ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এটা স্রেফ ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট: বিএনপি

প্রকাশনার সময়: ১১ জুন ২০২২, ২০:৫৮ | আপডেট: ১১ জুন ২০২২, ২১:২৩

জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে 'বাস্তবতা বর্জিত' অভিহিত করে বিএনপি বলেছে, এটা কেবল সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যেই করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই বাজেট কোনো অর্থেই সাধারণ মানুষের নয়। এটা স্রেফ ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট। এটি কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।

শনিবার (১১ জুন) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া দেন।

ফখরুল বলেন, পাচারকারীরদের অর্থকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা বিদেশে ভোগ করার বৈধ্যতাতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আরো পরিষ্কার অর্থে বললে, সরকারের লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী-স্বজনদের অর্থপাচার করার সুযোগ করে দিতেই এটা করা হয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহৃত চাল, ডাল, লবণ, চিনি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য হ্রাসের কোনো কার্য্করী কৌশল না নিলেই শুধুমাত্র নিজেদের বিত্ত-বৈভব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই বাজেট প্রণীত হয়েছে।

পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরাতে ‘কর ছাড়’ এর প্রস্তাবকে আইনের পরিপন্থী অভিহিত করে তিনি বলেন, এই প্রস্তাব কেবল অনৈতিক নয়, এটা রীতিমতো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে ক্ষমা ঘোষণার শামিল। এতে বর্তমানে চলমান অর্থপাচারের মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অর্থপাচারকারীরা আরো উৎসাহিত হবে, টাকা আরো পাচার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। এটা অন্যায়, অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী পদক্ষেপ।

‘যেখানে পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা এবং তাদের বিরুদ্ধে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনাই আইনগতভাবে প্রত্যাশিত সেখানে পাচারকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের তথাকথিত জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অসাংবিধানিক। গত ১৪ বছরে সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করে নিয়েছে। এখন এই ঘোষণার মাধ্যমে সরকার ওইসব পাচারকারীর অবৈধ অর্থ বৈধ করার ঢালাও সুযোগ দিলো, যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক যেকোনো মানদণ্ডে অগ্রহণযোগ্য। আমরা পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’

একই সঙ্গে অবিলম্বে অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই বাজেট হচ্ছে ‘অব দ্যা বিজনেস ম্যান, বাই দ্যা বিজসেন ম্যান এবং ফর দ্যা বিজনেস ম্যান।’ অর্থাৎ এটি ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট। জনকল্যাণের কোনো কথা এতে স্থান পায়নি। মূল্যস্ফীতিতে জনমানুষের যখন নাভিশ্বাস, তাদের স্বস্তি দেওয়ার কোনো কথা নেই। করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি, স্বস্তি পাননি মধ্যবিত্তরা।বাজেটে যেসব পণ্যের আমদানি কর বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর ভোক্তা মূলত মধ্যবিত্তরাই।

এই বিএনপি নেতা বলেন, মেডিটেশনের ওপরও ৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। অতিদরিদ্রদের কাছে ১০টাকা দরে যে সামন্য কিছু চাল বিক্রি হতো তার দাম ১৫ টাকা করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সয়াবিন তেল এখন সরকারই নির্ধারণ করে দিলো ২০৫ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় এ নিয়ে দুই দফা সয়াবিন তেলের দাম বাড়লো।

প্রস্তাবিত এই বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিখাতে ব্যয় বরাদ্দ যথেষ্ট নয় বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

ডিজিটাল মুদ্রা চালুর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটি একান্তই রেগুলেটরি ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির বিষয়। অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেগুলেটরি এখতিয়ারে হাত দিতে পারেন না। অথচ দুষ্টচক্রের কবলে বন্দি ব্যাংকখাত নিয়ে অর্থমন্ত্রী কোনো কথা বাজেট বক্তৃতায় বলেনি। মুদ্রাস্ফীতির কথা স্বীকার করলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, বলা হচ্ছে, দুই বছরে করোনার প্রেক্ষিতে লাখো হাজার টাকার ওপরে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের প্রশ্ন সে টাকা গেল কই? তার মধ্যে একটা টাকাও কী পরিশোধ হয়েছে? জনগণ জানতে চায়। শুনি রপ্তানি নাকি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেন? কারা কারা প্রণোদনা পেয়েছে এবং এই পর্যন্ত কী পরিমাণ টাকা পরিশোধ করেছে তার ওপরে সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগণ।

এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ সবই গতানুগতিক। করোনাকালে এই খাতে যেসব দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে সেগুলো পূরণের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ দিকনির্দেশনা বাজেটে নেই।

তিনি বলেন, করোনাকালে সরকারের মন্ত্রীরা যেসব প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়েছিলেন, বাজেটে তার প্রতিফলন হয়নি। আমরা মনে করি, বাজেটে স্বাস্থ্য সেক্টরকে চরমভাবে অবহেলা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেক্টরে বরাদ্দ কমেছে। গত বছর বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। আর এ বছরে বাজেটে দেখানো হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সামনের অর্থবছরে বাড়ানো হয়েছে ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। যেটা আসলে সঠিক নয়। কারণ ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকার মধ্যে করোনা মোকাবিলার জন্য রাখা হয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকা। তাহলে ৫ হাজার কোটি বাদ দিলে দেখা যাবে যে, প্রকৃতপক্ষে ৩১ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি কাজ করছে না। এখন কাজ করছে আওয়ামী ইকোনমিক মডেল, তাদের উপকার করার জন্য, তাদের দুর্নীতির জন্য, তাদের পকেটে টাকা নেওয়ার জন্য। এভাবে দেশের অর্থনীতিটা চলছে।

এই বিএনপি নেতা বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকাগুলো নিচ্ছে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে। এসব টাকা থেকে তারা (ক্ষমতাসীনরা) কীভাবে সুবিধা নেবে সেটি মাথায় রেখে একটা অর্থনৈতিক মডেল তারা তৈরি করেছে। সেই মডেলের ভিত্তিতে আজকের বাজেটটা তৈরি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান ও নাসের রহমান উপস্থিত ছিলেন।

নয়া শতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ