খুলনায় বিএনপির তৃতীয় বৃহত্তর বিভাগীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে কাল। আর এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারের অভিযোগ করেছে দলটি।
শনিবার (২২ অক্টোবর) খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন এ অভিযোগ করেন। বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই নগরজুড়ে পুলিশের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সারারাত পুলিশ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। আটক করা হয়েছে ৬০জনকে। পুলিশের তৎপরতায় বিভিন্ন এলাকায় ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে ধরপাকড় চালিয়ে সমাবেশমুখী জনস্রোত ঠেকানো যাবে না।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন থানায় অর্ধশত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যে খুলনা সদর থানায় খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, মিজানুর রহমান বাবু, বেল্লাল হোসেন, জসমিউদ্দিন লাবু, শফিকুল ইসলাম, মিজান ও কবির ফরাজি, সোনাডাঙ্গা থানায় নজরুল ইসলাম, ডালিম, ডা. শাহ আলম, মাহমুদ আলম বাবু মোড়ল, জুলু, কাজী সেলিম, খালিশপুর থানায় মেহেদী, সামাদ বিশ্বাস, গোলাম মোস্তফা ভূট্টো, মোঃ হাসান, মোল্লা কওসার, দৌলতপুর থানায় হুমায়ুন কবির, রাসেলুজ্জামান, খানজাহান আলী থানায় জসীম ভূইয়া, মামুন ও উজ্জল এবং হরিণটানা থানায় কামাল, হেলাল ও হযরত আলী।
এছাড়া বাগেরহাট থেকে আগত ৪জনকে খুলনা থানা পুলিশ এবং মোড়েলগঞ্জ বিএনপি নেতা খায়রুজ্জামান শিপনের বাসা হতে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে গভীর রাতে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীবাহী একটি গাড়ি সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। যেখানে যেখানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর মুন্সি, কুষক দল আহবায়ক মুকুল মেম্বার সহ ১১ জন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, হঠাৎ করে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে আগে থেকে জানতে না পেরে গন্তব্যে যেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। যশোর থেকে আসা গৃহবধূ পপি বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি জানতে পারেন বাবা অসুস্থ্ হয়ে পড়েছেন। সংবাদ শুনে তিনি দুপুরের পরে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পারিবারিক কাজ শেষে যশোরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সোনাডঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন কোন বাস চলছে না। জরুরি ভিত্তিতে তাকে বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। ভেবে কোন উপায় না পেয়ে মাহেন্দ্রায় করে যশোরের পথে যাত্রা করবেন বলে চিন্তা করেন। কিন্তু সেখানে বাধ সাধে চালক, তিনি নওয়াপাড়ার বেশী যেতে চাননি। ভাড়াও দ্বিগুণ দাবি করেন চালক। পপি বেগম আরও বলেন, ঘরে তার ছোট বাচ্চা রয়েছে। এখন যেতে না পারলে তার বিপদ হয়ে যাবে। তাই যেভাবে হোক তাকে যেতে হবে।
একই কথা জানান নগরীর সাতরাস্তা মোড়ের বাসিন্দা নিরব ইসলাম। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন তার এক আত্মীয়। সেখানে অপারেশন হবে। জরুরি প্রয়োজনে যেতে হবে কিন্তু তিনি পারছেন না।
অপর যাত্রী সাইফুল ইসলাম জরুরি কাজে ঢাকায় যাবেন। সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন কোন গাড়ি খুলনা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না। শুনেছি মাইক্রো যাচ্ছে। এখন অপেক্ষায় আছি। যদিও সেখানে ভাড়া অনেক বেশি।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, শনিবার (২২ অক্টোবর) নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্ত্বরে খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই সমসবেশে যাতে নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হতে না পারে এ কারণে পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া কোনো কারণ ছাড়াই নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের আটক করে সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সব বাঁধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করা হবে। সমাবেশ হবে জনসমুদ্র।
অপরদিকে, সমাবেশে লোকজন আসা ঠেকাতে বাস-মিনিবাস-কোচ বন্ধের পর খুলনায় ১০ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার লঞ্চ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে খুলনা লঞ্চ টার্মিনাল থেকে কোন লঞ্চ ছেড়ে যায়নি ও আসেনি। দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদিন ১৫টি লঞ্চ চলাচল করে। বিষয়টি নিশ্চিত করে শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, বেতন বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে তারা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট আহ্বান করেছেন। এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোন সম্পর্ক নেই।
ধর্মঘটে থাকা শ্রমিকরা জানান, লঞ্চ শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো, ভৈরব থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত নদীর খনন, ভারতগামী জাহাজের ল্যান্ডিং পাস দেওয়ার দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট পালন করছেন যাত্রীবাহী লঞ্চের শ্রমিকরা। শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে খুলনা থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে না। তবে মালবাহীসহ অন্যান্য লঞ্চ ও নৌযান চলাচল করছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ