ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
১৮ কোটি টাকা উৎকোচ

জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:১১

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জি এম কাদের) বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ সম্পত্তির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন দলীয় জাতীয় পার্টির এক নেতা। অভিযোগে বিদেশে অর্থ পাচারের কথাও উল্লেখ্য রয়েছে।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয় পার্টির প্যাডে লিখে এই অভিযোগ দুদকে জমা দেয়া হয়। দুদকে জমা দেয়া অভিযোগ নথিটি নয়া শতাব্দীর হাতে এসেছে।

অভিযোগে উল্লেখ্য করা হয়, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে জাতীয় পার্টির চার জন মহিলা সংসদ সদস্যের মনোনয়ন কার্যক্রমে ১৮ কোটি দশ লাখ টাকা উৎকোচ নেন জি এম কাদের। উৎকোচের বিনিময়ে ওই চার নারীকে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়।

অভিযোগে বলা হয়, জি এম কাদের অতি চাতুর্যতার সঙ্গে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসুস্থতার অজুহাত তৈরি করে তৎকালীন দলীয় মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার করে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে অধিষ্ঠিত করেন। মূলত দলীয় চেয়ারম্যানের পদবি এবং প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের জন্য জি এম কাদের দলের মহাসচির রাঙ্গাসহ কতিপয় তাবেদার নেতাকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরে একটি আলাদা বলয় তৈরি করেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, মসিউর রহমান রাঙ্গার মাধ্যমে মনোনীত নারী সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জাতীয় সংসদের আসনে মনোনীত করার অঙ্গীকার ও অর্থ প্রদানের শর্তে চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়। এ বিষয়ে একজন নারী সংসদ সদস্যের চুক্তি হয়। যা এরই মধ্যে মিডিয়ায় ফাঁস হয়েছে। এছাড়া ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যদের মনোনয়নের জন্য ঢাকা-৬ এর সংসদ সদস্য সাবেকমন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ উনার কন্যাকে মনোনীত করার শর্তে মহাসচিবকে পাঁচ কোটি টাকা দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল দলের কেন্দ্রীয় অফিসটি বৈধভাবে ক্রয় করা। কিন্তু এ অফার গ্রহণ করেননি মহাসচিব।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, তিনজন সদস্য থেকে কমপক্ষে প্রতিজনে পাঁচ কোটি করে মোট ১৫ কোটি এবং প্রয়াত অধ্যাপক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীর কাছ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে জি এম কাদের গ্রহণ করেছেন। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

অভিযোগে উল্লেখ্য করা হয়, জি এম কাদের পবিত্র জাতীয় সংসদের আসন নিয়ে অত্যন্ত নগ্নভাবে দলীয় ক্ষমতাকে (চুক্তিপত্র ও শোকজ) ব্যবহার করে মহান জাতীয় সংসদকে অপবিত্র করার হীন প্রচেষ্টায় বিন্দুমাত্রও বিচলিত হননি। মহান জাতীয় সংসদের পবিত্রতা ‘ক্ষুণ্নকারী’ ও সংসদের ‘ভাবমূর্তি’ ও মর্যাদা জনসমক্ষে ‘হেয় প্রতিপন্নকারী’ এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন শাস্তির ব্যবস্থা নিতে দুদকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন অভিযোগকারী।

অভিযোগে আরো বলা হয়, দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে দলের কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর মশিউর রহমান রাঙ্গাকে ব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি করা একটি নামসর্বস্ব প্যাডে এরশাদ সাহেবের দস্তখত তৈরি করেন। এর মাধ্যমে অবৈধভাবে নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন জি এম কাদের।

অভিযোগে আরো উল্লেখ্য করা হয়, চেয়ারম্যান হওয়ার পরেই শুরু হয় দলের পদ-পদবি প্রদানের মাধ্যমে অর্থগ্রহণ করছেন জি এম কাদের। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট হলেও এখন পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে প্রায় ৬০০ থেকে ৬৫০ জন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এতে বলা হয়, দলের প্রবীণ অভিজ্ঞ বহু রাজনৈতিক নেতাকে দলের পদ থেকে বহিষ্কার করে শূন্য পদে এবং নতুন নতুন পদবি সৃষ্টি করে এ যাবত কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে নিজের অত্মীয়-স্বজনের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন ও বিদেশে অর্থপাচার করেছেন।

দলের চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমানে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা কিংবা সাধারণ সভা না করেই তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে গোপন সন্ধির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর-লন্ডন-সিডনিতে অবৈধ অর্থসংগ্রহ ও পাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ