আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় থাকতে ভারতে গিয়েছেন। আবারো কীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়, প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে সে ব্যবস্থা করে এসেছেন।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের ইতি প্রকাশনের উদ্যোগে ‘রাজনীতি: পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ঢাকা দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, গ্রন্থের লেখক হারুন-অর-রশিদ ও প্রকাশক মো. জহির দীপ্তি। ‘ইতি প্রকাশন’ এর ৩২০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটির মূল্য ৬০০ টাকা।
ভারত সফর থেকে বাংলাদেশ কী অর্জন করেছে জাতির সামনে তা স্পষ্ট করে প্রকাশ করতে হবে বলে দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ যখন গুলি খেয়ে মরছে, জিনিসপত্রের বাজারে আগুন জ্বলছে, তখন ভারতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নাচানাচি শোভা পায় না। ফিরেছেন খালি হাতে।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সু-সম্পর্ক হোক আমরা সবাই চাই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আজ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে আমাদের দেশের এক মন্ত্রী বলেছে। কিন্তু সুসম্পর্কের কথা বললেও আজ অবধি দেশের মানুষের জন্য কোনো দাবি ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি।
দেশের বর্তমান সংকটময় অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, তারা দেশে লুটপাটের অর্থনীতির রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। তিলে তিলে রাষ্ট্রের গণতন্ত্র, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে ক্ষমতাসীনরা। প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে কিছুই আনতে পারেননি। দেশের সংকটময় অবস্থায় তিনি জয়পুরে নৃত্যে অংশ নিয়েছেন। এটা মানুষ কখনো মেনে নেবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। মামলা, হামলা, গুলি করে বাংলাদেশের মানুষকে থামানো যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামী। সংগ্রামের মাধ্যমেই মানুষ বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ফখরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস একদিকে যেমন বঞ্চনার, তেমন সংগ্রামের। বাংলাদেশের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবের। কিন্তু জোর করে ক্ষমতা দখলকারীরা কখনোই চায় না, এই দেশের সঠিক ইতিহাস পুরোটা বের হয়ে আসুক। এখন সত্য কথা বলাটাই অপরাধ। ১৯৭১ সালে আমরা একটা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি। স্বাধীনভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারিনি। আমরা জাতি হিসেবে এখানে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছি। স্থিতিশীল একটি রাজনৈতিক কাঠামো এখনও গঠন করতে পারেনি সরকার।
অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল নায়ক শেখ হাসিনা। সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করে মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে। সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলছেন, আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমান সব সময় একটা কথা বলতেন। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। সুতরাং দলের চেয়ে যদি দেশ বড় হয়; তাহলে আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব। আর যদি দেশের চেয়ে দলকে বড় মনে করি, দলের চেয়ে নিজেকে বড় মনে করি, সেখানেই স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ফুটে ওঠে।
তিনি বলেন, আজকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদের মনোভাব এই রকমই। তারা রাষ্ট্রকে সবার ঊর্ধ্বে নিতে পারেন না। দলগুলোও রাষ্ট্রকে দলের উর্ধ্বে নিতে পারে না। এই যে সংকীর্ণ মনোভাবের কারণেই দেশের অবস্থা এমন হয়েছে।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ