ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর)। সম্মেলন ঘিরে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংগঠনটি। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকালে সাড়ে ১০টায় এই সম্মেলন শুরু হবে।
সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমরা সম্মেলনের সর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের আবেদনপত্র নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নতুন কমিটি হবে।
জানা যায়, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে সদস্যদের বয়সসীমা রয়েছে অনূর্ধ্ব-২৭ বছর। কিন্তু নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় গত তিনবার বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব-২৯ বছর করা হয়। ইতিমধ্যে সভাপতি হিসাবে আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে লেখক ভট্টাচার্য দুই বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন করছেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বয়সের ব্যাপারটি অনানুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি অন্য নেতাদের জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বয়সের ব্যাপারে তার আলোচনা হয়েছে। এবারও বয়সসীমা হবে ২৯ বছর। এটা বাড়ানো হবে না।
অন্যদিকে আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। তিনিও বয়সসীমা ও ছাত্রত্বের ব্যাপারে খোঁজ নেন। এ সময় তিনি গত সম্মেলনে ২৯ হওয়া বয়সসীমার প্রতি সমর্থন জানান।
বয়সসীমার এ ব্যাপারটি স্পষ্ট হওয়ায় এবার নেতৃত্বের দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন প্রায় এক ডজন পদপ্রত্যাশী। এদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অনেকেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রত্যক্ষভাবে মাঠে ছিলেন।
এমন প্রার্থীদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন। তিনি এর আগে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং তার আগে একই হলের কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
বরিশাল অঞ্চল থেকে আছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক সবুর খান কলিন্স ও উপগণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক সোলাইমান ইসলাম মুন্না। সবুর খান কলিন্স সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও ফজলুল হক মুসলিম হলের নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর সোলাইমান ইসলাম মুন্না ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাধারণ সম্পাদক, জহুরুল হক হলের দপ্তর সম্পাদক এবং তার আগে বরিশাল মহানগরের ১০নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পারিবারিকভাবেই তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এছাড়া এই অঞ্চলের আরেক প্রার্থী শেখ ইনান বর্তমান ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনিও সংগঠনটির শীর্ষ পদে লড়ছেন।
মাদারীপুর অঞ্চল-ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জামি উস সানি ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের সভাপতি শহিদুল হক শিশির। জামি উস সানি এর আগে বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। যদিও আবরার হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে, শিশির হল সংসদের সাবেক ভিপি এবং হলের সাবেক ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। উভয়ের পরিবারই পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
খুলনা অঞ্চল-কেন্দ্রীয় মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, যিনি সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। এছাড়া একই অঞ্চলের রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আহসান হাবিব।
এছাড়া ময়মনসিংহ থেকে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয়। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। একই অঞ্চলের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক রাকিব সিরাজীও শীর্ষ পদের আলোচনায় রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলোচনায় রয়েছেন আল আমিন শেখ। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এর বাইরে আরও আছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তিলত্তমা শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রনক জাহান রাইন। পারিবারিকভাবেও তারা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে আঞ্চলিকতার প্রাধান্য থাকেই। সেক্ষেত্রে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গের প্রার্থীদের প্রাধান্য এবারও থাকতে পারে। গত কয়েকটি কমিটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই অঞ্চলের প্রার্থীরাই এগিয়ে থাকেন।
বয়স জালিয়াতদের খোঁজে গোয়েন্দারা: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন বয়সসীমার বাইরে থাকা একাধিক প্রার্থী। যারা আগেই সংগঠনটির শীর্ষ পদের জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।
ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, তাদের মধ্যে তিনজন প্রার্থীর বয়স সার্টিফিকেট অনুযায়ী ৩০ বছর হওয়ায় তারা বয়স জালিয়াতি করেছেন। এই তিনজনের ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বয়স জালিয়াতির বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। যারা এটি করবে, তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সের ব্যাপারে গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। বিভিন্ন কারণে সেটি বাড়ানো হয়ে থাকে। গত কয়েকটি সম্মেলনে বয়স ২৯ বছর করা হয়েছে। এছাড়াও প্রার্থীর একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, বিতর্কমুক্ত কি না-এসব ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।
এদিকে মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন উপলক্ষে সড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সে কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকাসমূহে রাস্তা বন্ধ/রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ