আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তেই ‘অনড়’ মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ফলে ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা বলছে দলটি। ভোটে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনকে (ইভিএম) ‘ভোট চুরি’র যন্ত্র আখ্যা দিয়ে এর বিপক্ষে কঠোর অবস্থানেও দলটি। দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, এ নিয়ে দোলাচলে নেতাকর্মীরাও।
তবে নির্বাচনে লড়তে মুখিয়ে মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কুসহ কুমিল্লার বিএনপির হেভিওয়েট দুই-তিন নেতা। ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়তে দলীয়ভাবে মনোনয়ন চাইবেন তারা। এদিকে, দল অংশ নিলে মনোনয়ন চাইবে, না হলে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন মেয়র সাক্কু।
বিএনপির একাধিক নীতি-নির্ধারক বলছেন, কিসের নির্বাচন। কিসের নির্বাচন কমিশন। সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনা করে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান। অবশ্য এও বলছেন, নির্বাচনে অংশ না নেয়ার আগের সিদ্ধান্তেই অনড় বিএনপির হাইকমান্ড। জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘কিসের নির্বাচন কমিশন, কিসের নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনও বিশ্বাস করি না, নির্বাচনও বিশ্বাস করি না। নির্বাচন বলতে বাংলাদেশে কোনো কিছু নেই। আসন্ন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়ার বিষয়ে দলগতভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘নতুন ইসির প্রতি বাংলাদেশের জনগণের কোনো বিশ্বাস নেই। ইসি এবং নির্বাচনের ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। সুতরাং এ নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।’ জানতে চাইলে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। এখন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ আছে। এখন দল যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, তাহলে ভিন্ন কথা। মাত্র তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইভিএমে বিএনপি ভোটে যাবে কিনা, তাও দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
জানা যায়, ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি ইভিএমের কারণে কুসিকে প্রথম নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে মেয়র হয়েছিলেন মো. মনিরুল হক সাক্কু। পরে দল তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেয়। মনিরুল আবারো দলে বহাল হন। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ দ্বিতীয় নির্বাচনে মনিরুল দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মেয়র পদে জয়ী হন। ১০ বছর ধরে এই সিটি দখলে বিএনপির। সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর থেকেই রাজত্ব করছেন বিএনপি নেতা মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। এক দশক পর আবারো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে ইভিএমে। ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১৫ জুন। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন ১৭ মে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১৯ মে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষ দিন ২৬ মে। প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২৭ মে। এমতাবস্থায় বিএনপি ইভিএমের এই নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, তা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ক্ষেত্রে অনড় রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরও নির্বাচন করতে আগ্রহী বর্তমান মেয়র মো. মনিরুল হক, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য কাউসার জামান বাপ্পী, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবে তারা। দল নির্বাচনে না গেলে মনিরুল অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। তবে দলীয় কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় থাকায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সাক্কুকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কাউসার জামান বলেন, দল ক্লিন ইমেজের প্রার্থী চায়। নেতাকর্মীরাও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবে। ইভিএম নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি সিদ্ধান্ত নেবে। আমি দলের বাইরে যাব না। আর নিজাম উদ্দিন কায়সার জানান, নেতাকর্মীদের চাহিদার কারণে আমি মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী। নেতাকর্মীরাও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। আশা করি, আমি মনোনয়ন পাব। আর সাক্কু সাহেব বিএনপির নামে ভাঙিয়ে মেয়র হয়েছেন। এবার সেই সুযোগ নেই। তিনি শেখ হাসিনাকে পা ধরে সালাম করেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন।
বর্তমান মেয়র মো. মনিরুল হক বলেন, আমি দুইবারের মেয়র, আমারও কিছু ফলোয়ার আছে। বিএনপি নির্বাচন করলে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। আমি তো দলের বাইরে না। আর দল নির্বাচন না করলে আমার অনুসারী নেতাকর্মী, সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি বিজয়ী হলে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না। একজন মেয়র সরকারের কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘সিটি নিবাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সবে মাত্র নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। যদি আলোচনা হয় তখন জানানো হবে। আমরা আগেই বলেছি, ফ্যাসিবাদী এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না।’
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ