অবশেষে ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে গণসমাবেশের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলো বিএনপি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে না এই সমাবেশ। বিকল্প হিসেবে তৃতীয় স্থানে হবে এ কর্মসূচি। বিএনপি ও পুলিশের পক্ষ থেকে কমলাপুর স্টেডিয়াম অথবা বাঙলা কলেজ মাঠ প্রস্তাব করা হয়েছে। দুটি মাঠ পরিদর্শন শেষে বিএনপি তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। সেই মতে পুলিশও বিকল্প স্থানের অনুমতি দিতে পারে। তবে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশ করার পক্ষে বিএনপি। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এ স্থানের দূরত্বও বেশি নয়।
এদিকে গণসমাবেশের অনুমতি, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, গ্রেফতারসহ সার্বিক বিষয়ে অবহিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) এ বৈঠক হয়। সন্ধ্যা সাতটায় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠকে করেন তারা। দুই ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় বিএনপির প্রতিনিধি দল।
বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, নয়াপল্টনের বিকল্প হিসেবে রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়াম ও বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া আরামবাগ ও সেন্ট্রাল রোডসহ কয়েকটি জায়গার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো তারা আমলে নেয়নি।
তিনি আরো বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপির গণসমাবেশ হচ্ছে না। তেমনিভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও আমরা যাব না।
পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির প্রতিনিধির সঙ্গে ডিএমপি কমিশনারের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির সমাবেশস্থল নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব শুক্রবার কেটে যাবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, কমলাপুর স্টেডিয়ামে কার্পেটসহ কোনো কিছুর ক্ষতি হলে তা দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া হবে। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কমলাপুর স্টেডিয়াম ক্রীড়া পরিষদের অধীনে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বৈঠক চলাকালেই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও ক্রীড়া সচিবকে ফোন করা হয়। বৈঠক শেষে বিএনপি প্রতিনিধি দল স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় যান। সেখানে তারা লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে বিকল্প স্থানের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।
বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের রাজধানীতে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। ঢাকায় আসতে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। শহরে প্রত্যেকটি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। তল্লাশি করে কাউকে সন্দেহ হলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশি তল্লাশি এড়িয়ে কৌশলে ঢাকায় ঢুকছেন অনেকে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তারা ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ করবেই। এতে পুলিশ বাধা দেবে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও ওইদিন মাঠে থাকবে এমনটা ধরে নিয়েই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সেভাবেই মাঠে থাকবে। সমাবেশস্থলে যেতে বাধা দিলে নেতাকর্মীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাধার ভয়ে তারা ঘরে বসে থাকবে না।
শনিবার ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশে বাধা দেওয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশে বিক্ষোভ করা হবে বলেও জানান ওই নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক এডিসি নয়া শতাব্দীকে বলেন, যতটুকু জেনেছি বাঙলা কলেজের মাঠে হবে না। তারা ওখানেই করবে।
পল্লবী জোনের এডিসি নাজমুল নয়া শতাব্দীকে বলেন, বিএনপিকে দুইটি মাঠের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে বাঙলা কলেজ মাঠ একটি। এখানে তারা আসবে এবং আমাদের পুলিশের সিনিয়র স্যাররা আসবেন। সেখানে আমরা এখানে অবস্থান করছি। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে বিভাগীয় গণসমাবেশ। বিকল্প গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব পেলে বিবেচনা করা হবে। তবে সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে, নয়াপল্টনের সড়কে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না। কেউ সেখানে জড়ো হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর আমরা সেখানে যাব। এরপর জনগণই ঠিক করবে কী হবে। অপেক্ষা করুন ঢাকায় যা হবে তা আপনারা নিজেরা স্বচক্ষে দেখবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা সমাবেশ করবই। ১০ ডিসেম্বর আমাদের বিভাগীয় সমাবেশের শেষ কর্মসূচি।
এখান থেকে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তারা যুগপৎভাবে এই আন্দোলনে থাকবে।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ