দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নামনে রেখে সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজপথে বিএনপি। পাশাপাশি জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদেও সরব দলটি।
সরকারবিরোধী আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বিএনপি ঢাকায় জোনভিত্তিক সমাবেশ শেষ করে এখন বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ করছে। ঢাকায় মিছিল, সমাবেশে সুবিধা করতে না পারলেও বিভাগীয় শহরে কার্যত বাধাহীন সমাবেশ করতে পেরেছে বিএনপি। বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে প্রচুর জনসমাগম হওয়ায় উজ্জীবিত বিএনপি নেতারা।
বিপরীতে, ক্ষমতাসীন হওয়ায় দীর্ঘদিন কার্যত মাঠে নেই আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামপন্থি দলগুলো সক্রিয় হওয়ায় এখন মাঠ দখলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে এ মাসেই মাঠের কর্মসূচিতে যাচ্ছে তারা।
সূত্র জানায়, মাঠ দখলের অংশ হিসেবে আগামী ২৯ অক্টোবর ঢাকায় বড়সড়ো শোডাউন করবে আওয়ামী লীগ। এ দিনই ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকতে পারেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীসহ লক্ষাধিক লোকের বেশি সমাগম ঘটাতে চাইছেন দলের নেতাকর্মীরা।
এর মধ্য দিয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ হবে। এসব সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। এ ছাড়া সারা দেশে জেলা ও উপজেলা সম্মেলন শেষ করার ক্ষেত্রেও দলীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে দলের জাতীয় সম্মেলন করার লক্ষ্য রয়েছে।
বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি নেতাদের বক্তব্য স্রেফ রাজনৈতিক বক্তব্য। তাদের নেতাকর্মীদের আকৃষ্ট করে ধরে রাখার চেষ্টা মাত্র। কারণ তাদের নেতাকর্মীরা এখন হতাশাগ্রস্ত। এসব বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের নেতাকর্মীদের ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে এসে মাঠের রাজনীতি কোনোরকম টিকিয়ে রাখতে চায়। এসব আসলে কাগুজে বাঘের হুংকার ছাড়া কিছু নয়। এ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বলীয়ান। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। তবে আমরা পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছি। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আমাদের দল থেকে বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণের সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা আসতে পারে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সামনে রেখে থানা সম্মেলনের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। ২৯ অক্টোবরের সম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা হবে। সামনে মাঠের কর্মসূচি এলে বিরোধীদের মোকাবিলা করতে নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই যথেষ্ট।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ জানান, ২৪টি থানার মধ্যে ২০টি থানা সম্মেলন এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের মধ্যে বাকি ৪টি থানারও সম্মেলন সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। সম্মেলনের মাধ্যমে সবাই চাঙ্গা হয়েছে। সামনে বিরোধী দলগুলোর যেকোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি এলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে তা মোকাবিলা করবে। এ ধরনের কর্মসূচি মোকাবিলায় নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবসময় প্রস্তুত আছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় আমরা মূলত তিনটি কাজ করব। বিএনপি যদি জ্বালাও-পোড়াও করে, তাহলে আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে দেবে।
অন্যদিকে, তারা গুজব রটালে আমরা জনগণকে সচেতন করব। তাদের মিথ্যা কোনো তথ্যের বিষয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা সচেতন থাকবে। তৃতীয়ত, তাদের যেকোনো অসত্য বক্তব্যের বিষয় জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, সে বিষয়ে আমরা অবশ্যই কাউন্টার দেব।
সূত্র জানায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে গুজব প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে দলকে তৎপর থাকতে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে দেশে ও বিদেশে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটা প্রতিরোধে দল কাজ করছে।
এর বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের তথ্যপ্রমাণসহ জবাব দিতে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব-অপপ্রচারের জবাব দিতে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফরম তৈরির কাজ করছে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপ-কমিটি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী তত বেশি গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করবে। এ কারণে আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের তৈরি করছি, যাতে কোনো তথ্য সন্ত্রাস হলে তারা সঠিক তথ্য দিয়েই তা প্রতিরোধ করতে পারে।
গুজব প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-কমিটি কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আসলে এটা আমাদের কাজেরই একটা অংশ। আমরা দলীয় নেতাকর্মীদের শেখাচ্ছি, কোনো ফেক নিউজ হলে নেতাকর্মীরা কীভাবে দ্রুত সে বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাজ করবে, যাতে দলের নেতাকর্মীরা সর্বশেষ আপডেট দিতে পারেন।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ