সনডা রাইমস। মার্কিন লেখক, পরিচালক, টিভি প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার। এমি ও গোল্ডেন গ্লোব জয় করা চিকিৎসা বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট মার্কিন টিভি নাটক ‘গ্রেস অ্যানাটমি’র রচয়িতা ও পরিচালক হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত। নিজের আলমা মাটার ডর্টমাউথ কলেজে ২০১৪ সালে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন তিনি।
এ বক্তব্য থেকে তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু শেখার আছে। তাই পুরনো কথাগুলো আবার মনে করিয়ে দিতে নতুন করে দেয়া হলো।
এটা অদ্ভুত যে, আমি ডর্টমাউথে বক্তৃতা দিতে এসেছি। আমি একজন লেখক, বক্তৃতা দেয়া আমার কাজ নয়। উপরন্তু আমি এতে অভ্যস্তও নই এবং বলা বাহুল্য, উপযুক্তও নই। ডর্টমাউথের প্রেসিডেন্ট আমাকে ছয় মাস আগে এই বক্তৃতা করার কথা জানিয়েছেন। আমার জীবনে এই ছয় মাস কেটেছে একইসঙ্গে উত্তেজনা আর আতঙ্কে। সত্যি বলছি, আমার গলা শুকিয়ে আসছে, হার্টবিট দ্রুত হচ্ছে। কিন্তু তারপরও আমি এখানে এসেছি এবং বক্তৃতা করছি! কেন জান? কারণ আমি ‘চ্যালেঞ্জ’ পছন্দ করি। আরো একটি কারণ আছে, তা হলো এ বছর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি সেই কাজগুলো করব যেগুলো আমি ভয় পাই।
আমি তোমাদের বাবা-মায়ের কথা বলতে চাই। তোমার ওই খানটায় বসার প্রায় ২০ বছর পর আজ আমি মা, তিন সন্তানের জননী। তাই আমি কিছু বিষয় জানি, একদম ভিন্ন কিছু বিষয় যা তোমরা জান না। তুমি ভাবছ, আজকের দিনটা শুধুই তোমার। কিন্তু না, আসলে এই দিনটা তোমার বাবা-মারও। কীভাবে তোমাদের বাবা ও মার এই কথার অর্থ এই মুহূর্তে তোমাদের বুঝার কথা নয়।
এখানে যারা বক্তৃতা দিতে আসে তারা বিভিন্ন স্বপ্নের কথা বলে। তারা বলে, তুমি তোমার স্বপ্নকে অনুসরণ করো, তোমার ভেতরের কথা শোনো, পৃথিবীটা বদলে দাও...আরো কত কী! আমি এসব কথাকে খুব একটা গুরুত্ব দেই না। আমি বলি, নড়ে ওঠো, কাজটা এক্ষুনি শুরু করে দাও।
নিখুঁত কিংবা নির্ভুল বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। যা নিখুঁত তা বিরক্তিকর, ক্লান্তিকর। স্বপ্ন বলেও পৃথিবীতে কিছু নেই। কারণ স্বপ্নটা তখনই স্বপ্ন যখন সেটা বাস্তবে রূপ নেয়, তার আগে নয়। তাই কাজটাই মূলকথা। তুমি চিন্তা করেছ যে, তুমি ভ্রমণ করবে। ওকে, এখনই উঠে যাও, তোমার পুরনো হয়ে যাওয়া গাড়িটা বিক্রি করে ব্যাংককের টিকিট কিনে বেরিয়ে পড়। আমি সিরিয়াস!
তুমি লেখক হতে চাও, এখন লিখতে শুরু কর। চাকরি নিতে চাইলে এখনই একটা নিয়ে নাও। নিখুঁত কিংবা পারফেক্ট কিছু পেলে ভালো কিন্তু না পেলে বসে থেক না, যে কোনো একটা চাকরি নিয়ে নাও। জাদুকরী কোনো সুযোগের জন্য অপেক্ষা করো না। তুমি কিন্তু প্রিন্স উইলিয়াম নও! সুতরাং কাজ করে যাও ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না আরো ভালো কোনো কাজ পাচ্ছ।
জীবনে যা করবে, তাই ফেরত পাবে। যতটুকু করবে ততটুকুই ফেরত পাবে। যারা বসে থেকে পারফেকশন খোঁজে তারা এগুতে পারে না। কাজটা শুরু করার আগে ‘আমি বোধ হয় পারব না’ এমনটা ভেবো না। তোমার চেষ্টাটা তুমি অব্যাহত রাখো। যদি ভুল হয় তাহলে কাজের সঙ্গে ভুলটাও থাকুক, অস্থির হওয়ার কিছু নেই। বিখ্যাত মনীষী রালফ ওয়ালডো এমারসন বলেছেন, ‘জীবন হলো অনেকগুলো শিক্ষণীয় বিষয়ের সমন্বয়, যে বিষয়গুলো জানতে পুরো জীবন পার করতে হবে।’
সকাল থেকে সন্ধ্যা এই পুরো সময়টাই আমি ব্যস্ত থাকি। অনেকেই আমাকে বলে, আপনি বেশ পরিশ্রম করতে পারেন। আমি বলি, পরিশ্রম কোথায়? আমি তো আনন্দ করছি। পরিশ্রম মনে করলে আমি টানা কাজ করতে পারতাম না। তাই প্রচুর পরিশ্রম করো, তবে অবশ্যই সেটাকে আনন্দে পরিবর্তিত করতে হবে।
জীবনটাকে নিতে হবে হালকাভাবে। জীবনের বাঁকে বাঁকে যত ঘটনা দুর্ঘটনা সব কিছুকে সহজভাবে মেনে নেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। এই ক্ষমতা না থাকলে অনেক ঘটনাই জীবনকে থামিয়ে দিতে উদ্যত হবে। এই গুণটা অর্জন করে কেউ যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যায় তাহলে সেই ব্যক্তির থেমে থাকার আর কোনো কারণ দেখি না।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ