আন্তর্জাতিক চাপেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশ ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নমনীয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, আজকে আমাদের গণসমাবেশ ঠেকাতে সরকার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কিন্তু দেশের জনগণ বার্তা দিয়েছে, এই সরকারকে তারা আর দেখতে চায় না। ইনশাআল্লাহ গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে। জনগণ গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে প্রস্তুত। ১০ ডিসেম্বর সরকার পতনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ ডা. মিলন দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। ‘শহীদ ডা. মিলন-গণতন্ত্রের মুক্তি এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং ডা. মেহেদী হাসান ও ডা. মো. ফখরুজ্জামান ফখরুলের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ড্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শাহিদুর রহমান, সহসভাপতি ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. পরিমল চন্দ্র মল্লিক, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি বিলকিস জাহান চৌধুরী প্রমুখ।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো সরকারের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে যারা গুরুত্ব দেয় তারা আর চুপ থাকতে পারছে না। জাপান থেকে প্রধানমন্ত্রীর সফর বাতিল করা হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিন্ন কথা বলছেন।
তিনি বলেন, ডা. মিলন শহীদ হয়েছেন কেনো? তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেসময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সারাদেশে আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। সেসময় এরশাদের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন মিলন। তার শাহাদাতের মধ্য দিয়েই আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ নেয়। মিলনসহ আরও ছাত্র ও শ্রমিক নেতার জীবন দেওয়ার পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছিল। খালেদা জিয়ার আপোসহীন মনোভাব ছিল এর নেপথ্য কারণ। এরপর দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগও ক্ষমতায় এসেছিল। এরপর শুরু হলো চক্রান্ত।
খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়া বিদেশে যাননি। তাকে অনেক চাপ দেয়া হয়েছিল। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ওয়ান ইলেভেনের সরকারকে বৈধতা দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ওয়ান ইলেভেনের সরকার নাকি তাদের আন্দোলনের ফসল। তারপর তারা ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই। বিএনপির ৬০০ এর বেশি লোক গুম। এক হাজারের এর বেশি মানুষ খুন। খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। এটা জনবিচ্ছিন্ন সরকার। জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নেই। টাকা লুটে আর পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির দাম বেড়েছে। দারিদ্রতা বেড়েছে। ৪০ ভাগ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে। সুতরাং আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো সংকটের সমাধান হবে না।
আমান উল্লাহ আমান বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার পেছনে অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। আমাদের অনেক সহযোদ্ধা প্রাণ দিয়েছেন। ধীরে ধীরে বিভিন্ন পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়। খালেদা জিয়া আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তখনই খালেদা জিয়ার নামের আগে যুক্ত হয় ‘আপোসহীন নেত্রী’ উপাধি। আর শেখ হাসিনা পরবর্তীতে টাকার প্রলোভনে এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে গিয়েছিলেন। তিনি হলেন প্রতারক।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. মিলনের সহপাঠী অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, ডা.মিলন স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। সে সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু তার স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে স্বৈরাচার এরশাদের পুলিশ। আজো চলমান আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমাদরকে সেই রকম আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আসুন এই শপথ করি তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ