ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কদরে শরিকরা

প্রকাশনার সময়: ২৯ মার্চ ২০২২, ০৮:২১

সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৩-এর ডিসেম্বরেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখনো সময় বাকি প্রায় ২১ মাস। তবে সেই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাষ। জোটের শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনতে চাইছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচনে নিজেদের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখাই বড় দুই দলের প্রধান লক্ষ্য। এজন্য দু’দলই দূরে সরিয়ে রাখা জোটের শরিকদের টানছে কাছে। সব রকম টানাপড়েন কাটিয়ে জোটের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ চায় দল দুটি। তাই ভোটের হিসাব মাথায় রেখে নিজেদের মতো করে শুরু করেছে দৌড়ঝাঁপও। অন্যদিকে দুই দলের বাইরে থাকা ছোট দলগুলোও চাইছে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নেতৃত্বাধীন যে কোনো জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, জোটের রাজনীতি আরো স্পষ্ট হবে। বড় দলগুলোর নেতারা ছোট দলগুলোর কাছে ধরনা দেবেন, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তবে ভোট শেষ হলে তাদের কথা কতটা মনে রাখবে—সেটাই আসল প্রশ্ন।

জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও বেশ আগে থেকেই নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না গেলেও রাজপথে নির্বাচন ও সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে প্রধান দুই দলই নিজ নিজ জোট শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ মিত্র বাড়াতে চাইছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতাহারা বিএনপি চায় নির্বাচনের আগে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে। ভেতরে ভেতরে এ নিয়ে দুই দলের নীতিনির্ধারকরা কাজও শুরু করেছেন।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় মহাজোট ও ১৪ দল শরিকদের কারো ঠাঁই মেলেনি। এমনকি ওই সময়ই প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা ১৪ দল শরিকদের ‘নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর’ কিংবা ‘বিরোধী দলে থেকে’ নিজ নিজ দলীয় কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দেন। পরবর্তী নির্বাচনে শরিকদের নিজ নিজ প্রতীকে অংশ নেয়ার ইঙ্গিতও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব বিষয়ে বিগত তিন বছর ধরে জোটের শরিকদের সঙ্গে এক ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হয় ক্ষমতাসীনদের। এমনকি ঠিকমতো জোটের বৈঠক হয়নি। এ নিয়ে জোটের শরিক নেতাদের যেমন ক্ষুব্ধ করে রেখেছিল, তেমনি গত তিনবারের ধারাবাহিকতায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন জোটগতভাবে হবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল ধোঁয়াশা। তবে প্রায় তিন বছর পর গত ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরিক দলের নেতাদের বৈঠকে একসঙ্গে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি ওই বৈঠকে সমন্বয়হীনতা দূর করে জোটের কার্যক্রম জোরদারের তাগিদও দেন। এমনকি জোট শরিকদের এখনই আসন সমঝোতাসহ মূল্যায়নের দাবি পূরণের আশ্বাসও দিয়েছেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা চলছে ক্ষমতাসীন দলে। বিশেষ করে নিবন্ধন থাকা বিএনপি জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া এবং বামপন্থি কয়েকটি দলের সঙ্গেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো এবারো বিকল্প ধারা বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে পারে। অথবা মহাজোটে যুক্ত করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা স্বীকার করে এমন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য গড়তে আমরা সব সময় প্রস্তুত। শুধু ভোটের জন্য জোট করতে হবে— এমন নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট হওয়া প্রয়োজন। কারণ এই দেশে একটি গোষ্ঠী আছে, যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় গাত্রদাহ হয়। এমন দলগুলোর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে জোট গঠন করা প্রয়োজন।

এদিকে বিএনপির সূত্র বলছে, দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তা ও নেতৃত্বাধীন দল বিএনপির অবহেলার কারণে প্রায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছিল ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির অবমূল্যায়ন, অবহেলা ও অবমাননায় এতদিন শরিকরা ছিল প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। বিএনপির ‘একলা চলো নীতি’র কাছে শরিক দলগুলোর আগ্রহ ও উৎসাহে একেবারেই ভাটা পড়েছিল। আবার বিএনপিও জোটের শরিক অনেক নেতার কার্যক্রমেও অসন্তুষ্ট ছিল। এর মধ্যে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ নামে পৃথক প্ল্যাটফর্ম গঠনকে ভালোভাবে নেয়নি দলটি। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ইসির সংলাপে অংশগ্রহণসহ অন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেও বিব্রত ছিলেন বিএনপির হাইকমান্ড। তবে সম্প্রতি সেসব সন্দেহ দূর করে কল্যাণ পার্টি ও এলডিপিকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে বিএনপি। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা সঙ্গে বৈঠক করে তাদেরও সব মনোমালিন্য ভুলে আন্দোলন ও জোট গঠনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলছে বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এর বাইরে তারা বাম ও ইসলামি দলসহ সরকারবিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও কাছে টানার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে বিএনপি নেতারা কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে নানা আশ্বাসও দিয়েছেন।

জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকারের পতনের পাশাপাশি গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প নেই। এজন্য সব দলকে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে। বিএনপি বড় দল। তাদেরই এ ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নিতে হবে।

জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, প্রায় দুই বছর ধরেই এই জোট নিষ্ক্রিয় ছিল। এ জোটের সৃষ্টি হয়েছিল বিএনপির আহ্বানে। কাজেই জোটকে সচল করতে হলে বিএনপিকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি এখন সবার। এ ইস্যুতে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বৃহৎ ঐক্যের বিকল্প নেই। বিএনপি সেই ঐক্য গঠনের চেষ্টা করছে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ