বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে সামনে দিকে এগোতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না। এই সরকার এখন জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রক্ত ঝরছে, প্রয়োজনে আরো রক্ত দিয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো, পেছনে ফিরবো না। আওয়ামী লীগ সরকার সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে শোক র্যালির আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনকালে ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জের শাওন প্রধান, মুন্সিগঞ্জের শহীদুল ইসলাম শাওন ও যশোরের আব্দুল আলিম হত্যার প্রতিবাদে এই শোক র্যালি করে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৫০মিনিটে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটির যৌথ উদ্যোগে এ র্যালি শুরু হয়। র্যালিটি কাকরাইল মোড়, আরামবাগ হয়ে আবারও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ঘরে ঘরে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নির্যাতন, মামলার পরও সরকার বিএনপির আন্দোলন দমাতে পারেনি। আজকে এই দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, তরুণ-যুবকরা জেগে উঠেছে। আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি, আমরা আরো রক্ত দেবো। এই দেশের মানুষকে আমরা মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ।
তিনি বলেন, এ সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করতে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করে নতুন সরকার গঠন করা হবে, জনগণের সরকার গঠন করা হবে।
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে রাজবাড়ী জেলা মহিলা দলের সদস্য সোনিয়া আক্তারকে গ্রেফতারের কড়া সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে গভীর রাতে রাজবাড়ীতে একজন মহিলা নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুটো ছোট বাচ্চা আছে তার। কী অপরাধ তার, অপরাধ সে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। কেন আপনি কি গড?, দেবতা?, বিধাতা? যে আপনার বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে যে কারও সমালোচনা করার অধিকার প্রত্যেক মানুষের আছে। আজকে আমাদের বোন সে কাজটি করেছে। এদের (সরকার) অত্যাচারের মাত্রা কোন জায়গায় গেছে যে তারা একজন নারীকে পর্যন্ত গভীর রাতে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আজকে আমাদের অস্তিত্বের জন্য, আমাদের বাঁচার জন্য, আমাদের এই জাতিকে রক্ষা করার জন্য, ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি দেশের স্বাধীনতার জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, সেই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্রকে আমরা অবশ্যই রক্ষা করব।
সম্প্রতি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা দিয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপনের কড়া সমালোচনা করে ফখরুল ইসলাম বলেন, মানুষ যেন সঠিক তথ্য জানতে না পারে, গণমাধ্যম যেন এই সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ করতে না পারে, সে জন্য সার্কুলার দিয়েছে তারা কাউকে কোনো খবর দেবে না। এর অর্থ হচ্ছে তাদের দুর্নীতি, চুরি- সেগুলো ঢেকে রাখার জন্য সমগ্র দেশকে, জাতিকে বঞ্চিত করে রাখতে চায় সঠিক খবর থেকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করা হবে। সরকারের পতন নিশ্চিত করা হবে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের পরিচালনায় র্যালির আগে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম।
র্যালিতে যোগ দিতে দুপুর ১টা থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার, কালো পতাকাসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে র্যালিতে অংশ নেয়। এতে বিএনপির হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাজিম উদ্দিন আলম, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, সরফাত আলী সপু, শামীমুর রহমান শামীম, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নিরব, সেলিম রেজা হাবিব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, মামুন হাসান, ইসহাক সরকার, এসকে জিলানি, রাজীব আহসান, ইয়াসীন আলী, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আবদুর রহিম, শাহ নেছারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার, আবুল কালাম আজাদসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
এদিন র্যালি ঘিরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ এর আশ-পাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলেন।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ