সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আছে আর মাত্র ৯ দিন। সাজা স্থগিত রেখে শর্তসাপেক্ষে তার মুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ মার্চ। সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে ফের তাকে নেয়া হতে পারে কারাগারে। তাই আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করবে তার পরিবার। এর জন্য সরকারের উচ্চমহলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ইতিবাচক সাড়া পেলে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি খালেদাকে বিদেশে নেয়ার জন্য এবার বিশেষ আবেদনও করা হবে। আবেদনের সঙ্গে চিকিৎসকদের পরামর্শপত্রও সরকারের কাছে পৌঁছানো হবে। খালেদা জিয়ার পরিবার, দলীয় ও আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক আইনজীবী বলেন, মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে প্রতিবার পরিবারের পক্ষ থেকেই আবেদন করা হয়। এবারো ব্যতিক্রম হবে না। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো রেডি করে ইতোমধ্যে ম্যাডামের পরিবারের কাছে পাঠানো হয়েছে। শুধু পরিবার থেকে ওনার বোন অথবা ভাই স্বাক্ষর করে আবেদন করবেন। আশা করছি, চলতি সপ্তাহের মধ্যে আবেদন করা হবে। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার জন্যও আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে বেগম জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, সরকার আইনানুগ পন্থায় যেভাবে বেগম জিয়ার সাজা স্থগিত করে ৬ মাস করে মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে, তা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বৃদ্ধি করা হোক। যেহেতু বেগম জিয়া আগের চার দফায় সরকারের শর্ত ভঙ্গ করেননি। তাই এবার তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হোক।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের একটি নমুনা তৈরি আছে। নতুন করে তৈরির কিছু নেই। আগের আবেদনের যে কপি আছে তাতে তারিখসহ কিছু বিষয় পরিবর্তন করা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলামের স্বাক্ষর নিয়ে দুই-এক দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দেয়া হবে। তবে দলীয়ভাবে বিএনপি চাইছে, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো প্রত্যাহার করে তার নিঃশর্ত মুক্তি। জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলাম বলেন, তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা খারাপ। তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন করতেই হবে। তবে, কবে আবেদন করা হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। ভাই শামীম ইস্কাদার বিষয়টি দেখছেন। তিনি আরো বলেন, বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করাই আছে। তবে সরকার অনুমোদন দিচ্ছে না। এখন কী করা যায় দেখি। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি নেই বললেই চলে। তার পা ফুলে গেছে। হাঁটা-চলা করতে সমস্যা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, সাধারণত লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে ম্যাডামের পরিবার আবেদন করে। খালেদা জিয়া যেহেতু অসুস্থ, তাই তাকে বিদেশ প্রেরণে সরকারের অনুমতির জন্য নতুন উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে তোড়জোড় আছে পরিবার ও দলের মধ্যে। তবে নতুন উদ্যোগ কার্যকর হবে কিনা সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার ওপর। জানা যায়, ৭৭ বছর বয়সি বেগম খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনিসহ নানাবিধ জটিল রোগ আক্রান্ত। বর্তমানে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরার্মশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাকে দেখতে নিয়মিত গুলশানের বাসায় যান চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের মধ্যে নিয়মিত বাসায় যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মামুন। এ ছাড়া বোর্ডের ডাক্তাররা তাকে শিডিউল অনুযায়ী দেখতে যান।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ