ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইফতার ‘কৌশলে’ রাজনীতি

প্রকাশনার সময়: ০৩ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৩২

রমজানে ‘ইফতার পার্টি’র মোড়কে জমে ওঠার অপেক্ষায় দেশের রাজনীতি। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে গত দুই বছর দেশের ইফতার পার্টি বন্ধ ছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে করোনা পরিস্থিতি। নেই কোনো বিধি-নিষেধ। তাই এবার বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ‘ইফতার পার্টি’। আর এই পার্টির সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাজনীতির কলা-কৌশল। আজ প্রথম রোজা থেকেই শুরু হচ্ছে ইফতার রাজনীতি। এরই মধ্যে ইফতারকে কেন্দ্র করে রাজনীতি দলগুলো নেমে পড়েছে নতুন মিশনে নেমেছে। বিশেষ করে এগিয়ে আছে দুই বড় দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। সঙ্গে যোগ দিচ্ছে উভয় জোটের শরিকরাও। বসে নেই জোটের বাইরের দলগুলোও। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে, ইফতারকে কেন্দ্র করে জোট রাজনীতির প্রস্তুতি সারতে।

এরই মধ্যে ইফতারের দাওয়াতপত্র বিতরণ শুরু করেছে দলগুলো। জানা গেছে, ‘ইফতার রাজনীতি’ এবার আগে শুরু করছে বিএনপি। ইফতার রাজনীতির মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের চাঙা করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এতিম আলেমদের সঙ্গে ইফতারের শামিল হয় প্রথম রোজায়। সেই হিসেবে এবারো দলটি প্রথম রোজায় ইফতারের আয়োজন করেছে। যদিও সরকারের শর্তে কারণে এবারের কোনো ইফতার পার্টিতে অংশ নিতে পারছেন না খালেদা জিয়া। দলীয় নেতাকর্মী ও মিত্রদের সঙ্গে এই ইফতার কর্মসূচি দিয়ে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করতে চাইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ইফতার আয়োজন সমানতালে চালিয়ে যেতে চায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যদলগুলো। এরই মধ্যে ইফতার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ইফতার মাহফিলে পরস্পরকে আমন্ত্রণও জানাচ্ছেন দলগুলো। তবে আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টির সূচি জানা যায়নি। জাতীয় পাটি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশিরভাগই দলই এবার ইফতার পাটির রাখছেন বলেও জানা গেছে। আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টি আয়োজনের বিষয়ে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, করোনা মহামারিতে দুই বছর থাকার পর এবার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন একাধিক ইফতার পার্টির আয়োজন করবে।

বিএনপি দলীয় সূত্রমতে, রমজান উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি ইফতার কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকেও একাধিক ইফতার পার্টির আয়োজন করা হবে। এসব ইফতার অনুষ্ঠানে মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এবং ২০ দলীয় জোট শরিকদের বাইরেও কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিএনপির ইফতারেও অংশগ্রহণ করবেন। এসব ইফতারে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন। এর মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপি ছাড়াও জোট ও ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা একাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে বলেও জানা গেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান নয়া শতাব্দীকে বলেন, প্রথম রমজান এতিম আলেম-ওলামাদের সম্মানে ইফতার পার্টি হবে লেডিস ক্লাবে। কূটনীতিকদের সম্মানে হোটেল ওয়েস্টিনে ১২ এপ্রিল, রাজনীতিকদের সম্মানে হোটেল লেকশোরে ২০ এপ্রিল এবং পেশাজীবীদের সম্মানে লেডিস ক্লাবে ২৮ এপ্রিল ইফতারের আয়োজন করবে বিএনপি। এরই মধ্যে আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর কাজ চলছে।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান জানান, রমজান মাসে অনেকটা স্তিমিত থাকবে মাঠের রাজনীতি। রমজানজুড়ে ইফতারকেন্দ্রিক ঘরোয়া রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে দলটি। এরই মধ্যে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে এ দুটি বিষয়কে এগিয়ে রাখতে চান নীতি-নির্ধারকরা। ইফতারের আড়ালে মতবিনিময় করবে সংশ্লিষ্ট নেতারা। পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তারা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ‘সরকারবিরোধী ঐক্য’ গঠন এই মুহূর্তে দলটির অন্যতম এজেন্ডা। তবে এ এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাড়াহুড়ার পক্ষে নন নেতারা। সময় নিয়ে এবার একটি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে চান। রমজানে মাঠের রাজনীতি না থাকলেও অন্দরমহলে এ ঐক্য প্রক্রিয়ার কাজটি এগিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ ক্ষেত্রে ইফতার পার্টিগুলোকে কাজে লাগাবে তারা।

ইফতার রাজনীতি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দলের বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি সুষ্ঠু রাজনীতিতে বিশ্বাসী। দেশের মানুষের জন্য তারা রাজনীতি করে। রমজান বা কোনো নির্দিষ্ট মাস-ক্ষণ হিসেবে নয়, কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান দিয়েও নয়, সব সময় গণমুখী রাজনীতি করবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী এই দল। সবার সঙ্গে সম্প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখতে দলের চেষ্টা তো থাকবেই। তারই ধারাবাহিকতায় যে কোনো অনুষ্ঠান বা কর্মসূচি আমরা দেশের স্বার্থ বিবেচনা করেই দিয়ে থাকি।

বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা জানান, রাজনীতিবিদদের সম্মানে ২০ এপ্রিলের ইফতার অনুষ্ঠানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই ইফতারে জোট ও জোটের বাইরে থাকা ডান-বাম সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বলতে গেলে এ ইফতার মাহফিল সরকারবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যের একটি আনুষ্ঠানিক সূচনা। এর ফলে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একমঞ্চে আসার একটা সুযোগ তৈরি হবে। এতে বৃহত্তর ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া অনেকটা ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করি।

তারা জানান, রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি কূটনীতিক ও পেশাজীবীদের সম্মানে ইফতার পার্টিকেও বেশ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদদের ইফতারে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। এবার শুধু দলীয় নয়, নিরপেক্ষ সর্বজন গ্রহণযোগ্য পেশাজীবীদেরও ইফতার মাহফিলে আমন্ত্রণ জানানো হবে। লক্ষ্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নেয়া। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের প্রতি এসব পেশাজীবীও যাতে ভূমিকা রাখে সেই আহ্বানও থাকবে তাদের প্রতি।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই রমজানে মাঠের রাজনীতি ততটা সক্রিয় থাকে না। তবে রাজনীতি তো বন্ধ থাকবে না। রমজানে দল পুনর্গঠনসহ রাজনৈতিক নানা বিষয়ে আমরা কাজ করব। যাতে ঈদের পর দ্রুত সময়ে আমরা তা শেষ করতে পারি।’

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার রক্ষায় আন্দোলন করে আসছি। আগামী নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেজন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। শুধু বিএনপি নয়, দেশের বেশিরভাগ মানুষ এবং রাজনৈতিক দলেও চাওয়া একই। তবে এ সরকার সহজে দাবি মেনে নেবে বলে মনে হয় না। এজন্য প্রয়োজন গণআন্দোলন। আর সেই লক্ষ্যেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। আশা করি দেশের স্বার্থে শিগগিরই সেই ঐক্য গড়ে উঠবে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ