মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মন্ত্রিত্ব ও আসন দুই-ই চায় শরিকরা

প্রকাশনার সময়: ২৪ জুলাই ২০২২, ১০:৩৮

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হতে ১৭ মাস বাকি থাকলেও রাজনীতিতে বইছে নির্বাচনি হাওয়া। ক্ষমতায় যেতে মরিয়া দেশের প্রধান দুই বড় রাজনৈতিক দল। বিশেষ করে দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে দলের পাল্লা ভারী করতে সংলাপ করে চলেছে পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা ছুটে গিয়ে কড়া নাড়ছে ছোট দলগুলোর অফিসে। টার্গেট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে বৃহত্তর ঐক্য গড়া। ক্ষমতার ভাগিদার করতে দিচ্ছেন নানা টোপও। আগামী সংসদ নির্বাচনের ভোট ও জোটের রাজনীতিতে ঘিরেই এই আয়োজন। ক্ষমতার রাজনীতিতে এতদিন গুরুত্বহীন থাকলেও এখন তাদের সঙ্গেই দরকষাকষিতে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে। চলমান সংলাপে যুগপৎ আন্দোলনের নানা করণীয় ও পরিকল্পনার পাশাপাশি আসন বণ্টন, মন্ত্রণালয় নিয়েও রীতিমতো দরকষাকষি করছে শরিক দলগুলো। যদিও কোনো আলোচনা এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি।

সূত্র জানায়, জোট রাজনীতির টানাটানিতে নানা হিসাব-নিকাশ কষছে ছোট দলগুলো। কোন জোটে গেলে কতটুকু রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে। দলের কতজন নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচনের টিকিট পাবে। কোনো মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেবে কিনা। এসব নিয়ে সংলাপে পাশাপাশিও চলছে আলোচনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এবার প্রত্যেক দল থেকেই বিএনপির কাছে ন্যূনতম দুটি আসন এবং একটি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। ছোটদলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দলের মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আসন চাহিদা আরো বেশি।

জানতে চাইলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ ভাসানী) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন বিএনপির শরিক হিসেবে আছি। সংলাপ করেছি, ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাব। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা দিয়েছেন, সেখানে আমাদের আগ্রহ আছে। এদেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে তাদের নিজস্ব সক্ষমতা নেই। তাই আমরাও করেছি, জোটে যোগ দিয়েছি।

আসন বণ্টন নিয়ে এখনো বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ন্যূনতম দুটি আসন ও একটি মন্ত্রণালয়ের জন্য দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেবো।

জোটের আরেক শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, সংলাপে আমাদের আলোচনা হয়েছে এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তারপর নির্বাচনের পর বিজয় হলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। তবে আসন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচিত হলে সবাই মিলে একটি সরকার গঠন করবে। আপাতত প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগে যখন আলোচনা হবে তখন এসব বিষয়ে কথাবার্তা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোট থেকে আসন দেয়া হয়নি ন্যাপ ভাসানীর, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপা। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি ওই নির্বাচনে ১০টি আসন চেয়েছিল। পেয়েছিল পাঁচটি, নাগরিক ঐক্য চারটি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি তিনটি চেয়ে একটি, কল্যাণ পার্টি দুটি, কাজী জাফরের জাতীয় পার্টি, এনপিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপির) ও জাগপার একাংশের সভাপতি তাসমিয়া প্রধান পেয়েছিল একটি আসন। তবে জোটসঙ্গী জামায়াতের নিবন্ধন না থাকলেও আসন পেয়েছিল শরিকদের মধ্যে সবোর্চ্চ ১৭টি। আর ২০২১ সালে ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসা জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম তিনটি ও খেলাফত মজলিস পেয়েছিল একটি আসন। তবে আগামী নির্বাচন ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমানের ঘোষিত জাতীয় সরকার প্রসঙ্গে বিস্তারিত এখনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা।

জানা গেছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কখনো গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে আবার কখনো দলগুলোর কার্যালয়ে বৈঠকে বসছেন। সব দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে যেসব প্রস্তাব আসবে, সেগুলোর সমন্বয়ে তৈরি করা হবে আন্দোলনের রূপরেখা। সংলাপ শেষে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছালে, নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করার জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে। সেখানে সব দলের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। দলীয় সূত্র মতে, গত ২৩ মে স্থায়ী কমিটির সভায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়নে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সেই অনুযায়ী ২৪ মে মাহমুদুর রহমান মান্নার দল নাগরিক ঐক্য কার্যালয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু করে বিএনপি। এরপর বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ-ভাসানী) সঙ্গে সংলাপ হয়। ঈদুল আযহা ও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কারণে একমাস বন্ধ থাকার পর সবশেষ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ও বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক লীগের সঙ্গে সংলাপে বসে বিএনপি। সব দলই নির্বাচনকালে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নামতে ‘একমত’ পোষণ করেছে। চলতি মাসে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ হতে পারে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের ভোট ও আসন বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা করিনি। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসন চেয়েছিলাম একটি পেয়েছি। লেবার পার্টি সব সময়ই যৌক্তিক বিষয়টি দাবি করে। এবারও সময় মতো দলীয় ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে বিএনপির কাছে যৌক্তিক দাবি তুলে ধরা হবে। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির চেয়ারম্যান ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে জোটে রয়েছি। বিএনপির সঙ্গে সংলাপও করেছি। সংলাপে আন্দোলন, সংগ্রাম, নির্বাচন, সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির কাছে আসন-মন্ত্রণালয় দাবি প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আগে নির্বাচন হোক, এমপি হই তারপর দেখা যাবে। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন ইস্যুতে সবাই যুগপৎ আন্দোলনে যেতে একমত হয়েছেন। ক্ষমতা থেকে কেউ নিজে নিজে যায় না। তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা তাঁরা করছেন। সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ইত্যাদি দাবি না মানলে রাজপথেই একমাত্র সমাধান।

তিনি বলেন, তারা নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। সরকারের ওপর মানুষের আস্থা নেই। কারণ তারা নির্বাচিত নয়। তাদের লক্ষ্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে পোক্ত করতে আবারও আরেকটা নির্বাচন একই কায়দায় করতে চায় তারা। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খুব পরিস্কার বলেছেন, নির্বাচনে যদি আমরা জয়ী হয়ে আসতে পারি তাহলে আন্দোলনে-সংগ্রামে অংশগ্রহনকারী দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব। সেই জাতীয় সরকার জনগনের আশা পূরণ করার জন্য সকল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এগিয়ে যাবে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ