ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খালেদা জিয়াকে কী ভুলতে শুরু করেছে বিএনপি?

প্রকাশনার সময়: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০৯:২২

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তিনবার এতিম-ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে ইফতার আয়োজন করে আসছে দলটি। এতিম আলেমদের সঙ্গে ইফতার মাহফিলে শামিল হন বেগম জিয়া। সেই হিসেবে এবারো দলটি প্রথম রোজায় ইফতারের আয়োজন করে। আগের দুইবার ইফতার আয়োজনে মঞ্চে দলের চেয়ারপারসনের সম্মানে একটি চেয়ার খালি রাখেন দলটির নেতারা। তবে এবার খালেদা জিয়া বাড়িতে অবস্থান করলেও তার সম্মানে কোনো চেয়ার ‘ফাঁকা’ রাখা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, খালেদা জিয়াকে কী তবে ভুলতে শুরু করেছে বিএনপি? নাকি রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছেন বেগম জিয়া?

জানতে চাইলে ইফতার মাহফিলে উপস্থিত থাকা স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, এটি নিয়ে জল ঘোলা করার কিছু নেই। চেয়ার রাখা না রাখা বিষয় না, তিনি আমাদের অন্তরেই আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা পাওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী শর্তসাপেক্ষে পঞ্চম দফায় সরকারের নির্বাহী আদেশে কারামুক্ত এখন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি কারাগারের বাইরে থাকবেন। বর্তমানে গুলশানের বাসা ফিরোজায় একান্ত জীবনযাপন করছেন। নানা রোগ-শোকে আক্রান্ত ৭৭ বছর বয়সি বিএনপি চেয়ারপারসন বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত দুই বছর ধরে করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে ইফতার মাহফিল আয়োজন থেকে বিরত থাকে বিএনপি। তবে এবার করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিএনপির প্রথম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় গত রোববার। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে ওলামা-মাশায়েখ- এতিমদের সম্মানে বিএনপি ওই ইফতার মাহফিল আয়োজন করে। সেখানে খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি, সুস্থতার জন্য দোয়া করা হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদেও বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ইফতারের সময় মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিবছর আমরা ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় মানুষ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ইফতার করেছি। দুর্ভাগ্য তিনি আজকে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় গৃহবন্দি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৮ হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছেন। রমজানে আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেন, তিনি যেন সুস্থ করে দেন এবং আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেন।

দলীয় সূত্র বলেছে, খালেদা জিয়া দৃশ্যমান কোনো রাজনীতিতেও অংশ নিচ্ছেন না। বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া থেকেও বিরত রয়েছেন। সব ধরনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অনেকটাই দূরে। শুধু ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরাই তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করছেন। প্রয়োজনে দলের কাউকে ডেকে পাঠান বিএনপিপ্রধান নিজেই। তাদের মাধ্যমেই দলীয় কোনো দিকনির্দেশনা দেয়ার থাকলে তার বার্তা পাঠান। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া সাময়িক কারামুক্ত হলেও কার্যত তিনি গৃহ-অন্তরীণ। সরকারের শর্তে কারণে এবারো কোনো ইফতার পার্টিতে অংশ নিতে পারছেন না খালেদা জিয়া। জানা যায়, লেডিস ক্লাবে বিএনপি এতিম ও ওলামা-মাশায়েখদের সন্মানে ওই ইফতার মাহফিল হয়। তেজগাঁও মহিলা এতিম খানা, শান্তিনগর এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসা এবং ফার্মগেট মাদরাসার এতিম শিক্ষার্থীদের ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সবমিলিয়ে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানায় দলটি। তবে রাস্তায় প্রচণ্ড যানজটের কারণেই অনেক আমন্ত্রিত অতিথি নির্ধারিত সময়ে এসে পৌঁছাতে পারেননি। ইফতারের ঠিক ১৫ মিনিট আগে অর্ধেক অতিথি অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছান। বিএনপি মহাসচিবও জ্যামে আটকে থেকে পরে পথ থেকে মোটরসাইকেলে অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও হেঁটে ইফতার শুরুর সময়েই অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছান। ইফতার শুরুর প্রায় পাঁচ মিনিট পর অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছায় মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। ইফতার শুরুর আগে বিভিন্ন টেবিলে টেবিলে গিয়ে আমন্ত্রিতদের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় করেন বিএনপি মহাসচিব। ইফতারে অংশ নেয়া নেতারা এতিম শিশুদের খোঁজখবর নেন। ইফতার মাহফিলের মূল মঞ্চে ছিলেন ওলামা-মাশায়েখদের মধ্যে বাড্ডা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোশাররফ হোসেন, স্পিচ অব ইসলামের প্রেসিডেন্ট মাওলানা রেজাওয়ানুর রহমান খান, মোহাম্মদপুর রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মহিউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদপুর বায়তুল ফজল সিনিয়র মাদরাসার প্রধান মাওলানা গোলাম মাওলা, স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল কাইয়ুম, ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক ও সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক নয়া শতাব্দীকে বলেন, রাজধানীর তিনটা মাদরাসা থেকে তিন শতাধিক এতিম শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন মাদরাসার ওলামা-মাশায়েখরা এই ইফতারে অংশ নেন। প্রচণ্ড যানজটের কারণে অনেক আমন্ত্রিত মেহমান ইফতার শুরুর পরও এসে উপস্থিত হয়েছেন। রোজা রেখে তাদেরকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যামের কারণে নিজের গাড়ি রাস্তায় রেখে হেঁটে ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়েছি।

রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থার ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইফতার অনুষ্ঠানে অনেক মেহমান আসতে পারেননি, আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছেলে-মেয়েরা আসতে পারেননি। কারণ ট্রাফিক জ্যাম। এত ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম যে, কেউ কেউ এসে পৌঁছাতেই পারেননি।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ