ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভাঙছে বাম জোট

প্রকাশনার সময়: ১৪ মে ২০২২, ১১:৩৩

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সাতটি রাজনৈতিক দল মিলে গঠন হচ্ছে নতুন জোট। প্রাথমিকভাবে নতুন জোটের নাম ঠিক করা হয়েছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। চলতি মাসেই আসতে পারে ঘোষণা। আর নতুন এই জোটকে ঘিরে ভাঙনের সুর বাজছে পুরোনো আরেকটি বাম গণতান্ত্রিক জোটে। কারণ নতুন এই জোট গঠনের উদ্যোগে যুক্ত আছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম দুই শরিক দল— বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন। এ বিষয়ে বাম জোটের শীর্ষ নেতারা বলছেন, একসঙ্গে দুই জোটে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এটি হবে অনৈতিক কাজ। ফলে ওই দুই দলকে হয় বাম গণতান্ত্রিক জোটে থাকতে হবে, না হয় জোট ছেড়ে তাদের নতুন জোটে যেতে হবে।

বাম জোট সূত্রে জানা যায়, গত ৯ মে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির কাছে নতুন জোট গঠনের বিষয়ে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, কেন বাম জোট থাকতে নতুন জোট গঠন হচ্ছে? তারা বলছেন, এটি বাম জোটের কোনো বিকল্প জোট নয়। এটি একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ। ভোটাধিকার, অবাধ নির্বাচন ও সর্বোপরি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বৃহত্তর ঐক্যের অংশ হিসেবে সাতদলীয় মঞ্চের উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছেন। এ উদ্যোগে চাইলে বাম জোটের অন্য শরিকরাও যুক্ত হতে পারে।

জোটের একাধিক নেতা বলেন, বিগত কয়েক বছর বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি ও তাদের মিত্র জোটের শরিকদের একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাদের বিভিন্ন আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে আসছে দল দুটির শীর্ষ নেতারা। সেটি নিয়েও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। তবে তারা এখন বাম জোটের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে নতুন এ জোটকে। এখানে বাম জোটের অন্য শরিকদের আপত্তি।

অবশ্য তারা এও বলছেন, গত ৯ মে’র বৈঠকে সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকির বক্তব্য এবং মনোভাবে বোঝা গেছে, তারা বাম জোট ছেড়ে নতুন ওই রাজনৈতিক মঞ্চ বা জোট যেটাই হোক না কেন, সেখানে চলে যাবেন বলেও জানান ওইসব নেতা।

সিপিবি ও বাসদের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা বলেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন কেন বাম জোটে থেকে অন্য জোটে যাবে, সেটিও পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। তারা যেন সিদ্ধান্ত জানায় কোন জোটে যাবে বা থাকবে। আর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, সাত দলের রাজনৈতিক মঞ্চটি হচ্ছে এবং তারা সেখানেই কনটিনিউ করবে। তবে ওই মঞ্চ কোনো কিছু করার ক্ষমতা রাখবে বলে মনে হয় না।

জানতে চাইলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, একসঙ্গে দুটি জোটে থাকা তো সম্ভব না। এটি অনৈতিক কাজও বটে। এখন কেউ যদি মনে করে তারা বাম জোটে থাকবে না, সেই সুযোগও আছে। তিনি আরো বলেন, আমরা বর্তমান দুঃশাসনের বিপরীতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আছি। সেই লক্ষ্যে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর আন্দোলন আরো জোরদারের চেষ্টা চলছে। এখন তারা যদি এ জোটে না থেকে নতুন জোটে যায় তাহলে আমাদের কিছুই করার নাই। তবে একসঙ্গে দুই জোটে থাকার সুযোগ নাই। তাদের যে কোনো একটি জোটকে বেছে নিতে হবে বলেও জানান প্রিন্স। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাম গণতান্ত্রিক জোটের একটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা বলেন, আগামী ২৩ মে নতুন এ রাজনৈতিক জোটের বৈঠক আছে। ওই বৈঠকের পর আবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠক ডাকা হবে। তখন ওই দুই দলকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বলা হবে। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আসলে তারা কোন জোটে থাকবে। আমরা তাদের জানিয়ে দেব একসঙ্গে দুই জোটে থাকা যাবে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং একটি অন্তর্বতীকালীন সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে একমত হয়েছেন বাম দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে সাত দলের যে রাজনৈতিক মঞ্চ হয়েছে, সেটি বাম জোটের বিকল্প কোনো শক্তি নয়। এটি একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ। এখন সেটি যদি কোনো রাজনৈতিক জোটে রূপ নেয়, তাহলে আমরা নিজেরাই বাম জোটের সদস্যপদ স্থগিত বা বাতিল করে দেব। এটি নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ‘বাম ঐক্য না বৃহত্তর ঐক্য’ এ নিয়ে বাম জোটে মতপার্থক্য আছে। তবে গণসংহতি আন্দোলন বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে। ভোটাধিকার এবং দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য যারা ঐক্যবদ্ধ হবে, তারা সবাই মিলে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টা অব্যাহত আছে। ভোটারবিহীন সরকারের পতন, সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

জানতে চাইলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে, একসঙ্গে দুইটি রাজনৈতিক মঞ্চে থাকা যাবে না। এটি যেমন সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী, তেমনি অনৈতিক কাজও। বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনও বিষয়টি জানে। এখন দেখার বিষয়, তারা নতুন রাজনৈতিক মঞ্চে যায় কিনা। যদি তারা নতুন জোটে যায় তাহলে পরে বাম জোটের যে সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার, তা নেয়া হবে।

জানা যায়, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি সামনে রেখে সাতটি দল মিলে একটি রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দলগুলো হচ্ছে—জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। আপাতত সাত দল থাকলেও আগামীতে দলের পরিধি আরো বাড়াতে পারে। আগামী ২৩ মে নতুন এই জোটের পরবর্তী বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই দিনই আসতে জোট গঠনের চূড়ান্ত ঘোষণা।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ