প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠক থেকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত হয়েছে গতকাল সোমবার। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী ১৫ জুন নির্ধারিত হয়েছে কুসিক ভোট। নির্বাচন বিশ্লেষকরা এ নির্বাচনকে আউয়াল কমিশনের প্রথম ‘আস্থা’ পরীক্ষার ভোট হিসেবে চিহ্নিত করছেন। কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী কুসিক নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ মে, আপিল ২০, ২১, ২২ মে। আপিল নিষ্পত্তি ২৩ থেকে ২৫ জুন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ তফসিল ঘোষণা করেন।
ইসি সচিব জানান, একই দিনে দেশের আরো ১৩৫ ইউনিয়ন, ৬ পৌরসভা ও এক উপজেলায় ভোট হবে। এসব নির্বাচনে সব কেন্দ্রেই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এ ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক শাহেদুন্নবীকে কুমিল্লা সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষণা করা হয়েছে। কুমিল্লার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ইসির সম্মেলন কক্ষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে অপর চার নির্বাচন কমিশনার বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেন। কুমিল্লা সিটির ভোট আয়োজনের মধ্য দিয়ে আউয়াল কমিশন ভোটের উত্তপ্ত উনুনে পা রাখতে চলেছে। সদ্য বিদায়ী কেএম নূরুল হুদা কমিশনও পাঁচ বছর আগে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম পরীক্ষাটা দিয়েছিল কুমিল্লায়। একই ধারাবাহিকতায় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে গঠিত নতুন কমিশনকেও একই কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। আর এ পরীক্ষায় অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের কেবল কুসিক নাগরিকদের নয়— সারাদেশের মানুষের আস্থা অর্জনের চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে। নিজেদের সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণে এই ভোট আউয়াল কমিশনের সামনে প্রথম চ্যালেঞ্জ।
পাঁচ বছর আগে কুমিল্লা সিটির ভোট দিয়েই জনগণের কাছে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছিল সদ্য বিদায় নেয়া কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। প্রথম সেই পরীক্ষায় নূরুল হুদা কমিশন উত্তীর্ণ হয়েছিল। ওই ভোট নিয়ে কট্টর সমালোচকদের মুখেও ছিল প্রশংসা। কিন্তু যাত্রা শুরুর সেই ধারাবাহিকতা পরে আর ধরে রাখতে পারেনি হুদা কমিশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি। রাজনৈতিক দল কিংবা নির্বাচনি অংশীজনদের সমালোচনা তো বটেই, কমিশনের অন্যতম সদস্য ইসি মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ নিয়ে বিব্রত হতে হয় সিইসি নূরুল হুদাকে।
তাৎপর্যের বিষয় হলো— কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর বড় আয়োজন হিসেবে তাদের কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট করতে হচ্ছে। অবশ্য এর মধ্য দিয়ে বর্তমান কমিশন নিজেদের আস্থার জায়গায় নেয়ার একটা সুযোগও পাচ্ছে। যাত্রার শুরুর এই পরীক্ষায় আউয়াল কমিশন কতটা নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারবে, তা নিয়ে অবশ্য তড়িঘড়ি মন্তব্য করতে চাইছেন না নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারা আউয়াল কমিশনকে পর্যবেক্ষণে রাখতে চাইছেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘এক ধরনের সমালোচনার মধ্যেই বর্তমান কমিশন গঠিত হয়েছে। দায়িত্ব নিয়েই নতুন কমিশন প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করেছে। এতে আমাদের মধ্যে ক্ষীণ হলেও এক ধরনের আশার সঞ্চার হয়েছে। তাদের তৎপরতায় মনে হচ্ছে— আউয়াল কমিশন শুরু থেকেই পারফর্ম করার চেষ্টায় নেমেছে। অনেকেই মনে করছেন এ কমিশনের সাহস আছে। এখন কুমিল্লা সিটির নির্বাচনে তারা কাজটা কতটা সাহস আর চ্যালেঞ্জের সঙ্গে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়।
বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ভোটের আয়োজন করে। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ১৭ মে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইনানুযায়ী, নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। সে হিসাবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৬ মে। আর ভোটগ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা ছিল মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। সে হিসেবে গত ১৬ নভেম্বর থেকে এ সিটি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়। কুমিল্লা সিটির সর্বশেষ নির্বাচনের সময় মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। ভোট পড়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৯০টি। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানার নৌকা প্রতীক পেয়েছিল ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।
এর আগে ২০১১ সালে দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠন করা হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এই সিটিতে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন আয়োজন করে ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বের নির্বাচন কমিশন।
১৫ জুন যেসব ইউপিতে ভোট : আগামী ১৫ জুন ১৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), ছয়টি পৌরসভা ও একটি উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে (কুসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশন-ইসির সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এসব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এটি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রথম ভোট আয়োজন। সবগুলোতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সরকারের এসব নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ মে, বাছাই ১৯ মে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ মে, প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ জুন।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ