বিএনপির গণসমাবেশের আগে যে ধর্মঘট করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং সাধারণ শ্রমিক-মালিকদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে অতি উৎসাহী পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন আর ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে পরিবহন বন্ধ রাখছে।
সোমবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে তাকে নিয়ে সরকারদলীয় বিভিন্ন মন্ত্রীদের বক্তব্যের প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শিমুল বিশ্বাস। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিবহন শ্রমিক নেতা এম জেনারেল ইসলাম, এমকে নরেন, হুমায়ুন কবির খান, শাহাবুদ্দিন রেজা, জাহাঙ্গীর আলম, মঞ্জরুল আলম মঞ্জু, মাহবুব আলম বাদল প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে শিমুল বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন, এমনকি জাতীয় সংসদেও বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা। গত বুধবার জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে পরিবহন ধর্মঘট প্রসঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এমনকি এই ইস্যুতে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদও প্রতিনিয়ত মিথ্যা বক্তব্য দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমার নাম ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক সংগঠনকে জড়িয়ে যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রীসহ সরকারি দলের মন্ত্রীরা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যমূলক অপকৌশল মাত্র।
বিএনপির গণসমাবেশের আগে সরকার নিজেই ধর্মঘট ডাকছে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই সরকারের ফ্যাসিবাদী মনোভাব আর দখলদারির কারণে এরই মধ্যে দেশের সব প্রতিষ্ঠান প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ঠিক একইভাবে শ্রমিক-মালিক সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন কুক্ষিগত করে রেখেছে ক্ষমতাসীনরা। যার ফলে সরকার সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিএনপির গণসমাবেশের আগে ধর্মঘট ডাকছে।
শিমুল বিশ্বাস আরো বলেন, সরকারের জোরপূর্বক ধর্মঘটের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে দেশের মানুষ। পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সড়ক পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিক কোনো পক্ষই এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধর্মঘট চায় না, সবাই ধর্মঘটের বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকারের চাপের মুখে, ক্ষমতাসীনদের পেশিশক্তি আর দমন-পীড়নের কাছে নিরুপায়। কোনো কোনো এলাকায় এমন ঘটনাও ঘটেছে যে জীবন-জীবিকার তাগিদে সড়কে গাড়ি বের করলে সরকারদলীয় ক্যাডারদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন অনেক পরিবহনশ্রমিক।
বিএনপি চেয়ারপারসনের এই বিশেষ সহকারী বলেন, সরকার পরিবহন সংগঠনের নাম ব্যবহার করে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে জনসাধারণের মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশের আগে সমাবেশ বানচালের জন্য, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার জন্য এই ধর্মঘটের আয়োজন করা হচ্ছে। সর্বশেষ ৫ নভেম্বর বরিশালের সমাবেশের আগে সড়ক পরিবহন ধর্মঘটের পাশাপাশি রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নৌযান এমনকি নৌকা পর্যন্ত বন্ধ করেছিল। এতেই সরকারের উদ্দেশ্য প্রকাশ পেয়েছে। তারপরও সরকারের মন্ত্রীরা অন্যায়ভাবে মিথ্যাচার করে সেবামূলক সড়ক পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্য ফেলে দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিমুল বিশ্বাস বলেন, ইতিপূর্বের দু-একটি ছোট ভুলের কারণে সরকার বড় বড় অন্যায় ধামাচাপা দিতে পারে না। ইতিপূর্বে কোনো সরকার দেশ ও জনগণকে জিম্মি করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় নাই।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ