ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন

আমন্ত্রণ পেলে ভাববে বিএনপি

প্রকাশনার সময়: ০৯ জুন ২০২২, ০৯:৩৩

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আগামী ২৫ জুন। সেতুর নির্মাণকাজ শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে চলছে কথার লড়াই। দুই দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য কম হয়নি। প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে বিএনপি নেতারা।

বিএনপি বলছে, পদ্মা সেতু জনগণের টাকায় হয়েছে। এটা কোনো দলের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে শুধু দুর্নীতি ও লুটপাট করতেই। এ কারণেই ২০১৩ সালে পদ্মা সেতু থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। অন্যান্য দেশের তুলনায় কিলোমিটারপ্রতি ব্যয়ও হয়েছে কয়েকগুণ। পাল্টা জবাবে আওয়ামী লীগ বলছে, পদ্মা সেতুর সফলতা দেখে বিএনপির ‘গায়ে জ্বালা’ ধরেছে। উদ্বোধনের কথা শুনলেই বিএনপির মুখ কালো হয়ে যায়। যদিও রাজনৈতিক বাকযুদ্ধের মধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আইনমন্ত্রীও বলেছেন, খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণে আইনগত বাধা নেই। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা গুঞ্জন। অনেকের প্রশ্ন, পদ্মা সেতুর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি যাবেন কিনা?

বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতারা বলছেন, আমন্ত্রণ পেলে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সময়মতো প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তবে তাদের অভিযোগ, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিএনপির উপস্থিতি সরকার চায় না। বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বিএনপির পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাওয়ার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কোনো ইচ্ছা যে দলটির নেই তা অনেকের বক্তব্যই স্পষ্ট। তাদের দাবি, এই সেতু নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে। যত টাকা ব্যয় হয়েছে, তার চেয়ে কম টাকায় করা সম্ভব ছিল। আমন্ত্রণ পেলে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির যোগ দেয়া উচিত হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের যে গণতন্ত্রহীন পরিবেশ করেছে, এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতাদের এভাবে নিজস্ব মতামত দেয়া কঠিন। তবে দলীয় হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই আমরা সমর্থন করি।

খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ড বলেন, এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডে বিএনপির যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার এত রাজনীতি করছে কেন? বিএনপি সরকারের সময় যমুনা সেতু হয়েছে, আমরা সেগুলো নিয়ে এত মাতামাতি করিনি। ক্যাম্পাসে তাদের ছাত্র সংগঠন যে পরিস্থিতি করেছে, অনুষ্ঠানে গেলেও এ ধরনের পরিস্থিতি হবে না, তার নিশ্চয়তা কী? আমরা এ ধরনের স্ট্যান্টবাজিমূলক বক্তব্যকে গুরুত্ব দেই না। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই। আগে আমন্ত্রণ আসুক, তারপর দেখা যাবে। দলীয় সিদ্ধান্ত মতে যা হয়, সেটা সময়মতো দেশবাসী জানবে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, পদ্মা সেতুর মতো জাতীয় ইস্যুতে অবশ্যই বিএনপি থাকতে চায়। তবে সরকার সেই পরিবেশ নষ্ট করেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের নেত্রী, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশের অধিকাংশ মানুষের আবেগ-অনুভূতি খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তাতে প্রমাণ হয় সরকার চায় না বিএনপি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকুক।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা আমি বলতে পারব না। এটা তো পার্টির সিদ্ধান্ত। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন বিশ্বব্যাংক সরে গেল কেন? সে তদন্ত কেউ করে নাই, তাদের বিচার হয় নাই। তারপরে তিন থেকে চার গুণ খরচ বেশি করা হয়েছে। এই যে, তিনগুণ খরচ বেশি করা হয়েছে এর হিসাব কোথায়? বাকি টাকা গেল কোথায়? এগুলো হিসাব-নিকাশের ব্যাপার আছে। এই টাকায় আরো চারটি ব্রিজ করা যেত। সরকারের দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষের ডাকাতি হয়েছে। যমুনা ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া সেদিন তারা হরতাল দিয়েছেন। যমুনা সেতুর টোল আর পদ্মা সেতুর টোল অনেক পার্থক্য। এগুলো নিয়ে তো আজ অনেক প্রশ্ন উঠেছে, জনগণের কাছে এর উত্তর দিতে হবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের টাকা নিয়ে এক একটা প্রজেক্ট এর তিন-চার গুণ বেশি খরচ দেখানো হচ্ছে। সে টাকা পাচার করা হচ্ছে আর জনগণকে উন্নয়নের কথা বলছে। আজকে বাংলাদেশের রিজার্ভের ওপর প্রেসার আসছে। সব প্রজেক্টে অতিরিক্ত খরচ করা হচ্ছে, বিদেশে পাচার করা হচ্ছে— এ জন্য আজকে জনগণের ওপর চাপ পড়ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা আমাদের দলের বিষয়। আমন্ত্রণ দিলে দলের সিদ্ধান্ত হবে, তারপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যা হওয়ার হবে। দল সময়মতো প্রতিক্রিয়া দেবে। আমার তো এখানে কোনো বিষয় না, আর আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো মন্তব্য করতেও চাই না।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ