দুই বছর মেয়াদের কমিটির বয়স আড়াই বছর হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ কারণে সংগঠনটির সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অনেকটাই ক্ষুব্ধ ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বের প্রতি। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। নিজেই যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। শিগগরিই কমিটি দেয়া হবে। তবে নতুন এই কমিটি গঠন করা হবে কাউন্সিল ছাড়াই। আহ্বায়ক কমিটি, নাকি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে সে বিষয়ে সংগঠনের কেউই নিশ্চিত করতে পারেননি। ছাত্রদল ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
নতুন কমিটিতে সভাপতি বা আহ্বায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব- এই দুই শীর্ষ পদের বিপরীতে দুই ডজনের বেশি নেতার নাম সংগঠনের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে। নিজ অনুসারীদের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দিতে ছাত্রদলের সাবেক নেতারাও মাঠে নেমেছেন। তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে নিজ নিজ বলয়ের ছাত্রদল নেতাদের বিষয়ে বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছেন। বসে নেই ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতারাও।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে সরাসরি ভোটে ফজলুর রহমান খোকন সভাপতি এবং ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাদের দায়িত্ব ছিল তিন মাসের মধ্যে দেশের সব ইউনিট কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া। তবে তিন মাসের মাথায় ওই বছরের ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে খোকন-শ্যামল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকেই দলের বিভিন্ন মহল থেকে নতুন কমিটির দাবি ওঠে।
নতুন কমিটির শীর্ষ দুই পদে বিশেষভাবে আলোচনায় আছেন— কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ইকবাল হোসেন শ্যামল, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, আমিনুর রহমান আমিন, সাইফ মাহমুদ জুয়েল। এছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুল আলম ফকির, হাফিজুর রহমান, মামুন খান, ওমর ফারুক কাওসার, পার্থ দেব মন্ডল, তানজিল হাসান, শাহনেওয়াজ, নিজাম উদ্দীন রিপন, করিম প্রধান রনি, মাহিনউদ্দিন রাজু, রিয়াদ মো. ইকবাল হোসেন, মাহবুব মিয়া, মারুফ এলাহী রনি, আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, রাশেদ ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকিবুল ইসলাম, আকতার হোসেন, আমান উল্লাহ, সোহেল রানা, রিয়াদ রহমান, শাফি ইসলাম প্রমুখ।ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, ঘরোয়া কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশের জেলা ও সমপর্যায়ের অধিকাংশ কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয় খোকন-শ্যামল কমিটি। তবে তারা কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিট শাখা কমিটি গঠন করতে পারেনি। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)-সহ বেশ কিছু ইউনিট রয়েছে। কবে নাগাদ এসব কমিটি গঠন করতে পারবেন সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে পারেননি সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। এ কারণে পদপ্রত্যাশী অনেক নেতাকর্মী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হতাশায় ভুগছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, সারাজীবন ছাত্রদলের রাজনীতি করে কোনো পদ-পদবি না পেয়েই ছাত্রত্ব থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে?
জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে পদপ্রত্যাশী নেতারা নানা রকম আন্দোলন করলেও কাজ হয়নি। এই সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার জন্য বার বার তাগাদা দেন। তারপরও কেন্দ্রীয় নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেননি। সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিকে সময় দিয়েছিলেন তারেক রহমান। তবে কমিটি দিতে না পারায় গত ১২ এপ্রিল নয়া পল্টনে ৬০ সদস্যের কমিটির মধ্যে সুপার ফাইভ— অর্থাৎ সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে বাদ দিয়ে বাকিদের সঙ্গে কথা বলেন তারেক রহমান। স্কাইপির মাধ্যমে ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির ৪৩ নেতার মতামত নেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমান কমিটি ভেঙে দেয়ার কথা জানিয়েছেন তারেক রহমান। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে যারা মতামত দিয়েছেন তাদের অধিকাংশের দাবি ছিল নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার। যার দায়িত্ব তারেক রহমানকে দিয়েছেন তারা। সবার একই বক্তব্য ছিল, সাংগঠনিক অভিভাবক হিসেবে তারেক রহমান যে কমিটি দেবেন সেটা সবাই মেনে নেবেন।
ছাত্রদল নেতারা জানান, খোকন-শ্যামল কমিটির সফলতা ও ব্যর্থতা উভয়ই রয়েছে। বড় সফলতা হচ্ছে— যেখানে দীর্ঘদিন কোনো কমিটি ছিল না, সেখানে তারা কমিটি দিতে সক্ষম হয়েছেন। বড় ব্যর্থতা— আড়াই বছরেও তারা কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন কমিটি গঠনে নিজ বলয়ের নেতাদের গুরুত্ব দিয়ে কমিটি দেয়ায় অনেক ত্যাগীও বাদ পড়েছেন।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ