ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দ্বাদশে ‘অযোগ্য’ খালেদা

প্রকাশনার সময়: ০৮ নভেম্বর ২০২২, ০৮:১৬

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন নাকি এবারও থাকবেন নির্বাচনের বাইরে? নির্বাচনের আগে-ভাগে কি মুক্তি মিলবে তার? এসব ইস্যুতে নতুন করে আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসন।

সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারও কথা বলেছেন খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়া বিষয়ে। এরপর থেকেই খালেদার নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার বিষয় নিয়ে তর্ক গড়াচ্ছে বহুদূর। বিএনপির নেতারা আওয়াজ তুলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া অবশ্যই অংশ নেবেন। তাকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।

আর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, সংসদ নির্বাচনে ম্যাডামের অংশগ্রহণে আইনি কোনো বাধা নেই। ফলে আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলছেন, ম্যাডাম সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেছেন। চূড়ান্ত কোনো রায় এখনও হয়নি। ফলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে তার সামনে কোনো বাধা নেই। তাছাড়া ম্যাডামের মামলার কোনো ভিত্তি নেই। রাজনৈতিক মামলার ফায়সালা রাজপথেই হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নানা রোগ আক্রান্ত খালেদা জিয়া গুলশানের ফিরোজায় অবস্থান করছেন। চিকিৎসক, আইনজীবী ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করছেন। বেগম জিয়া এখন শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। তারা শরীরে, পায়ে ও হাতে প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে। চলাফেরায় খুব কষ্ট। সাপোর্ট ছাড়া কোথাও মুভমেন্ট করতে পারেন না তিনি। ফিরোজায় ব্যক্তিগত চিকিসৎকরা নিয়মিত চেক-আপ করে যান।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছর সাজা হলে কারাজীবন শুরু হয় খালেদা জিয়ার। দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া আড়াই বছরের বেশি ধরে কারাগারের বাইরে আছেন। এ পর্যন্ত ৬ বার বাড়ানো হয়েছে তার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ। এ অবস্থায় তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক।

খালেদা জিয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কিনা, এমন প্রশ্নে গত ১০ অক্টোবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রচলিত আইনে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো সুযোগ তার নেই।

গত ২ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, খালেদা জিয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তাকে আইনি কাঠামোয় ফিট হতে হবে। তিনি নির্বাচনে দাঁড়ালে আমরা সেটা আইনানুগভাবে পরীক্ষা করে দেখব। এখানে আইনগত দিক অগ্রিম কিছু বলার নেই। সময় আসুক, সব খতিয়ে দেখব।

এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও খালেদা জিয়া একাধিক আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত তার প্রার্থিতা টেকেনি। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা তার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করেন। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সেটিও খারিজ করে দেয় কেএম নূরুল হুদা কমিশন। আইনানুযায়ী, যে কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেই তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হন। উপরন্তু সাজা খেটে মুক্তি পাওয়ার ৫ বছর পার না হলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না।

যদিও খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দাবি— এখানে সাজা বা মামলা কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। ম্যাডামের মামলা সুপ্রিমকোর্টে আপিলে শুনানি চলছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে খালেদা জিয়া ভোটে দাঁড়াতে পারবেন।

জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন কী বলল— সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। কারণ বতর্মান কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা নেই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মামলাগুলো রাজনৈতিক মামলা।

রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় ওনাকে সাজা দেয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। যেহেতু রাজনৈতিক বিবেচনায় সবকিছু হয়েছে— অতএব ম্যাডামের মামলাগুলো রাজনৈতিকভাবেই ফয়সালা হবে।’ তিনি দাবি করেন— খালেদা জিয়ার মামলা-মোকদ্দমা রাজনৈতিক বিবেচনায় হওয়ায় এটার কোনো ভিত্তি নেই। এসব মামলার কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই।

কামাল আরও বলেন, দেশের ১৮ কোটি জনগণ অপেক্ষা করছেন খালেদা জিয়া যেন পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। আমরা আগেও বলেছি এখনও বলছি— আগামী সংসদ নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ওই নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশগ্রহণ করবেন। সাধারণ জনগণ মনে করেন, খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ ব্যতীত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না।

খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘ম্যাডাম বাংলাদেশ ও দেশের জনগণের জন্য কাজ করতে রাজনীতিতে এসেছেন। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ম্যাডাম সর্বদা প্রস্তুত রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনেও দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হবে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি বাধা না দেয় তাহলে খালেদা জিয়া অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যদিও অতীতে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের আইনে বলা আছে— দেশের সর্বোচ্চ আদালত যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রায়ই চূড়ান্ত নয়। তাই খালেদা জিয়ার মামলাগুলো সুপ্রিমকোর্টে আপিল ডিভিশনে ট্রায়ালে রয়েছে। এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। আমি মনে করি, যেহেতু খালেদা জিয়া আগের মামলাগুলোর রায় মানেননি— উনি চ্যালেঞ্জ করেছেন। আপিলে শুনানি চলছে। হাইকোর্টে শুনানি চলছে।’

মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখনও আইনগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও বিচার বিভাগে অ্যাটর্নি জেনারেল যদি প্রভাব বিচার করে তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। তবে আমি মনে করি, আইনি দিক থেকে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণে কোনো বাধা নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার এই আইজীবী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলাগুলো এখনও আপিল পেন্ডিং। রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেছেন, এখনও চূড়ান্ত রায় দেননি আদালত। যদি কেউ আদালতের রায় মেনে নেয়, সেই রায় থেকে পরবর্তী ৫ বছর নির্বাচনে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেহেতু ম্যাডাম আপিল করেছেন, তাই এখানে ৫ বছর গণনা করা হবে না। গত নির্বাচনেও খালেদা জিয়ার মনোনয়ন সরকার, অ্যাটর্নি জেনারেল ও নির্বাচন কমিশন প্রভাব বিস্তার করে বাতিল করেছিল।’

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ