দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলে মনোযোগ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে ৮ বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম। সারাদেশে শুরু হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটি গঠনে সম্মেলনের কাজ। জেলায় জেলায় চলছে বর্ধিত সভা-প্রতিনিধি সভা।
কেন্দ্রীয় নেতারাও ব্যস্ত তৃণমূলের কাউন্সিল শেষ করতে। তৃণমূলকে আরো শক্তিশালী করতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে এসব কমিটি ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কমিয়ে ঐক্যবদ্ধ ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে মনোযোগী তারা। আগামী সংসদ নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন এমন কথা।
তারা বলছেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ কমার সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। প্রতিদিনই চলছে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন, জেলা-উপজেলার সম্মেলন। ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এসব সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তিদের দেয়া হচ্ছে বড় দায়িত্ব। পাশাপাশি বাদ পড়ছে বিতর্কিতরা। জনপ্রিয় ও গণমুখী তরুণ নেতাদের নিয়ে আসা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পদে। নির্বাচনের আগে তৃণমূলের কর্মীদের বিরোধ মিটিয়ে তৃণমূলের চালিকাশক্তি যোগ্য নেতাদের হাতে দেয়ার মাধ্যমেই দলকে শক্তিশালী করতে চায় আওয়ামী লীগ। কাউন্সিলের পাশাপাশি সাংগঠনিক সফরও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘জেলা-উপজেলা পর্যায়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে সম্মেলন করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। খুব শিগগিরই তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলন শেষ হবে। দলের ২০তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫৮টি জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। আর গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি মে মাসের মধ্যে বাকিগুলো শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাকি জেলার সম্মেলন শেষ করতে পারব।’খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারাদেশে আওয়ামী লীগের ৭৮ সাংগঠনিক জেলা এবং সাড়ে ছয়শ’র মতো উপজেলা কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে এখনো ৪০টির মতো জেলা ও চার শতাধিক উপজেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। গত বছর এ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে পরে তা থেমে যায়। ৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা পুনরায় এই কাজে গতি বাড়ানোর নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনা মেনে করোনা সংক্রমণ কমা ও বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ার পর জোরেশোরে দল গোছানোর কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর থেকে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিরষ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে সংসদ ও সরকার গঠন করে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। তবে এজন্য আওয়ামী লীগকে অনেক মাসুল দিতে হচ্ছে। তাদের ভাষায়, বিরোধী দলগুলো গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সহযোগিতা না করায় দেশে-বিদেশে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দেয়ায় তাদের অতিউৎসাহী কিছু নেতাকর্মী এবং প্রশাসনের একটি অংশ সুবিধা পাওয়ার লোভে নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনে কোথাও কোথাও সমস্যার সৃষ্টি করেছে। যা গণতান্ত্রিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের ইমেজ ক্ষুণ্ন করেছে।
তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারে অধীনে অনুষ্ঠিত হলেও সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে। সেভাবেই তারা বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ তারা আর কোনো বিতর্কিত নির্বাচনের দায় নিতে চায় না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে আবারো ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ এমন বার্তাই দিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মে মাসের মধ্যে আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের (খুলনা) জেলা-উপজেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’ তিনি জানান, ৩১ মার্চের মধ্যে ১২টি উপজেলার সম্মেলন শেষ করা হবে। ১২ মে মাগুরা, ১৪ মে মেহেরপুর, ১৫ মে চুয়াডাঙ্গা এবং ১৬ মে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জানা যায়, সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সভায় দলকে নির্বাচনমুখী করতে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা দেয়ার আগে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। জনমত যাচাই ও জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে তিনি তথ্য-উপাত্ত এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, এলাকায় ও জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব, ত্যাগ-তিতিক্ষা, নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক এবং চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো অভিযোগ আছে কিনা, খোঁজখরব নিচ্ছেন। একাধিক সূত্রের মাধ্যমে তা যাচাই-বাছাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে আওয়ামী লীগর বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে— দল ও সহযোগী সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করা।
সদস্য পদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ, অপপ্রচারের জবাব এবং তাদের সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো ব্যাপকভাবে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তুলে ধরা। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচার সেল গঠনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করার ওপর জোর দেয়া। কেন্দ্র থেকে নিয়ে তৃণমূল সব পর্যায়ের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত নিরসন করে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সমমনা দলগুলোকে তাদের জোটে শরিক করা। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। এর বিশাল কর্মী বাহিনীকে সংগঠিত করার কাজ চলছে। আগামী নির্বাচনে আবারো বিপুল ভোটে জয়ী হবে আওয়ামী লীগ।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ