ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কোন পথে

প্রকাশনার সময়: ২৫ এপ্রিল ২০২২, ১০:০৩

সরকার, সরকারি দল ও বিরোধী দলসহ সব রাজনৈতিক দল চায় নির্বাচন হোক অংশগ্রহণমূলক। এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোরও। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনও নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইনিয়ে-বিনিয়ে চাপ দেয়ারও চেষ্টা করে। তবে এই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বাধা কোথায়? কেন করা যাচ্ছে না, এর সমাধান কী? জানতে চাইলে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সবার আগে প্রয়োজন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা। এছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদৌ সম্ভব নয়। এই রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য ক্ষমতাসীন দলের উদ্যোগ গ্রহণ ও সদিচ্ছা প্রয়োজন। আর রাজনৈতিক দলের নেতারাও বলছেন, এজন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা। জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বড় বাধা হচ্ছে— অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনেকের জন্য কথার কথা। এটা সবাই শুনতে চায়, তাই বলে। তারা যদি বিশ্বাস করে, তাহলে উদ্যোগ নিক। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আমাদের রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘শুধু নির্বাচনই নয়, নির্বাচনের পরেও যাতে একটা কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে, সেজন্য একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের সমস্যার সমাধান এক দলের পক্ষে সম্ভব নয়, এটাও সবাই মিলে করতে হবে। তাই একটা রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন। এজন্য একটা উদ্যোগ নেয়া দরকার, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে।’

জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যদি করতেই হয়, তাহলে রাজনৈতিক সমঝোতা লাগবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। এই রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা আদৌ কোনো দিন সম্ভব বলে মনে করি না। কারণ হয়তো সবাই আইন মেনে চলল কিন্তু একটা দল অংশ নিল না। তাহলে তো এটা অংশগ্রহণমূলক হবে না।’

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে স্বীকার করেছেন, আমরা আমাদের শক্তিশালী বিরোধী দল পাচ্ছি না। এখানে একটা পলিটিক্যাল সমস্যা কিন্তু আছে। আমাদের ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড থেকে যখন শোনায়, এখানে ডেমোক্রেসি, পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি, ইলেকশন, হেনতেন। তবে আসলে এখানে করবেটা কী? সেটাও তারা চিন্তা করে না। গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে অনেক দল দরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উন্নত বিশ্বে মাত্র দুই দল হয়ে গেছে এখন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুই দলের বেশি শক্তিশালী দল নেই। নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৫ শতাংশ সংগঠন ইলেকশনই করে না। ইলেকশন করার বিষয়ে একটা অনীহা চলে আসে মানুষের। আমাদের দেশটা ধীরে ধীরে ওরকম হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপকালে বলেছেন, সর্বশক্তি দিয়ে অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার চেষ্টা করব।

বিএনপিসহ বিভিন্ন দল বলে আসছে, সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন প্রয়োজন। সরকার চাইলে এটি করতে পারে। যেহেতু তারা দায়িত্বে এই উদ্যোগ তাদেরই নিতে হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে কোথাও কোনো বাধা নেই। প্রয়োজন আন্তরিকতা। বিএনপি যদি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনেও না জেতে, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে প্রচার করবে এটাই বড় বাধা। নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ এখন নেই। তাই বিএনপিকে নির্বাচন সিরিয়াসলি নিতে হবে তাহলেই নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে কোনো কালিমা নিতে চায় না। তবে বিএনপি কৌশলে আওয়ামী লীগের গায়ে কালিমা লেপন করে। আওয়ামী লীগকে তাদের কাতারে নামানোর চেষ্টা করছে। এবার আর সেই সুযোগ দেয়া হবে না।

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তখনই হবে যখন আপনি সব পক্ষকে আশ্বস্ত করতে পারবেন, নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনের সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা ঠিক থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রশাসন; এরা কেউ দলীয় ভূমিকা নেবে না। কোনো একটি দলের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল হবে না। বরং সবার প্রতি সমান দৃষ্টি রাখবে। নির্বাচনের নিয়মভঙ্গ বা প্রচারণার সময় কমবেশি হলে তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করবে। এই জায়গাগুলো যদি আপনি নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে কোনোভাবেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করা যাবে না।’

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘যারা সরকারে আছে, আদৌ কি তারা চায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক? আমার কিন্তু সেটা মনে হয় না। যদি তারা চাইত, তাহলে তারা উপর্যুক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য স্টেকহোল্ডার ও দলের সঙ্গে বসত। আলাপ-আলোচনা করে সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করত যে, নির্বাচনকালে তারা প্রত্যাশিত একটি সরকার নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা দরকার, তারা তাই করবে।’

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ