ঈদ শেষে রাজনীতিতে মিলছে উত্তাপের আভাস। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মধ্যে শুরু হচ্ছে নানা মেরুকরণের খেলা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি দলই মাঠ দখলে নেয়া বা রাখার জন্য নিচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের মাধ্যমে দল গুছিয়ে নেয়ার কৌশল নিয়ে মাঠে থাকবে। অন্যদিকে, বিএনপির মনোযোগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মোর্চা গঠনে।
যদিও আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাকি এখনো দেড় বছরের বেশি। তারপরেও নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। চলছে নানা রকম মেরুকরণ। গত নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল। তবে তাতে আখরে লাভ হয়নি বিএনপির। এমন অভিজ্ঞতায় বিএনপি এবার নতুন ধরনের মেরুকরণের কথা ভাবছে। সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং আন্দোলনের পরে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব সামনে নিয়ে এসেছে দলটি। যদিও এখন পর্যন্ত জাতীয় সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে পারেনি।
বিশ্লেষকদের দাবি— মূলত ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জাতীয় পার্টিকে বিএনপিমুখী করতেই জাতীয় সরকারের মতো রাজনৈতিক টোপ নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। ডান-বাম ঘরোনার অন্যান্য ছোট দলগুলোর জন্যও নির্বাচন শেষে ‘জাতীয় সরকার গঠন’ লোভনীয় হবে বলে ধারণা দলটির।একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপি নির্বাচনকেন্দ্রিক পুরোনো হিসেবে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে যদি জাতীয় পার্টি বা জামায়াত যুক্ত হয়, তাহলে সেই দলের বিজয় সুনিশ্চিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোট গঠন করে জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়েছিল। অন্যদিকে, জামায়াত-বিএনপির জোট হয়েছিল কিন্তু সেবার সাধারণ কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয় এমন ভোটারদের বিপুল সমর্থন পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। যার ফলে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল।
অবশ্য ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন দু’টির হিসাব-নিকাশ ছিল আলাদা। এর আগে ১৯৯১ সালের নির্বাচন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নির্বাচনে জামায়াত বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিল, জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করেছিল। আবার ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াত আলাদাভাবে নির্বাচন করেছিল। জাতীয় পার্টিও আলাদাভাবে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিল। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ-বিএনপি যদি সরাসরি নির্বাচন করে কোনো দলের সমর্থন না নেয় তাহলে আওয়ামী লীগের জয় অবশ্যম্ভাবী। আওয়ামী লীগ যদি জাতীয় পার্টি-জামায়াতের একজনকে সঙ্গে নেয় তাহলে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত। বিএনপি যদি আওয়ামী লীগকে একা করে দিয়ে জাতীয় পার্টি বা জামায়াত— যে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন পায় তাহলে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। এই সহজ রাজনৈতিক হিসাবের কারণে জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ত্যাগ করছে না বিএনপি। বিএনপি জানে যে, ভোটের মাঠে জামায়াতের একটা ভোটব্যাংক রয়েছে এবং সেই ভোটব্যাংকটা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য জরুরি। এ কারণেই দীর্ঘ টানাপড়েন, চড়াই-উৎরাইয়ের পরও বিএনপি জামায়াতকে ত্যাগ করছে না। এমন বাস্তবতায় বড় ধরনের সমালোচনা সত্ত্বেও গত নির্বাচনে জামায়াতকে ২০টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি।
বিএনপির কাছে এ ধরনেরও হিসাব আছে যে, জামায়াত সম্প্রতি আরো শক্তিশালী হয়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর জামায়াত এখন তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠন নীরবে বিস্তৃত করছে।
জাতীয় পার্টি ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি পার্টনার মহাজোট। তবে সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন , জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে কি থাকবে না সেটি নিশ্চিত নয়। তিনি ইঙ্গিত করছেন আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচনও করতে পারে। আর এটি রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। জাতীয় পার্টি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমর্থন না করে তাহলে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি নেতিবাচক দিক হিসেবে দেখা হতে পারে। আবার জাতীয় পার্টি যদি বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধে তাহলে সেই নির্বাচনটি আওয়ামী লীগের জন্য একটু প্রতিকূল হয়ে উঠতে পারে। জাতীয় পার্টি এবং জামায়াত আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পকার্ড। এখন দেখার বিষয় যে, দল দুটি আগামী নির্বাচনে কোন পক্ষে যায়।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ