ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক

এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে!

প্রকাশনার সময়: ১০ মে ২০২২, ১৫:৩২

২০ দলীয় জোট বিএনপির নির্বাচনি আদর্শিক জোট। দীর্ঘদিন ধরে জোটের ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রম নেই। একসঙ্গে পালন করছে না কোনো কর্মসূচি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অনুপস্থিতির কারণে জোটের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হলেও বাস্তবতা হচ্ছে ভোটে শরিক দল জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক প্রকাশ্যে চললে বদনাম হবে। তারপরেও ২২ বছরের সম্পর্ক দু’দলের মধ্যে এতটাই গভীর যে— ইচ্ছে করলেই বিএনপি বা জামায়াত কেউ কাউকে ছাড়তে পারছে না।

জামায়াত ইস্যুতে আপত্তি থাকায় সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তহীনতায় ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতেও যেতে পারছে না বিএনপি। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য যে কর্মসূচি প্রয়োজন হবে তা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে জোটবদ্ধ কর্মসূচিতে না রাখা হলে জোটে থেকে প্রয়োজনে একক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত জামায়াতের। মোটাদাগে— তারাও সহজে বিএনপিকে ছাড়বে না, অন্যদিকে বিএনপিও জামায়াতকে ছাড়তে পারবে না বলে বিশ্বাস দলটির নেতাদের।

বিএনপির একাধিক নীতি-নির্ধারক মনে করছেন, জামায়াত বিএনপির রাজনীতিতে এখন গলার-কাঁটা। তাই বিএনপিকে সামনে অগ্রসর হতে হলে জামায়াতকে ছাড়াই পথ হাঁটতে হবে। অন্যথায় জামায়াত একদিন বিএনপির রাজনীতির জন্য বুমেরাং হবে।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘রাজনীতিতে কোনো সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত নয়, নানা মেরুকরণ ঘটে। পরিবেশ পরিস্থিতি ও কৌশলগত কারণেই অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্তেই কিছু পরিবর্তন আসে। বিএনপির সঙ্গে সখ্য রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি ‘এক নেতার এক দল’ যাদের কোনো জনভিত্তি নেই তারাও নির্বাচন প্রসঙ্গে স্বার্থের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে সমালোচনায় বিতর্ক সৃষ্টি করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য শুধু বিএনপিই নয়, কখনো কখনো সরকারের কাছেও নিজেদের গুরুত্ব তুলে ধরতে পিছপা হচ্ছে না। তবে যদি জোট সম্প্রসারিত হয় বা নিজ নিজ প্ল্যাটফর্মে থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়, সেক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই।’

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ নানা কারণে বিতর্কিত জামায়াতে ইসলামী। বর্তমানে দলটির রাজনৈতিক নিবন্ধন আইনি জটিলতায় ঝুলে আছে। গত প্রায় তিন বছর ধরেই বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে নেই জামায়াতে ইসলামী। যদিও সম্প্রতি প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির অনশন কর্মসূচিতে জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। এরপর থেকে বিএনপির তৃণমূল নেতাদের ভাষ্য— বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই সরকার জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপির কর্মসূচিতে পরিকল্পিতভাবে ঠেলে দিচ্ছে!

দলীয় সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময় জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোট অক্ষুণ্ন রেখেছিল বিএনপি। তবে এবার বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে জামায়াত ইস্যুতে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে সমমনা দলগুলো। ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমির একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুবরণকারী গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠনের ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। পরে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ‘১৮ দলীয় জোটে’ রূপ পায়। পর্যায়ক্রমে ২০ দলীয় জোট হিসেবে সক্রিয় ছিল।

সমমনা সরকারবিরোধী কয়েকটি দলের নেতাদের ভাষ্য— জামায়াত ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান জানার পরই তারা বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে অগ্রসর হবে। শুধু তাই নয়, এমনকি বিএনপিতেও জামায়াত ইস্যুতে রয়েছে ভিন্নমত ও অবস্থান।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘জামায়াত কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল নয়, সরকারও তাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করেনি। তাহলে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের নির্বাচনি জোট দোষের কিছু নয়। বরং আজ যারা জামায়াতকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে তাদের সঙ্গেও একসময় জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে রাজপথে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আসলে ক্ষমতাসীনদের আতঙ্কের নাম বিএনপি। ফলে বিএনপির সঙ্গে যারাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ করবে তাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যাচার ও বিতর্ক তৈরি করা সরকারের এজেন্ডা হিসেবে রাখা হয়েছে।’

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মসূচি ও কৌশল নির্ধারণের প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘যুগপৎ’ কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে কাজ করছে দলটি দায়িত্বশীল নেতারা।

সংশ্লিষ্ট নেতারা মনে করছেন, আপাতত ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ব্যানারে জোটবদ্ধভাবে কোনো কর্মসূচি পালন করা হবে না। জোটবদ্ধভাবে কর্মসূচি না দেয়ার সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য বলেন, শুধু মুখে বললেই হবে না! বাস্তবতা হচ্ছে শত প্রতিকূলতার পরও যেহেতু পিছপা হয়নি তাই এই মুহূর্তে কেন জামায়াত জোট ছাড়বে। জোটপ্রধান খালেদা জিয়ার বার্তা ছাড়া জামায়াত জোট ছাড়বে না। আমরা বিএনপির পরীক্ষিত বন্ধু যা বিএনপি চেয়ারপারসন অবগত রয়েছে। তাই খালেদা জিয়ার জীবদ্দশায় বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারাও ভালো করে অবগত রয়েছেন যে, দীর্ঘদিনের নির্বাচনি জোট সহযোগী জামায়াতকে ছেড়ে দিতে চাইলেই সম্ভব হবে নয়।

তিনি বলেন, ‘মূলকথা হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটনা না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিবে না। বরং আগামী দিনে ইসলামি সমমনা দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সরকারবিরোধী প্ল্যাটফর্মে কীভাবে নিয়ে আসা যায় সে ব্যাপারে আমাদের কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে।

বিরোধীদের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সরকার হটানোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করা হবে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন তো নয়ই— দেশের যে

বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন সময় এসেছে সরকারকে ‘না’ বলা। এ সরকারকে বিদায় দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষের যে ঐক্যবদ্ধ আকাঙ্ক্ষা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা, দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং এদেশের মানুষের মালিকানা তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া— এর জন্য সব গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক শক্তি, রাজনৈতিক শক্তি, দল ও ব্যক্তিকে আমরা আহ্বান জানাব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার পতনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য যে কর্মসূচি প্রয়োজন হবে সে বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ