ফরিদপুরে গণসমাবেশের পর এবার বিএনপির নজর সিলেটে। আসছে শনিবার সিলেটে সমাবেশ। ওই সমাবেশে নিয়ে কৌতূহলী দেশের মানুষ। কারণ সিলেট-১ আসনে নির্বাচনে জয়ী দলই সরকার গঠন করে। এই ধারা অব্যাহত স্বাধীনতার পর থেকেই।
এছাড়াও সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত করেই নির্বাচনি প্রচার কাজ শুরু করে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। আর এই সিলেটেই এবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টির টার্গেট বিএনপির। আগের ৬ সমাবেশে দুই দিন গণপরিবহন ধর্মঘট থাকলেও এবার সিলেটে তা ১২ ঘণ্টা।
মূলত সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কৌশলের কাছে এক প্রকার হার মেনেছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এত বাধা বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সিলেটে বড় জমায়েতের টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, স্মরণকালের বড় সমাবেশ করে সরকারকে কড়া বার্তা দেয়া হবে। কোনো বাধা-বিপত্তি সিলেটে নেতাকর্মীদের ঢল ঠেকাতে পারবে না। কমপক্ষে চার লাখ লোক জমায়েতের পরিকল্পনা তাদের। বিভাগের তিন জেলা থেকেও ব্যাপক লোকসমাগম করতে টার্গেট নিয়ে মাঠে জেলার নেতারাও।
অবশ্য অভিযোগ করে তারা বলছেন, গণসমাবেশ ঠেকাতে অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুরোনো মামলায় ধরপাকড় করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। এখন পর্যন্ত ১৩ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, নেতাকর্মীরা এখন উজ্জীবিত। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে না। জানা যায়, আগামী শনিবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির সপ্তম বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি, চলমান আন্দোলনে দলের ৫ কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদ ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ একাধিক দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে একই দাবিতে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরে সমাবেশ করেছে দলটি। এছাড়াও আগামী ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী ও আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় হবে মহাসমাবেশ।
বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে রং লেগেছে সিলেটজুড়ে। শহরজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করছেন নেতাকর্মীরা। গণসংযোগ, মিছিল মিটিং, লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মসূচি চালাচ্ছেন বিএনপির ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ডিজিটাল ব্যানার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও পোস্টার সাজিয়েছেন।
নেতাকর্মীদের স্বাগত জানিয়েছে নগরের প্রবেশমুখগুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। সমাবেশস্থলে মঞ্চ নির্মাণ কাজও শেষ পর্যায়ে। মঞ্চের আকার ৭০ ফুট বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। মাঠের পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী এই মঞ্চের সামনের মাঠে অবস্থান করতে পারবে কয়েক লাখ মানুষ। নেতাকর্মীদের খাওয়া ও থাকার সুব্যবস্থার জন্য নগরীর প্রায় সব কমিউনিট সেন্টার বুক করেছে বিএনপি।
এদিকে, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে এই ধর্মঘট। তবে দেশের অন্য সব বিভাগে বিএনপির গণসমাবেশের আগে দুই দিন পরিবহন ধর্মঘট করা হলেও সিলেটে তা ১২ ঘণ্টা হচ্ছে।
সিলেট বিএনপির ‘মুশকিল আসান’ হিসেবে পরিচিত সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কৌশলে গণসমাবেশের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেট মূলত পরিবহন ধর্মঘটমুক্ত থাকছে। বিএনপির গণসমাবেশের দুদিন আগে ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে তিনি পরিবহন ধর্মঘট বন্ধ করে দিয়েছেন।
সিলেট জেলার নেতারা জানান, আগের অভিজ্ঞতা থেকেই নেতাকর্মীদের কৌশলগত নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। গণপরিবহন ধর্মঘটের কথা চিন্তা করেই পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে এক দিন আগে যারা সমাবেশে যোগ দিতে আসবেন, তাদের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
সদর উপজেলার নেতাকর্মীদের কয়েকদিন আগেই শহরে আসতে বলা হয়েছে। তবে ধরপাকড় ও হয়রানি এড়াতে হোটেল-মোটেলে উঠতে চান না নেতাকর্মীরা। তাই ভিন্ন কৌশল নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সমাবেশস্থলে বানানো হয়েছে রাতে থাকার জন্য বিশেষ ক্যাম্প। প্রতিটি ক্যাম্পে একসঙ্গে থাকতে পারবে ৪৫০ থেকে ৫০০ মানুষ। এতে অবস্থান নেবেন জেলার নেতাকর্মীরা। তবে সমাবেশ শুরুর আগে তা সরিয়ে ফেলা হবে।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সিলেটের সমাবেশে অন্তত চার লাখ মানুষের সমাগম হবে।
সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান বলেন, শুধু সমাবেশস্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠই নয়, পুরো সিলেট শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠবে। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত যেভাবে আমরা সাধারণ মানুষের সাড়া পেয়েছি, এটা অভাবনীয়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার নেই, অর্থনীতির পঙ্গু অবস্থা— এই যে মানুষ একটা আবদ্ধ অবস্থায় আছেন, তারা এখন মুক্তির সন্ধান চাইছেন। এটা কেবল বিএনপির একার সমস্যা নয়, এটা সাধারণ মানুষেরও সমস্যা। এ জন্য প্রতিটি বিভাগীয় গণসমাবেশে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর গাড়িতে হামলা হয়েছে। বিয়ানীবাজারে বিএনপির প্রচার মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা করেছে।
মূলত ভীতির সঞ্চার করতেই এসব করা হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মীর বাড়ির সামনে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে খোঁজাখুঁজি করছে। তবে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি কমানোর উদ্দেশ্য সফল হবে না। আমরা মনে করি, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কেবল জাতীয়তাবাদী আদর্শের লোক নয়, সাধারণ জনগণও এখানে যুক্ত হবে। ব্যাপকসংখ্যক লোক গণসমাবেশে উপস্থিত হবে।
সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ সফলের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির দলনেতা ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সিলেটের গণসমাবেশ নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক সাড়া মিলছে। এক দিন আগেই নেতাকর্মীদের সিলেটে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও প্রবাসীদের বাসাবাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সিলেটে গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের ছত্রছায়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সহিংস সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। গুম হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনার গাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে।
তিনি গণসমাবেশে লিফলেট বিতরণকালে ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালায়। এতে গাড়ির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয় এবং লুনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। অথচ পুলিশ ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রদলের ফয়সাল আহমেদ, নুরুল ইসলাম ও শাহেদ আহমেদকে গ্রেফতার করে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ