জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্য করে অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগ তদন্ত করে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। যদি তদন্তে গড়িমসি হয় তাহলে তিনি দুদকের বিরুদ্ধে আবারো আইনগত পদক্ষেপ নেবেন। নিম্ন আদালতে মামলা করারও হুশিয়ারি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘জিএম কাদের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এ অভিযোগ তদন্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, জাপা পুণর্গঠন প্রক্রিয়া কমিটির সদস্য এম এ জাহেদ, মো. নজরুল ইসলাম ও মানবধিকার কর্মী ডা. সুফি সাগর সামস প্রমুখ।
ইদ্রিস আলী বলেন, জিএম কাদের জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে বড় অংকের উৎকোচের মাধ্যমে নারী এমপি মনোনয়ন দিয়ে অবৈধপন্থায় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন- এমন অভিযোগ এনে দুদকে একটি আবেদন দাখিল করা হয়। বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তের আবেদনও করা হয় দুদকে।
তিনি আরো বলেন, দুদক এ বিষয়ে তদন্ত শুরু না করায় আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি। তবে আইনি নোটিশ পাওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য পদের মনোনয়ন বাণিজ্য ও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের শুনানি শেষে সেটি নিষ্পত্তি করেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। তারা এ বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেন।
ইদ্রিস আলী জানান, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ও প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ৬ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়, রিট আবেদনটির শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করার প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না। বিবাদীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আদালতে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হল।
জাপার পুণর্গঠন প্রক্রিয়ার এই দপ্তর সম্পাদক বলেন, শুধু পদ-মনোনয়ন বাণিজ্য নয়, বহিষ্কারের জন্য জিএম কাদের টাকা নিয়েছেন। এটা এখন জাপায় ওপেন সিক্রেট। তার ঘুষ বাণিজ্যের কারণেই আজ জাপা অস্তিত্ব সংকটে। তাই বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পার্টি পুণর্গঠনে উদ্যোগ নিয়েছেন। সেখানে জিএম কাদেরের কোনো পদ বা স্থান নেই।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্য করে অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগ এনে তা তদন্ত করার জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদুক) আবেদন করেন জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টির ৪ (চার) জন নারী সংসদ সদস্যের মনোনয়ন কার্যক্রমে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকা উৎকোচ নেন জি এম কাদের।
উৎকোচের বিনিময়ে ওই চার নারীকে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। মসিউর রহমান রাঙ্গার মাধ্যমে মনোনীত নারী সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জাতীয় সংসদের আসনে মনোনীত করার অঙ্গীকার ও অর্থ দেওয়ার শর্তে চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়। এ বিষয়ে একজন নারী সংসদ সদস্যের চুক্তি হয়, যা এরইমধ্যে মিডিয়ায় ফাঁস হয়েছে। এছাড়া তিন জন সদস্য থেকে কমপক্ষে প্রতিজনে পাঁচ কোটি করে মোট ১৫ কোটি টাকা এবং প্রয়াত অধ্যাপক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীর কাছ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে জি এম কাদের গ্রহণ করেছেন, যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে দলের কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর মসিউর রহমান রাঙ্গাকে ব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট একটি নামসর্বস্ব প্যাডে এরশাদ সাহেবের দস্তখত তৈরি করেছেন।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ