ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি নেতাকেই জিজ্ঞেস করুন, কেন পরিবহন ধর্মঘট করেছে: সেতুমন্ত্রী

প্রকাশনার সময়: ২৮ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৪৫

পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির বড় নেতা শিমুল বিশ্বাসও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাকেই জিজ্ঞেস করুন- কেন ধর্মঘট করেছে?

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) নিজ বাসভবনে ব্রিফিংকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এসব কথা বলেন।

রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশের একদিন আগে দলটির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, জনসমাগম কাকে বলে তা আগামীকাল (শনিবার) থেকে বিএনপিকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

বিএনপির তিনটা সমাবেশ দেখেই নাকি সরকারের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, এখানে সরকারের কাঁপাকাঁপির কী আছে? কোনো সমাবেশে দশ লাখ লোকের টার্গেট করে এক লাখও হয়নি, আবার কোথাও পাঁচ লাখ টার্গেট করে পঞ্চাশ হাজারও হয়নি। এটাই তো বিএনপির সমাবেশের চেহারা।

তিনি বিএনপির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীতে ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলনে কত হাজার লোক হয়েছে তা দেখুন, যা পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে।

‘খেলা হবে’- সম্প্রতি বিভিন্ন বক্তব্যে দেওয়া এমন হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায় তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে, বলেছি। খেলা হবে হাওয়া ভবন, লুটপাট, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে, দুর্নীতি, বিদ্যুৎবিহীন খাম্বার বিরুদ্ধে। খেলা হবে সোয়া এক কোটি ভুয়া ভোটার সৃষ্টিকারী, ভোট চুরি আর জালিয়াতির বিরুদ্ধে।

‘খেলা হবে দেশের উন্নয়নবিরোধীদের বিরুদ্ধে এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তির লালন ও পালনকারীদের বিরুদ্ধে। খেলা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে না তাদের বিরুদ্ধে’- বলেন তিনি।

নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা না দিলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনাদের দৃষ্টিতে নিরপেক্ষতার মানদণ্ড কী, সেটার প্রমাণ তো আপনারা ক্ষমতাসীন অবস্থায় দেখিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীই (খালেদা জিয়া) তো একসময়ে বলেছিলেন- পাগল আর শিশু ছাড়া কেউই নিরপেক্ষ নয়। তাহলে আপনারা কি পাগল ও শিশু দ্বারা পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চান। ক্ষমতার মোহে অন্ধ বিএনপি নেতারা সেটাই চাইতে পারেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এদেশে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন রয়েছে। যার অধীনে যথাসময়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার শুধু নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেবে।

‘নির্বাচন কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা দলের খেয়াল-খুশি মতো হবে না’- জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও একইভাবে হবে।

‘দেশের রিজার্ভ নিয়ে বিএনপি কথা বলে কোন মুখে, এটা জনগণের প্রশ্ন’- এমন দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রিজার্ভের টাকা সরকার গিলে ফেলেছে, নাকি আমদানি ব্যয়ে দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণে ব্যয় করেছে?

‘রিজার্ভের টাকা তো গিলে ফেলেছেন ফখরুল সাহেবরা’, এমন অভিযোগ করে তিনি আবারও বিএনপি মহাসচিবের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, রিজার্ভ কত রেখে গিয়েছিলেন মনে আছে? যখন ক্ষমতা ছেড়েছেন তখন যা রেখে গিয়েছিলেন, তা পাঁচ বিলিয়নেরও কম।

তিনি বলেন, বিএনপির আমলে রিজার্ভ তো শূন্যই ছিল, সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ৪৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আমাদের রিজার্ভ উঠেছিল। আজ বৈশ্বিক সংকটের কারণে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে ৩৬ বিলিয়নে এসে ঠেকেছে। এ সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা দুনিয়ার।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি সরকারের রিজার্ভের ভাণ্ডার ছিলো শূন্য, এখন তারা কোন মুখে রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে? বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ৫ থেকে ৬ মাস সরকার আমদানি করতে পারবে।

পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে মালিক-শ্রমিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুলের উপদেশ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৩-১৪ সালে শত শত গাড়ি বিএনপি ভাঙচুর করেছিল, পেট্রোল দিয়ে গাড়ি ও পরিবহন শ্রমিকদের পুড়িয়ে মেরেছিল, শ্রমিকদের রিজিকের ওপর হাত দিয়েছিল এবং মালিক-শ্রমিক পরিবারগুলোকে নিঃস্ব করেছিল, মালিক-শ্রমিকেরা নিশ্চয় সেটা এখনো ভুলে যায়নি। ভুলে যায়নি বিএনপির সেই আগুন সন্ত্রাস ও জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি।

তিনি বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক নির্দিষ্ট কোনো দলের নয়, এখানে সব দলেরই লোক আছে।

ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের স্মরণ করে দিয়ে বলেন, পরিবহন মালিক সংগঠনের সভাপতি আওয়ামী লীগের, সাধারণ সম্পাদক বাসদের, বিএনপির বড় নেতা শিমুল বিশ্বাসও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাকেই জিজ্ঞেস করুন- কেন ধর্মঘট করেছে?

সব দলের সমন্বয়ে মালিক সমিতি, সেখানেও প্রেসিডেন্ট হচ্ছে জাতীয় পার্টির, জেনারেল সেক্রেটারি আওয়ামী লীগ সমর্থিত, অন্যান্য সব দলেরই প্রতিনিধিত্ব রয়েছে,- বিএনপি নেতাদের তাদের সাথে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের জিজ্ঞেস করুন কেন তারা আপনাদের (বিএনপিকে) ভয় পায়, কেন ২০১৩-১৪ সালের দুঃসহ স্মৃতি আজও তারা ভুলতে পারেনি, তাদের জিজ্ঞেস করুন।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ