রাজধানীর গুলশান এভিনিউয়ের ফিরোজায় কেমন আছেন ৭৭ বছর বয়সি বেগম খালেদা জিয়া—এমন প্রশ্ন দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও। কার্যত গত ২৪ মাস বাসা আর হাসপাতালে ‘নিঃসঙ্গ’ জীবনযাপন করেছেন তিনি। এরই মধ্যে পঞ্চম দফায় নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন শুধু বাকি প্রজ্ঞাপন জারি। বহাল থাকছে আগের শর্তগুলোই। ফলে দৃশ্যমান রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন না তিনি। বক্তব্য-বিবৃতি দিতেও মানা থাকছে তার। শুধু ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরাই করতে পারবেন দেখা-সাক্ষাৎ। প্রয়োজনে দলের কাউকে ডেকে পাঠান বিএনপি-প্রধান নিজেই। পারিবারিক ও দলীয় সূত্রগুলো বলছে, হাসপাতাল থেকে তৃতীয় দফায় খালেদা জিয়ার বাসায় ফিরেছেন দেড় মাস হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তার নতুন করে কোনো শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়নি। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডকেও বৈঠকে বসতে হয়নি। তবে এভারকেয়ার হাসপাতালের একটি চিকিৎসক দল ফিরোজায় এসে তাকে দেখে যান মাঝেমধ্যে। করোনার সতর্কতা হিসেবে বাইরের কেউ এ মুহূর্তে বাসায় যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন না। এজন্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও তার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। গুলশানের বাসায় গৃহকর্মী ও সব সময়ের সাহায্যকারী ফাতেমাই এখন সেবা শুশ্রূষার বিষয়টি দেখছেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বড় বোন বেগম সেলিমা ইসলাম মাঝেমধ্যে গিয়ে দেখা করছেন। তার সঙ্গে সময় কাটিয়ে আসছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, অস্টিও আর্থাইটিস, ডায়াবেটিসসহ অন্য সব রোগই বিদ্যমান। এখনো চলাফেরায় অন্যের সাহায্য নিতে হয়। বেগম জিয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। নিয়মিত কোরআন শরিফ তিলাওয়াত ও অজিফা পড়েন। পত্রিকা পড়েন ও টিভির নিউজ দেখেন। তিনি লন্ডনের সময় অনুযায়ী মধ্য রাতে নাতনিদের সঙ্গে কথা বলেন। না ডাকলে দলের কেউ যান না তার বাসভবনে। নিয়মিত ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার ও ভিটামিনযুক্ত ওষুধ সেবন করেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য বলেন, এভারকেয়ারের ডাক্তারদের নিয়েই রুটিন চেকআপ চলছে বাসায়। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর আর মেডিকেল বোর্ড বসেনি আলাদা করে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার বড় বোন বেগম সেলিমা ইসলাম বলেন, আছেন আগের মতোই। তেমন উন্নতি নেই বললেই চলে। আবার যদি আরো খারাপ কিছু না হয়, সেই দোয়াই করি। তার পা ফুলে গেছে। হাঁটাচলা করতে সমস্যা হচ্ছে।
বাসায় বিএনপি নেত্রীর সময় কাটে কী করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাবারে রুচি নেই, তাও মানানোর চেষ্টা করছেন। প্রায় প্রতিদিনই সময় করে বিদেশে অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলেন ছেলের বউ ও নাতনিদের সঙ্গে। এর বাইরে খুব একটা কারও সঙ্গে দেখা করতে চান না।
জানতে চাইলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ভালো-মন্দ ঠিক বলা যাচ্ছে না। উনার যে রক্তক্ষরণ হতো, সেটাই দুশ্চিন্তার মূল কারণ ছিল। তবে রক্তক্ষরণ বন্ধ আছে আপাতত। তবে চিকিৎসক বোর্ডের আশঙ্কা, যেকোনো সময়ে এই অবস্থার অবনতি হতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাস্থ্যের কথা কী আর বলব? অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট তো এখানে হচ্ছে না। তার উন্নত চিকিৎসা জরুরি। দোয়া করা ছাড়া আর উপায় কী।
জানা যায়, সরকারের নির্বাহী আর্দেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপি নেত্রী। পরে আরো চারবার এই মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই মুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ মার্চ। বাড়ি ফেরার এক বছর পর ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন এভারকেয়ার হাসপাতালে। ৫১ দিন পর বাড়ি ফেরার পর একই বছরের ১২ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত আবারও তিনি একই হাসপাতালে যান। এরপর ১৩ নভেম্বর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮১ দিন হাসপাতালে থাকেন খালেদা জিয়া। সেই সময়ে দলের পক্ষ থেকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে। দাবি করা হয়, দেশের বাইরে না নিলে তাদের নেত্রীকে বাঁচানো যাবে না। কারণ লিভার সিরোসিস আক্রান্ত বেগম জিয়া। শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এর চিকিৎসা শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দু-একটি স্থানে রয়েছে। পরে ১ ফেব্রুয়ারি বাসায় ফেরার পর খালেদা জিয়ার দুটি ছবি এসেছে গণমাধ্যমে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তার হাতে একটি সনদ তুলে দিতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গিয়েছিলেন ফিরোজায়। সে সময় খালেদা জিয়া সোফায় বসেছিলেন। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যান খালেদা জিয়া করোনার টিকার বুস্টার ডোজ নিতে। হাসপাতালের কর্মীরা গাড়িতে বসা অবস্থায় তাকে টিকা দেন। সে দিন দলের নেতাকর্মীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ