ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সম্মেলন আগামী ২৫ নভেম্বর। ওই সম্মেলন ঘিরে স্বাচিপের শীর্ষ পদে স্থান পেতে ইতিমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন পদ-প্রত্যাশীরা। চলছে জোর লবিং-তদবির। সভাপতি পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজের নাম। আর মহাসচিব পদে আলোচনায় আছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং স্বাচিবের কার্যকরি কমিটির সদস্য ডা. মো: তারিক মেহেদী (পারভেজ)। তিনি বরিশালের শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।
জানা যায়, ৫ম এই সম্মেলন রাজধানীর ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মেলন সফল করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়াকে আহবায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনকে সদস্য সচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই সারাদেশে ডেলিগেটের তালিকা করা হয়েছে। সম্মেলন ঘিরে চিকিৎসকদের অনেকেই রাত-দিন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী ও এমপিদের সঙ্গে দেখা করে দোয়া নিচ্ছেন। শুধু চিকিৎসক নয়, সারাদেশে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, সম্মেলনকে ঘিরে সভাপতি ও মহাসচিব পদে কমপক্ষে এক ডজন নেতার নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। আর নতুন কমিটি গঠন উপলক্ষ্যে এরইমধ্যে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তবে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ এবং ত্যাগী ও পরীক্ষীত নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে বলে নেতৃবৃন্দকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ।
স্বাচিপের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, আওয়ামী লীগ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছে। ফলে অনেক সুযোগসন্ধানী কথিত স্বাচিপ নেতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দলের দুর্দিনে এদের অনেককেই দেখা যায়নি। এখন তাদের অনেকেই বড় নেতা সাজছেন। আর এসব কারণে এবারও দলীয় প্রধানের কাছ থেকেই স্বাচিপের সভাপতি ও মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের ঘোষণা আসতে পারে।
এর মধ্যে সভাপতি পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ। তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ১৯৮২ সালে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৮৪ সালে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই দীর্ঘদিন চিকিৎসক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এ নেতাকে ফের সভাপতি হিসেবে দেখতে চান তার অনুসারীরা। কারণ তিনি পরীক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের সংগঠক।
এছাড়াও সভাপতি পদে বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য প্রখ্যাত নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা এবং স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানের নাম শোনা যাচ্ছে।
আর মহাসচিব পদে ডা. মো. তারিক মেহেদী ছাড়াও স্বাচিপের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহা-পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, বিএসএমএমইউর সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলনের নাম শোনা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাচিবের এক নেতা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, নতুন নেতৃত্বে শীর্ষ দুই পদে অনেকটাই এগিয়ে আছেন ডা. এম এ আজিজ এবং ডা. মো: তারিক মেহেদী। কারণ তারা দুইজন দক্ষ সংগঠক এবং পরীক্ষিত নেতা। তারা ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এছাড়াও তারা দলের দুর্দিনে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবরণের সময় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া এবং করোনার সময়ে চিকিৎসকের বিপদে-আপদে সব সময় পাশে ছিলেন।
এবিষয়ে ডা. মো. তারিক মেহেদী বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু। রাজনীতি করতে গিয়ে বহুবার জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। নিজেকে পরিচ্ছন্ন রেখেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশকে বুকে ধারণ করে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে সংঘঠিত করা ও স্বাস্থ্যসেবাকে গণমুখী করে চিকিৎসকদের কল্যাণে কাজ করছি। আমি মনে করি, দলীয় নেত্রী ত্যাগের মূল্যায়ন করবেন। তবে তিনি সাংগঠনিক নেত্রী হিসেবে যে সিন্ধান্ত নিবেন সেটাই চূড়ান্ত এবং আমরা তা মেনে নেব।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ