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইসমাইল জাবিউল্লাহ নাহিদ মনে করেন, ক্যারিয়ারের দিক দিয়ে সাংবাদিকতার রয়েছে একটা বিস্তৃত জগৎ।সাংবাদিকতা তো আছেই এর বাইরে কর্পোরেট সেক্টর,এনজিও, এ্যাম্বাসিতেও কমিউনিকেশন সেক্টর রয়েছে কর্মবাজার। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম, ক্রাইম রিপোর্ট, ফিচার রাইটিং, স্পোর্টস জার্নালিজম, পলিটিক্যাল বিট, ইকোনমিক বিট, বিসনেস বিট, বিনোদন বিট, এর বাইরে স্বাধীন পেশা বেছে নিতে চাইলে ফিল্ম মেকিং, অ্যাড ফার্ম, ইনডিপেনডেন্ট জার্নালিজম ও আছে।

একই বিভাগের অন্য আরেক শিক্ষার্থী রিদওয়ান মনে করেন, ডিপার্টমেন্টে সিনিয়র-জুনিয়র ইন্টারেকশন আমার কাছে অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের তুলনায় বেশি মনে হয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ,অনলাইন পোর্টালে সরাসরি কাজের সুযোগ পাওয়া যায় শুরু থেকেই। কমিউনিকেশন স্কিল ভালো থাকলে পত্রিকা এবং টেলিভিশনেও কাজ করার সুযোগ থাকে। এইদিকটা ভালো লেগেছে। ডিপার্টমেন্টে স্টুডেন্ট সংখ্যা কম থাকায় টিচারদের সাথে স্টুডেন্টদের কনসাল্টেশনের সুযোগ বেশি থাকে, সম্পর্ক ভালো রাখার সুযোগ থাকে, টিচারদের গাইডলাইন পাওয়া যায় একাডেমিক-নন একাডেমিক নানান বিষয়ে। কোয়ালিটিফুল টিচার থাকায় আমার কাছে নিজেকে সৌভাগ্যবানই মনে হয়েছে সব মিলিয়ে।

শিক্ষার্থী: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ