প্রথমে চট্টগ্রামে, এরপর ময়মনসিংহ, খুলনা ও সর্বশেষ রংপুরের পর এবার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের বরিশালে। আগামী শনিবার হবে ওই গণসমাবেশ। আগের চার গণসমাবেশের মতোই এবারও সরকারের বাধার মুখে পড়ছে সমাবেশ। দক্ষিণাঞ্চলের গণসমাবেশ ঘিরে দুই দিন শুক্র ও শনিবার ডাকা হয়েছে গণপরিবহন ধর্মঘট।
বরিশাল নদীবিশিষ্ট শহর হওয়ায় আসতে পারে লঞ্চ ও নৌযান বন্ধের ঘোষণাও। সড়ক ও নৌপথের যোগযোগ বিছিন্ন করা হবে বিভাগীয় ৫ জেলার সঙ্গে। তবে এসব বাধায় মোটেও আতঙ্কিত নয় বিএনপি। বরিশাল সদরে পৌঁছতে খুঁজে রেখেছে বিকল্প পথ। বড় জমায়েত করতে ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
দলটির নেতারা বলছেন, গণসমাবেশে যে কোনো মূল্যে মহাসমাবেশে পরিণত করা হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য— গত ১৫ বছরের সরকারের অন্যায়-অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের গণজাগরণ ঘটানো। কমপক্ষে ৮ লাখ মানুষের বড় শোডাউনের পরিকল্পনা নিচ্ছে বরিশাল বিএনপি। এ জন্য বরিশাল নগরীসহ জেলায় জেলায় চলছে পোস্টার, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ। তবে এখনও মাইকিং করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ নভেম্বর বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) সমাবেশ করতে প্রশাসনের কাছে আবেদন করে মহানগর বিএনপি। জেলা প্রশাসনের তরফে থেকেও মিলেছে অনুমতি। বিকল্প হিসেবে ঈদগাহ ও জেলা স্কুলমাঠ, আউটার স্টেডিয়াম ও পরেশ সাগর মাঠও বিবেচনায় রেখেছে বিএনপি।
সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, বরিশালের গণসমাবেশ বানচাল করতেই গণপরিবহন বন্ধের অপকৌশল নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, বরিশাল সমাবেশকে সফল করতে ইতোমধ্যে মহানগর-জেলা-উপজেলা বিএনপি এবং তার সব সহযোগী সংগঠনগুলো নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
মহানগর থেকে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রস্তুতিমূলক সভা, উঠান বৈঠক ও কর্মিসভা করেছেন। পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে লিফলেট বিতরণে পুলিশ বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বরিশাল নগরের পাশাপাশি বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এরই মধ্যে পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
বরিশালের বাইরে পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠীর নেতারাও সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। প্রতি জেলা থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিত থাকবেন বলে প্রত্যাশা জেলা নেতাদের। জেলা থেকে নেতাকর্মীদের সমাবেশে হাজির করতে নিয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ।
জানতে চাইলে বরগুনা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘মানুষের ভালোই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পোস্টার ও লিফলেট বিতারণ চলছে। তবে মাইকিং করতে দিচ্ছে না। পরিবহন বন্ধ থাকায় অনেকেই আগেই থেকেই বরিশালে অবস্থান নেবেন। সমাবেশের দিনও অনেকে সাইকেল, মোটরসাইকেল ও হেঁটে সমাবেশে যোগ দিবেন।
তিনি আরও বলেন, আমার জেলার ১০ ইউনিট থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিবেন। তবে পরিস্থিত ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। সরকার বাধা দিয়েও লোকজনকে আটকাতে পারবে না।’
জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গ্রাম মার্চ কর্মসূচি নিয়ে এখন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছেছি। জনগণ আমাদের দেখে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাড়া দিচ্ছেন। আমাদের টি-শার্ট দেখে মা-বোনের কথা বলছে, হাততালি দিচ্ছে। সবার মনে একটাই কথা, গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া আজ বন্দি ও দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এই অবস্থায় লড়াই করার জন্য মানুষ ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো মূল্য তারা ৫ তারিখের বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দেবে। আমার জেলা থেকে কমপক্ষে ১৫ হাজার লোক সমাবেশে যোগ দেবে।’
অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গ্রাম-মার্চ কর্মসূচি ও লিফলেট বিতরণে বাধা দিচ্ছে। সোমবার স্বরূপকাঠী গ্রাম-মার্চ কর্মসূচিতেও পুলিশ বাধা দেয়। সেখান থেকে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও সমাবেশ ঘিরে পুরোনো মামলা ও জামিন নেয়া মামলায়ও হয়রানি করছে পুলিশ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ নেতাকর্মীদের খুঁজছে।’
জানতে চাইলে ঝালকাঠী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম নুপুর নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘এবারের সমাবেশ ঘিরে মানুষের যেভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখছি, আমরা রাজনীতি জীবনে কখনও দেখিনি। এত মানুষের সাড়া দেখিনি। সমাবেশ ঘিরে ধর্মঘটে আমরা অভ্যস্ত। প্রতিবারই সরকার বাধা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘বরিশালের উপজেলা থেকেও সদরের সবচেয়ে কাছে নলছিটি ও ঝালকাঠী উপজেলা। তাই এখানে জেলার লোকজন আগে অবস্থান করবে। দুই দিন আগেই অনেকে বরিশালে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাবে। বরিশাল সদরে দুই স্পটে একত্রিত হয়ে সমাবেশে মিছিল আকারে যোগ দেবেন জেলার নেতাকর্মীরা। কমপক্ষে ২০ হাজার লোক সমাবেশে যাবে। যদি ধর্মঘট না থাকত তাহলেও আরও বেশি মানুষ যেত।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘সমাবেশ ঘিরে মহানগরীসহ দুটি সাংগঠনিক জেলা ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের ৫ জেলার ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। শুধু বিএনপি নয়, যারা শহিদ জিয়াকে ভালোবাসে তারা সবাই উৎসাহিত। নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে যোগদানের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। তারা মনে করছে, বরিশালের সমাবেশ পরিণত হবে মহাসমাবেশে। এই সমাবেশে কয়েক লাখ মানুষের জাগরণ ঘটবে এবং লংমার্চ কর্মসূচিতে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, মহাসমাবেশকে ঘিরে খুলনা, ময়মনসিংহ চট্টগ্রামের মতো বাধা এলেও তা অতিক্রম করেই বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসবেন।
মনিরুজ্জামান খান আরও বলেন, সরকারের অন্যায়-অবিচার-গুম-খুন এবং বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে আজ সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। তাই আওয়ামী সরকার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনগণ এগিয়ে আসবে।
জানতে চাইলে কমিটির সমন্বয়কারী ও বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘সরকারের হামলা-মামলা নিয়ে আতঙ্কিত নই। এটা নিয়ে মাথাব্যথাও নেই। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য সমাবেশ করা। কারণ এই সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ অনেক বেশি।’ বরিশালের সমাবেশ হবে অবৈধ আওয়ামী সরকারের অন্যায়-অত্যাচার ও দুর্নীতির প্রতিবাদে মানুষের গণজাগরণ।’
বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের সব গণসমাবেশেই সরকার একই পরিস্থিতি তৈরি করছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে তারা বাধা দিয়েছে। তাই বরিশালের গণসমাবেশ নিয়ে আমরা আমাদের কৌশলে কাজ করব। নেতাকর্মীদের বলে দেয়া আছে। তারা নিজেদের মতো করে যাতায়াতের ব্যবস্থা করবেন।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ