ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আলোচনার কেন্দ্রে মোমেন

এ ধরনের বক্তব্য বিরোধী দলের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার শামিল
প্রকাশনার সময়: ২০ আগস্ট ২০২২, ০৯:২৯

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের শব্দ বোমায় ‘বিরক্ত’ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজন নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিরক্তির কথা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের বক্তব্য শুনেছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন যেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে থামানো হয়। কারণ তিনি বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলছেন। ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরো দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা, যাদের মধ্যে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং একজন সাংগঠনিক সম্পাদক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। একজন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, আপা এসব কী হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী এসব বক্তব্য শুনেছেন, তবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে ড. মোমেনকে নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রীতিমতো বিব্রত। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, দলকে বিপদগ্রস্ত করছে বলেই অনেক আওয়ামী লীগ নেতা মনে করেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মধ্যেই রীতিমতো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, এর আগে তিনি বলেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো। তখন একটি প্রেক্ষাপট ছিল। এটিকে আমরা হাস্যরস হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন তিনি যেসমস্ত কথাবার্তা বলছেন তাতে সরকারের এবং দলের প্রচণ্ড ক্ষতি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন। ভারত সফরের আগে তিনি এ ধরনের মন্তব্য কেন করলেন? দ্বিতীয়, ওই নেতার মতে, কোনো নির্বাচনে ভারত কেন, কেউ ক্ষমতায় রাখতে পারে না। ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার একমাত্র মালিক হলো দেশের জনগণ। এ ধরনের বক্তব্য বিরোধী দলের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার শামিল। এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচন নিয়ে যে আন্তর্জাতিক চাপ আছে, সেই চাপকেই বাড়িয়ে দেবে। ড. মোমেনের এই বক্তব্যের আগে তিনি বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে বলে একটি মন্তব্য করেছিলেন। এই মন্তব্যের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন এবং মন্ত্রীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছিলেন। এর পরপরই ড. মোমেন তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আপনারা আমাকে খাইয়া ফালাইছেন। ধারণা করা হচ্ছিল এরপর মোমেন শান্ত হবেন এবং তার বিতর্কিত বক্তব্য বন্ধ হবে; কিন্তু সেটি হয়নি।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত সম্পর্কে তিনি যে ভাষায় যে মন্তব্য করেছেন তা অকূটনৈতিকসুলভ। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঢং কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নতজানু হয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন, এ সবই সরকারের জন্য ক্ষতি করেছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বক্তব্যটি আওয়ামী লীগের অন্তত দুইজন নেতার মতে একটি গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনা। এর মাধ্যমে একাধিক ক্ষতি হয়েছে। প্রথমত, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের নির্বাচনে যে প্রভাব বিস্তার হয় এবং নির্বাচনের যে কাউকে, যে কেউ জেতাতে পারে সেরকম একটি ধারণা জনগণ এবং বিশ্ব সমাজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তৃতীয়ত, এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এবং তার গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ নেতারা বিরক্ত এবং অনেকেই ক্ষুব্ধ।

অন্যদিকে ড. মোমেনের বক্তব্যে ভারতও বিব্রত। কারণ তিনি বলেছেন, আমি ভারতে গিয়ে বলেছি শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। ভারতের দূতাবাস থেকে এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভারতের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী ক’দিন আগেই সুস্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা এই অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি না। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত যখন এ রকম মন্তব্য করেন আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার কথা বলেন, তখন জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। ভারতের একাধিক কূটনীতিক মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে যখন একটি নতুন অধ্যায় সূচনা হতে যাচ্ছে, তখন সে সময় এ ধরনের বক্তব্য অত্যন্ত বিব্রতকর। কিন্তু ড. মোমেন এই বক্তব্যের পর এখন কী বলবেন, সেটি দেখার অপেক্ষায় আওয়ামী লীগ, ভারত এবং পুরো দেশবাসী।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ