এক দফা দাবি আদায়ে ‘অল অ্যাটাক’ কর্মসূচি ঘোষণার দিকে যাচ্ছে রাজনীতির মাঠের প্রধান দল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে চলছে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা প্রণয়নের কাজ। বর্তমানে চলমান বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় হবে মহাসমাবেশ। এই কর্মসূচি থেকে আন্দোলনের ‘অল অ্যাটাক’ কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে রাজনীতির মাঠের দখল নিতে মরিয়া দলটি।
বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেছেন, নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা নস্যাৎ করতে সরকারের তরফে নানামুখী কৌশল নেয়া হয়েছে। অতীতের মতো একই কায়দায় বিএনপিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসতে চায় আওয়ামী লীগ। কর্মসূচি ঘিরে হামলা-মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য চাওয়া হচ্ছে। সামনে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হলে আওয়ামী লীগ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে তারা মনে করছেন।
অন্যদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টাকে ‘ফাঁদ’ বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই এবার হার্ডলাইনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। কোনো অবস্থাতেই যেন মাঠ থেকে সরে যেতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছেন তারা।
এরই মধ্যে গত ৮ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের এক সমাবেশ থেকে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান বলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়, অন্য কারও কথায় নয়। বিএনপি নেতাদের এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর কী করতে চায় বিএনপি? বাংলাদেশে ডেডলাইন দিয়ে সরকার পতনের ঘোষণা নতুন নয়।
এর আগেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ৩০ এপ্রিল সরকার পতনের ডেডলাইন ঘোষণা করেছিলেন। এ সময়ে তার ট্রাম্পকার্ড তত্ত্ব রাজনীতিতে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই হয়নি। একইভাবে এবার বিএনপি নেতারা ১০ ডিসেম্বর কী করতে চান তা এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট।
যদিও বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, তারা একাধিক কর্মসূচির মাধ্যমে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আন্দোলনকে একটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চান। বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের বক্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত ১০ অক্টোবর স্পষ্ট করে বলে দেন, বিএনপি ‘উল্টাপাল্টা স্বপ্ন’ দেখলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত পাঠানোর কথা ভাবতে হবে।
এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি নিয়ে এখন তার বাসায় রয়েছেন। নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে থাকার শর্ত হিসেবে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ায় বাধা আছে।
বিএনপির একটি সূত্রের দাবি, ঢাকা দখলের লক্ষ্য সামনে রেখেই বিএনপি আগামীর কর্মসূচি সাজাচ্ছে। কয়েক লাখ লোক জড়ো করে ঢাকায় মহাসমাবেশ করাই প্রাথমিক লক্ষ্য। এই লক্ষ্যেই বিএনপি ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলন কর্মসূচি পালনে দিকে হাঁটছে। সূত্রের দাবি, কোনোভাবে ঢাকা দখল করা গেলে তারা সরকারের পতন ঘটাতে পারবে। এ লক্ষ্যেই ধাপে ধাপে কর্মসূচিগুলোকে ১০ ডিসেম্বর চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায় বিএনপি। আর সেই লক্ষ্যেই ১০ ডিসেম্বরের ডেডলাইন ঘোষণা করা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা অবরোধ বা ঢাকা অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে তারা দলীয় শক্তির পরীক্ষা দিতে চায়।
ওই সূত্র আরও জানায়, অল অ্যাটাক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বরের আগে বা পরেই সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। সংসদ থেকে পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কবে, কখন, কিভাবে দলীয় সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করবেন- এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি।
বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচির আশপাশে তারা সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘটনা ঘটাবে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত নির্দেশনা আসবে লন্ডন থেকে। যদিও দলের এরই মধ্যে এ আলোচনা শুরু হয়েছে- মাত্র ছয়জন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে তা রাজনীতিতে যথেষ্ট ‘ইমপ্যাক্ট’ ফেলতে পারবে কিনা। তারপরও সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল বিএনপি নিচ্ছে বলেই জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা দখল বা সংসদ থেকে পদত্যাগের বাইরে বিএনপি সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েও এগোচ্ছে। বিএনপি নেতাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পারলে সরকার সত্যিকার অর্থেই দুর্বল হয়ে পড়বে। আর আন্তর্জাতিক চাপের ফলে শেষ পর্যন্ত সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।
বিএনপি নেতাদের আশা, ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মানবাধিকার, গুম ইত্যাদি ইস্যুতে বড় ধরনের চাপ প্রয়োগ করবে। আর এই চাপ শেষ পর্যন্ত অব্যাহত রাখা গেলে সরকারের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ