‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’- একদফা দাবিতে রাজপথে বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দাবি আদায়ে সরকার দলীয় জোট বাইরে থাকা বিরোধী দলগুলোকে এক ছাতার নিচে এনে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে দলটি। বাম-ডানপন্থি ধর্মভিত্তিক নানা দলের সঙ্গে করছে সংলাপ। পেশাজীবী নানা সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছে দলটির হাইকমান্ড। অলআউট মাঠে নামার লক্ষ্য দলের সবস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে যোগাযোগ। কমিয়ে আনা হচ্ছে দলীয় গ্রুপিং-কোন্দল। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী অভিযোগে বিগত দিনে বিএনপির পরীক্ষিত ও সিনিয়র অনেক নেতা বহিষ্কার হয়েছেন। তবে নির্বাচনের আগে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরানোর ব্যাপারে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। নিজ থেকে দলে আসতে চাইলেও ইতিবাচকভাবে নেয়া হবে। সবার জন্যই দরজা খোলা রাখতে চায় বিএনপি। আগামী দিনের রাজপথের অগ্নিপরীক্ষায় তারা চাইলে যোগ দিতে পারবেন।
সূত্র মতে, চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান রঞ্জনকে বহিষ্কার করা হয়। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বহিষ্কার হন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। তৈমূর আলম খন্দকারের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকেও বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত হন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু। গত ২২ জুলাই সাবেক ছাত্রনেতা ও জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ নাসিরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। ২০১৯ সালে ছাত্রদলের কমিটিকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেন ছাত্র নেতারা। এতে ১২ জনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও নানা সময়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা বহিষ্কার হয়েছেন।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বহিস্কৃত নেতাদের ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে জোরালো তদবির আছে। অনেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ব্যাপারে লিখিতভাবে আবেদন জমা দিয়েছে। বহিষ্কৃত অনেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন। দলের নানা পর্যায় থেকে তাদের ফেরানোর চাপ আছে। বৃহত্তর ঐক্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে ও আন্দোলনের আগ দিয়ে তাদের দলে ডাকা হবে। তখন যারা আসবে ও অবদান রাখবে আগামীতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। বিএনপির বহিষ্কৃত একাধিক নেতা বলেন, দল ডাকলে তারা ঘরে বসে থাকবেন না। মান-অভিমান ভুলে মাঠের রাজনীতিতে সরব হবেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অবদান রাখবেন। তবে দল থেকে আগে ডাকতে হবে। বহিষ্কৃত তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। দেশে এখন গণতন্ত্র নাই, দেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে। এখন সবচেয়ে বেশি দরকার গণতান্ত্রিক সরকার। আমার কথায়, লেখায় চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন।
দলে ফেরার ব্যাপারে কী ভাবছেন জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালে নির্বাচনের সাত দিন আগে আমাকে বসিয়ে দেয়া হলো। আমাকে যে বসিয়ে দেয়া হবে তা আমার আগে জানতেন প্রতিপক্ষরা। এবার আমাকে বহিষ্কার করা হবে তা আগে থেকেই জানত আইভী রহমান। দলের সিদ্ধান্ত আমার আগে আমার প্রতিপক্ষরা জানে। আমার দলে ফেরার ব্যাপারে দল আগে ভাবুক। দল আগে কথা বলুক, তারপর আমি ভাবব।
জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বহিষ্কৃতদের দলে ফেরানোর বিষয়টা দলীয় ফোরামের ব্যাপার। সেখানে আলোচনা হবে, সিদ্ধান্ত হবে। দফতরের মাধ্যমে তা জানানো হবে। আমার জানা মতে, এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের, মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘবে একটা বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য আমরা ঐক্য করার চেষ্টা করছি। সংলাপ করছি। এই আলোচনায় কার্যকার সাড়াও পাওয়া গেছে। তবে যারা আমাদের দল থেকে নানা সময়ে বিভিন্ন কারণে বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের নিয়ে দল এই মুহূর্তে খুব বেশি কিছু ভাবছে না। তিনি আরো বলেন, বহিষ্কৃত নেতারা যদি দলের কাছে আবেদন করেন, দল যদি বিবেচনা করে তাহলে সেটির একটা সমাধান হবে। যে কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন সেই ব্যাপারগুলো আর করবে না বলে নিশ্চয়তা দিলে দল বিবেচনা করবে। আগে ভুল স্বীকার করে আবেদন করতে হবে। আবেদন না করলে দল এই মুহূর্তে তাদের নিয়ে কিছু ভাবছে না বলেও জানান এই ভাইস চেয়ারম্যান।
বহিষ্কৃত নেতাদের ব্যাপারে বিএনপি কী ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের স্থায়ী কমিটিতে এই ব্যাপারে এখনো আলোচনা হয়নি। এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। নেতারা ফিরতে চাইলে সুযোগ দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা একটা সাংগাঠনিক বিষয়। আমাদের স্থায়ী কমিটি আছে। এসব ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হবে। তখন বলা যাবে। এর আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ