জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৭ মাস আগে। এর মধ্যে এখনো হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর পর মেয়াদোত্তীর্ণ যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ গঠন নিয়ে চলছে তোড়জোড়। বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে নাকি গঠন করা হবে নতুনভাবে আহ্বায়ক কমিটি এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কারণ ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপরই আলোচনায় আসছে যুবদলের নতুন কমিটি নিয়ে। ফলে শিগগিরই নতুন কমিটি বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেতে যাচ্ছে যুবদল। নতুন কমিটি হলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন আসারও আভাস পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে সংগঠনের নেতৃত্বের খরা কাটছে। এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বেশ কয়েক যুবদল নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, কেউ কেউ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পক্ষে। আবার কেউ দাবি করেছেন নতুন কমিটির।
এক পক্ষ বলছেন, ছাত্রদল করা অনেকেই রয়েছেন যাদের কোনো পদ-পদবি নেই। দীর্ঘদিন যুবদলের ব্যানারে কাজ করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় অনেকেই পরিচয় দিতে পারছেন না। পূর্ণাঙ্গ হলে অন্তত কোনো পরিচয় নিয়ে বের হতে পারবেন তারা। আরেক পক্ষ বলছে, ছাত্রদলের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা হলেই ভালো হবে। নতুন কমিটি হলে সংগঠনের স্থবিরতা কেটে যাবে এবং নেতাকর্মীরা চাঙা হবেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে বর্তমান নেতৃত্ব আরো দীর্ঘায়িত হবে। নতুন কমিটি হলে জোরালোভাবে আলোচনায় রয়েছে— বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, যুগ্ম সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের বিদায়ী সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর— এই পাঁচজন থেকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক-সদস্য সচিব করা হতে পারে। তবে বর্তমান নেতৃত্বের বাইরে সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, হাবিবুর রশীদ হাবিব, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান মিন্টু ও আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে নিয়েও আলোচনা আছে বিএনপির ভেতরে-বাইরে। এ ছাড়াও যুবদল নেতা আবদুল খালেক হাওলাদার, গোলাম রাব্বানী, মাহবুবুবল হাসান ভূইয়া পিস্কু, তরিকুল ইসলাম বনি ও আলী আকবর চুন্নুর কথাও বলছেন কেউ কেউ। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ আর নতুন যাই হোক এতে ত্যাগীদেরই মূল্যায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ‘সুপার ফাইভ’ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন পাঁচ সদস্যের ওই কমিটিকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। তিন বছর মেয়াদি ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। করোনাসহ নানা প্রতিকূলতা সামনে এনে ঝুলিয়ে রাখা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এর মধ্যে বিএনপির অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর ছাত্রদলের পুরোনো কমিটি ভেঙে দিয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দলীয় সূতমতে, দীর্ঘদিন ধরে যুবদলের পদবঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবরে একাধিকবার দাবি তুলেছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার জন্য। সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের একটি অংশ সেই তৎপরতাই চালাচ্ছেন। সম্প্রতি যুবদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র কয়েক নেতার সঙ্গে স্কাইপি বৈঠকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে কথা বলেছেন তারেক রহমান। তারই ফল হিসেবে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে তা নিয়েও রয়েছে ধোয়াশা। ছাত্রদলের মতোই আসতে পারে নতুন চমক। সংগঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
যুবদলের একাধিক নেতা জানান, গত বছরের ২১ আগস্ট ঢাকা মহানগর যুবদলের দুই শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে এই কমিটির ব্যাপারে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা কিছুই জানতেন না। এতে বোঝা যায়, তারেক রহমান বর্তমান নেতৃত্বের ওপর অসন্তুষ্ট। যদিও তিনি সরাসরি তা বুঝতে দেননি। এ জন্যই যে কোনো সময় যুবদলে নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে। আর সেটা আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ