আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের আগে জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাত সংসদ সদস্যকে পদত্যাগের নির্দেশনা দেবে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলটির নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জোরালো করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের আগেই চূড়ান্ত ষোষণা আসতে পারে।
আর বিএনপির হাইকমান্ডের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দলটির সংসদ সদস্যরা। তারা বলছেন, জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগে প্রস্তুত রয়েছেন। দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা একমত। এখন অপেক্ষা শুধু দলীয় নির্দেশনার।
দলীয় সূত্রমতে, ঢাকার মহাসমাবেশের আগে সংসদ থেকে দলীয় এমপিদের পদত্যাগ, যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ও নির্দলীয় সরকারের ফর্মুলা তৈরি করা— এই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সিদ্ধান্ত নিতে চায় বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকেও এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এই তিনটি সিদ্ধান্ত নিতে পারলে চলমান আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেয়া সহজ হবে বলে মনে করছে দলটি।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সাতটি আসনে জয় পায় বিএনপি। তবে কারচুপির অভিযোগে ওই নির্বাচনের ফল বর্জন করে দলটি। সিদ্ধান্ত হয় বিজয়ীরা কেউ সংসদে যোগ দেবে না। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তে বিএনপি মহাসচিব ছাড়া বাকিরা শপথ নেন এবং সংসদ যোগ দেয়। পরবর্তীতে সংরক্ষিত নারী আসনে রুমিন ফারহানাকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। বর্তমান সংসদে বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য আছেন। তবে অংশ নিলেও বারবারই সংসদকে অবৈধ আখ্যায়িত করে আসছে বিএনপি ও তাদের এমপিরা।
প্রায় সাড়ে তিন বছর পর দলের সব সদস্যকে সংসদ থেকে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিল দলটি। যদিও কয়েক নেতার সংসদে শপথ নেয়ার বিষয়ে শুরু থেকেই আপত্তি ছিল দলের ভেতরেই। তবে ঠিক কবে নাগাদ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে তা বিএনপির কোনো সংসদ সদস্যই জানেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা বলেন, রাজপথে সংসদকে অবৈধ বলে সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হলেও বিএনপির এমপিরা এখনো সংসদে আছেন। বিষয়টি সম্প্রতি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছিল। সংসদ অবৈধ দাবি করে সংসদে থাকাটা যুক্তিযুক্ত নয়। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসা উচিত। তাই দলীয় এমপিদের সংসদ থেকে পদত্যাগের সময় এসেছে। আগামী ডিসেম্বরের আগে সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তারা।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, ‘বিএনপি ৬টা আসন নিয়ে সংসদে আছে, এটি অত্যন্ত লজ্জাস্কর। এতে বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর যে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তার দুই-চার দিন আগে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা বলে আমি উচিত মনে করি। এই সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীনদের পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
বিএনপির সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ বলেন, দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমি একমত আছি। আমি অন্ততপক্ষে একবারে হাসিমুখে, গর্বের সঙ্গে এই পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।
বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, দলের সিদ্ধান্তেই তারা সংসদে গেছেন, দল সিদ্ধান্ত নিলে পদত্যাগে প্রস্তুত তারা। তিনি বলেন, ‘যে মুহূর্তে দল বলবে আমি সে মুহূর্তে পদত্যাগে প্রস্তুত। দল আমাকে যা যা করতে বলেছে, দলের সিদ্ধান্তে আমি তা তা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘পদত্যাগের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র দ্বিধার কিছু নেই। আমাদের আন্দোলন বেগবান হচ্ছে এবং শক্তিশালী হচ্ছে প্রতিদিন, সেখান থেকে বোঝা যাচ্ছে যে সামনের দিনগুলোতে একটা উত্তাল সময় আসছে রাজনীতিতে।’
বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির কৃতিত্বে আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। সমস্ত কৃতিত্ব ধানের শীষের। সে ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, আমার পার্টি যখন যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমি সে সিদ্ধান্ত মানতে শতভাগ প্রস্তুত।’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আন্দোলনের মাঝে এদের পদত্যাগ করতে হবে। যেহেতু আমরা নিজেরাই বলছি, পার্লামেন্ট বাতিল করতে হবে। বিএনপি করলে বিএনপির সিদ্ধান্ত মানবে না, এটা তো হতে পারে না।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্তের পরই সংসদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ