১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পেছনে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণে একটি কমিশন করছে সরকার। এতে সবকিছুই উঠে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা দিনের আলোর মতো সত্য, জিয়াউর রহমান এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এখন আপনারা জিজ্ঞাসা করতে পারেন, যখন এ মামলার তদন্ত হয় তখন তাকে আসামি করা হয়নি কেন? আপনারা জানেন জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে তারই লোকদের মারফত হত্যা হয়েছে। যেহেতু সে মৃত, তাকে আসামি করার সুযোগ নাই। আমাদের আইনে মরণোত্তর সাজা দেয়ার কোনো বিধান নাই।
‘সে জন্য আইনের বাইরে গিয়ে শুধু তামাশা করার জন্য একজনকে সাজা দেব না। এই হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত সেটার যে সাক্ষ্য-প্রমাণ, ইনশাআল্লাহ এই কমিশনের (বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবদের খুঁজতে কমিশন গঠিত হবে) মাধ্যমে জনসমক্ষে আমরা উপস্থাপন করব।’
বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের বিষয়টি বার বার আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় আইনমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলা শেষ করা এবং পলাতক আসামিদের সাজা কার্যকর করতে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা। তারপরে যেটা হয় সেটা হচ্ছে আলাপ আলোচনার মধ্যে থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে আসছে, যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন তারা এককভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটায়নি। এটার পেছনে একটা ষড়যন্ত্র আছে। সেই ষড়যন্ত্রকারী কারা তাদেরকে অন্তত পক্ষে চিহ্নিত করে তাদের নাম জানিয়ে দেয়া।
‘এখন প্রক্রিয়াটা কী হবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে একটি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কমিশন করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে আপনারা দেখেছেন ২০২০ সালের মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত দেশে কিন্তু স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যায়ার মত অব্স্থা ছিল না। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে।’
আইনমন্ত্রী, ‘আমরা যে রূপ রেখা তৈরি করেছি সেটা কিন্তু এখনও জন সম্মুখে প্রকাশ করতে পারিনি। যখনই করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে তখনই আমরা কমিশনের রূপ রেখা কী হবে, কমিশনের কার্যাবলি কী হবে, কাদের দ্বারা গঠিত হবে সেটি দেখতে পাবেন।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিদেশে পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে কোনো ঘাটতি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে খুনের দায়ে সর্বোচ্চ আদালত থেকে যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে এর মধ্যে যারা পলাতক রয়েছে, তাদেরকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের ব্যাপারে সরকার বদ্ধ পরিকর। সরকার নয়, আওয়ামী লীগ যতক্ষণ থাকবে, আমার মনে হয় বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর অনুসারি একজন থাকলেও এই হত্যাকারীদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে।
‘সেই ক্ষেত্রে আমাদের যে চলমান প্রক্রিয়া তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য সেটা অব্যাহত আছে। এই চলমান প্রক্রিয়ার ব্যাপারে যদি বিশদ কিছু বলতে যাই তাহলে চলমান প্রক্রিয়া ব্যাঘাত প্রাপ্ত হবে। সেজন্য আমি শুধু এইটুকু বলব, এই ব্যপারে কোনো শিথিলতা নাই, তাদেরকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে দেশে ন্যায় বিচারে আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছিল, তার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় আইনমন্ত্রীর কাছে। তিনি জানান, বর্তমানে যে আইনগুলো হচ্ছে তা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং ভিত্তির উপর নির্ভর করা হচ্ছে।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ