হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ বলেছেন, ট্রাস্ট বিধি মোতাবেক সুবিধাভোগী সদস্য কখনও নতুন কোনো সদস্য নিয়োগ দেয়ার অধিকার রাখে না। এমনকি ট্রাস্ট পরিচালনায় এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বা দিতে পারে না। আর ট্রাস্ট আইনমতে কেউ সদস্য না হয়ে সরাসরি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হতে পারেন না। সুতরাং এরশাদ ট্রাস্টের বৈধ পরিচালনা পর্ষদ থাকতে সেই বোর্ডের অনুমোদন ব্যতিত কাউকে নিয়োগ দেয়ার প্রসঙ্গটিই অবান্তর।
গতকাল সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর বারিধারায় অনুষ্ঠিত এরশাদ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের জরুরি সভা শেষে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান এরশাদ ট্রাস্ট চেয়ারম্যান। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন এরশাদ ট্রাস্টের সদস্য ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, মো. শামসুজ্জামান মুকুল ও অ্যাডভোকেট কাজী রুবায়েত হাসান। শুধু সুবিধাভোগি সদস্য শাহাতা জারাব এরশাদ এরিক বিদেশ ভ্রমণে থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি।
গত ২৯ অক্টোবর নোটিশকৃত এরশাদ ট্রাস্টের জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্তমতে, ট্রাস্ট বিধি লঙ্ঘন করে বিদিশা সিদ্দিক সুবিধাভোগি এরিক এরশাদকে দিয়ে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রচার কেনো চালিয়েছেন, তা জানতে চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে এরশাদ ট্রাস্ট। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব চেয়ে তার(বিদিশা সিদ্দিক) পত্রযোগ ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সদস্য বা চেয়ারম্যান নিয়োগে ট্রাস্ট বিধি লঙ্ঘন করে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে চেয়ারম্যান হিসেবে একজনের নাম প্রকাশ করা হলেও, পরবর্তিতে আরো দুজনের নাম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত দেখানো হয়। এটাও ট্রাস্ট বিধি-বিধানের মধ্যে পড়ে না। শুধু তাই নয়, সুবিধাভোগির নিরাপত্তাজনিত কারণে বিদেশ ভ্রমণে ট্রাস্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনার পর কী করে ওই দুইজনের নাম সদস্য হিসেবে লিখিতপত্রে স্বাক্ষর দেখানো হয়, তাও রহস্যজনক? ঢাকা ছেড়ে যাবার দীর্ঘ সময় পর কী করে এরিক তাদের নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করলেন, তারও জবাব চাওয়া হয়েছে উক্ত নোটিশে। পাশাপাশি ভিডিওবার্তা ও চিঠি মারফত যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তারা তিনজনই বিদিশার স্বঘোষিত জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
অন্যদিকে সুবিধাভোগী এরশাদপুত্র এরিক স্বাক্ষরিত চিঠিতে ট্রাস্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে দাবি প্রসঙ্গে কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, আগামী ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের বৈধ মেয়াদ রয়েছে। সুতরাং সুবিধাভোগির চিঠিতে উল্লেখিত তথ্যটি সম্পূর্ণরূপে ভুল। মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিত্বে নতুন সদস্য বা চেয়ারম্যান নিয়োগের কথা বলা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি জানান, ট্রাস্ট সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে সুক্ষ্যভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হিসাব নিরূপনে ট্রাস্টের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। যা পরবর্তী বোর্ডের সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এছাড়া ট্রাস্টের স্থাবর-অস্থাবর সব ধরণের বার্ষিক আয় ও ব্যয়ের হিসাব নিরক্ষনের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আরো জানান, প্রেসিডেন্টে পার্ক ও সুবিধাভোগির নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রেসিডেন্টপার্কের সব কর্মচারি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে। পাশাপাশি সুবিধাভোগির নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রেসিডেন্টপার্কে সব ধরণের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ ও ট্রাস্ট কর্তৃক নিযুক্ত তত্ত্বাবধায়কের অনুমতি ছাড়া বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কাজী মামুন জানান, গত ২৭ অক্টোবর স্যোশাল মিডিয়ায় এরিকের ভিত্তিহীন ভিডিওবার্তা ছড়ানোর নেপথ্যে কোনো ষড়যন্ত্র হয়েছি কি না, তা আইনানুগভাবে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাস্টি বোর্ড। এছাড়া ট্রাস্টের তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তি (ফ্লাট/দোকান/গাড়ি) সমূহের মাসিক ভাড়া ট্রাস্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডে জমার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ