ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সরকার জনভীতি রোগে ভুগছে : ফখরুল

প্রকাশনার সময়: ২১ অক্টোবর ২০২২, ২০:০৩
ফাইল ছবি

খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বাধা দিয়ে সরকার পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জনভীতি রোগে ভুগছে। সরকার জনগণকে ভয় পায় বলেই বিএনপির সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করছে। তাদের ‘পিপলস ফোবিয়া’ রোগ হয়েছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে।’

আজ শুক্রবার (২১ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘ব্ল্যাক আউট বাংলাদেশ : লুটেরা আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতকে বিলিয়নিয়ার তৈরির কারখানায় পরিণত করে অর্থনীতি ও জনজীবন সংকটাপন্ন করে তুলেছে’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ। এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করা হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা রামদা, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

মহাসচিব বলেন, খুলনায় গণসমাবেশ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যে বাসায় উঠেছেন, সেখানে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ রেড দিয়েছে। সেখান থেকে দলের ১৯ নেতা-কর্মীকে গেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের কথা চিন্তা করে না। তারা সাধারণ মানুষের কথা ভাবলে গণসমাবেশ ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ করত না। এই সরকার সব কিছু করতে চায় মানুষকে বাদ দিয়ে। তারা রাষ্ট্র চালাতে চায় মানুষকে বাদ দিয়ে। তারা নির্বাচন করতে চায় জনগণকে ছাড়া। জনগণ জেগে উঠলে ক্ষমতা ছাড়তে হবে; সারাক্ষণ এই ভয়ে থাকে। এই সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।

‘সরকার বিএনপির সমাবেশে বাধা তো দেইনি; বরং প্রশাসনিক সহযোগিতা দিচ্ছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের জবাবে ফখরুল ইসলাম বলেন, এটি আওয়ামী লীগের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। তারা মুখে বলবে এক আর কাজ করবে আরেক। জনস্রোত দেখে সরকার বিএনপি কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও বাধা দিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। বিএনপির কর্মসূচিতে সহযোগিতার নামে ক্ষমতাসীনদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

তিনি বলেন, খুলনার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে জীবনযাত্রা ব্যাহত করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে খবর পেয়েছি যে, পথে পথে যাকে যেখানে পাওয়া যাবে তাকে সেখানে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তারা রামদা, লাঠি-সোটা নিয়ে শোডাউন করেছে, মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। খুলনার গণসমাবেশে যেন বাধা তৈরি না করা হয় সে আহ্বান জানান তিনি।

গণপরিবহন ধর্মঘটের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খবর পেয়েছি যে ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ করেছে। কিন্তু এটাতে সাধারণ মানুষের যে জীবনযাত্রা তাকে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে ব্যাহত করছে। এখানে প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকার চায় না মানুষ একটা গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের কথা, বক্তব্য, প্রতিবাদ প্রকাশ করুক। আমরা সরকারকে এ রাস্তা থেকে ফিরে এসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ভয়টা কীসের তাদের? কি কারণে তারা সমস্ত কিছু বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশগুলো বন্ধ করতে চাচ্ছে। মানুষ যদি বাড়তে থাকে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। জনগণের উত্তাল তরঙ্গে তাদের ভেসে যেতে হবে। এভাবে যদি জনগণ জেগে ওঠে, গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে তখন তাদের অত্যন্ত ধিকৃত অবস্থায় সরে যেতে হবে। এটাই তো তাদের ভয়।

সরকারের দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার কারণেই দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নিশ্চয় অমর্ত্য সেনের বইটা পড়েছেন। যেখানে উনি ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর্যালোচনা করতে গিয়ে স্পষ্ট করেই বলেছেন, ’৭৪ সালে দুর্ভিক্ষটা ছিল মানুষদের দ্বারা তৈরি করা। অর্থাৎ তখন যারা ক্ষমতাসীন ছিলেন তাদের অব্যবস্থাপনা, তাদের দুর্নীতি, তাদের অযোগ্যতা, তাদের অদক্ষতার কারণে সেই দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছিল। আজকে সেই একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে।

কৃষকদের গোল্ড মেডেল দেওয়া উচিত জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের তো বাংলাদেশের কৃষকদের প্রত্যেককে একটা করে সোনার মেডেল দেয়া উচিত। তারা দিবারাত্র পরিশ্রম করে যে ফসল ফলায় তার জন্য বাংলাদেশের মানুষ খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা (সরকার) মুখে বলে যে, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। আর অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ টাকার খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করছে। এদের পুরো লক্ষ্যটা হচ্ছে, সবখানে লুট করা, চুরি করা ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ