আগামী ২০ এপ্রিল বুধবার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বিএনপির ইফতার মাহফিল। এ ইফতার মাহফিলকে ঘিরে বিরোধী রাজনীতিকদের ‘সমাবেশ’ ঘটানোর জোর চেষ্টা চালাচ্ছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। ফলে দলের পক্ষ থেকে এবারের এই ইফতারকে দেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব। ২০ এপ্রিলকে সামনে রেখে নানা প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। এরই মধ্যে সরকারবিরোধী সমমনা ও গণতন্ত্রকামী দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে দাওয়াত কার্ড। ডান-বাম রাজনীতিবিদদের নিয়ে বড় জমায়েত হওয়ার সম্ভাবনা তাই প্রবল।
ইফতারের ছদ্মাবারণে আলোচনার টেবিলে উঠে আসবে দুইটি ইস্যু- ‘জাতীয় সরকার’ ও ‘বৃহত্তর ঐক্য’। নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিতদের নিয়ে কোন পদ্ধতিতে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে তার একটি ‘ডেমো’ও উপস্থাপন হতে পারে। একই সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য কোন ফরম্যাটে হবে- তা নিয়েও মতবিনিময় হবে। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, রাজনীতিবিদদের সম্মানে ২০ এপ্রিলের ইফতার অনুষ্ঠানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এবারের ইফতার মাহফিলে জোট ও জোটের বাইরে থাকা ডান-বাম-ইসলামী দলসহ রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকারবিরোধী মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। ওই দিনে সমমনাাদের মধ্যে তৈরি হওয়া ভুল বোঝাবুঝির অবসান চান বিএনপির হাইকমান্ড। তবে এবারে ইফতারে মাহফিলে থাকছে না জামায়াত। বলতে গেলে এ ইফতার মাহফিল সরকারবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যের একটি আনুষ্ঠানিক সূচনা। এর ফলে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একমঞ্চে আসার একটা সুযোগ তৈরি হবে। এতে বৃহত্তর ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া অনেকটা ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুইজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনীতিবিদদের সম্মানে ইফতার মাহফিল সামনে রেখে গ্রাউন্ড ওয়াক করছে দলের শীর্ষ নেতারা। ওই দিন জাতীয় সরকার গঠন ও বৃহত্তর ঐক্যের একটি প্রস্তাবনা খসড়া আকারে নেতাদের সামনে তুলে ধরতে চায় বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে সহায়ক হবে। নির্বাচনের পর কেন জাতীয় সরকার গঠন করতে চায় বিএনপি তা বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। তাই দিনটিকে সামনে রেখে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছেন ঐক্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নির্বাচকালীন নির্দলীয় সরকারের গুরুত্ব তুলে ধরা হবে। আগামী সোমবার স্থায়ী কমিটির সভায় এ নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০ এপ্রিল রাজনীতিকদের সন্মানে বিএনপির ইফতার মাহফিল রাজধানীর হোটেল লেক শোরে অনুষ্টিত হবে। এরই মধ্যে গণতন্ত্রকামী দলগুলো নেতাদের কাছে পৌছে দেয়া হয়েছে দাওয়াত কার্ড। উদ্দেশ্য তাদের সাথে সম্পর্ক গড়া। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তারা যেন ভূমিকা রাখেন। দুই ইস্যুতে ঐক্যের আদল সম্পর্কেও ধারণা দেয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে- বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোটের বাইরে ঐক্যের ডাকে সাড়াদানকারী শরিকরা উপস্থিত থাকবেন। বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা ইফতার মাহফিলে যোগ দিবেন। এই দিন লন্ডন থেকে সরাসরি ভার্চুয়ালে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আরেকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সমমনা বিরোধী দলগুলোকে এক মঞ্চে আনতে চাইছে বিএনপি। তাই শরিকদের মনোমালিন্য ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে লন্ডন থেকে নিয়ে আসা সবশেষ প্রস্তাবনা ও তার যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন বিএনপি নেতারা। জাতীয় সরকারসহ ঐক্য গড়ার পেছনের সব রূপরেখা ঠিক করে আনতে তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও নির্বাহী কমিটির সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।
তাদের একজন নয়া শতাব্দীকে বলেন, আমরা ডিটেইল রূপরেখা নিয়ে আসছি। দলের মহাসচিব সুবিধামতো তা প্রকাশ করবেন। আগামী ২০ এপ্রিল সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হতে পারে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, এবারের ইফতারে জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানায়নি বিএনপি। কারণ জামায়াতের সঙ্গে আর পথ চলতে চাইছে না বিএনপি। সরকার পতনের আন্দোলনে জামায়াত থাকলে বৃহত্তর ঐক্যের ব্যাপারে অনেকেই আপত্তি জানিয়েছে। ফলে জামায়াতকে বিএনপির পক্ষ থেকে না করে দেয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরও এ বিষয়ে সবুজ সংকেত রয়েছে। এই দিন ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকা শরিকদের সামনে জামায়াত ইস্যুতেও দলের অবস্থানও স্পষ্ট করতে চায় বিএনপি। যাতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার আগেই সব মতবিরোধ দূর হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ‘সরকারবিরোধী ঐক্য’ গঠন এই মুহূর্তে দলটির অন্যতম এজেন্ডা। রমজানে আপাতত মাঠের রাজনীতি নেই। ফলে মতবিনিময় করে এ মুহূর্তে ঐক্য প্রক্রিয়ার কাজটি এগিয়ে রাখতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড।
দুই জোট ও ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকা শরিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিএনপির ইফতার মাহফিলে দাওয়াত কার্ড পেয়েছে। শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই মাহফিলে যোগ দিতে আগ্রহী। তারা আরো বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক নতুন বন্দোবস্তের জন্য জাতীয় ঐকমত্য দরকার। বিএনপির প্রস্তাবনা ও তাদের উদ্দেশ্য সর্ম্পকে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার পরই সবার মতামতের ভিত্তিতে জোটে যোগ দেয়া না দেয়া বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেও জানান তারা।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, রমজান মাসে প্রতিবছরই আমরা ইফতার আয়োজন করে থাকি। এতে নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়, বিভিন্ন আলোচনা অংশ নেন। ইফতার ঘিরে যে রাজনৈতিক গতি তৈরি হয় এবার সেটাই হচ্ছে। গত দুই বছর করোনার কারণে বন্ধ থাকলেও এবার ইফতার আয়োজন করছি। এরমধ্যে যতটা পেরেছি কাজ করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঐক্য নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনও বলার মতো কিছু আসেনি। এবারের ঐক্যে কী ভিন্নতা থাকবে তা সময় হলেই দেখা যাবে। কাজ শুরু করেছি। দেখা যাক কী হয়।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার রক্ষায় আন্দোলন করে আসছি। আগামী নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেজন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। শুধু বিএনপি নয়, দেশের বেশিরভাগ মানুষ এবং রাজনৈতিক দলেরও চাওয়া একই। তবে এ সরকার সহজে দাবি মেনে নেবে বলে মনে হয় না। এজন্য প্রয়োজন গণআন্দোলন। আর সেই লক্ষ্যেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। আশা করি দেশের স্বার্থে শিগগিরই সেই ঐক্য গড়ে উঠবে।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ