তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্তে হত্যাসহ ভারত বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানে ভারতকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা।
বাংলাদেশে সফররত ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিভাগের প্রধান বিজয় মুরলিধর চৌথাইওয়ালের সোমবার (১৪ মার্চ) বৈঠকে এমন আহ্বান করেন নেতারা। রাজধানীর একটি হোটেলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন নেতারা।
জোটের নেতাদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন— ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে বিজেপি নেতা বিজয় বাংলাদেশে এসেছেন বলে ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সঙ্গে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন জায়গায় সংযোগ স্থাপন করছেন। ভারত সম্পর্কে আমাদের মতামত, আমরা কী চাই, কোনও ব্যতিক্রম আছে কিনা, ইত্যাদি নানান বিষয়। মূলত সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য যা যা জানা ও বুঝার দরকার, সেগুলোর বোঝাপড়া করার জন্যই তাদের এই আগমন।
তিস্তার অভিন্ন পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে উদ্বেগের কথা বিজেপি নেতা জানিয়েছেন বলে জানান আমু। আমির হোসেন আমু বলেন, ‘অনেক সময় শুনি যে, আসামে যারা মাইগ্রেট করেছে, তাদের ফেরত দেওয়া, এগুলো যাতে না হয়। এটা নিয়ে আমাদের স্পর্শকাতর ব্যাপার রয়েছে। এটা আমার তুলে ধরেছি। উনি বলেছেন, আমাদের বক্তব্য যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দেবেন এবং এই ব্যাপারে তার ভূমিকা রাখবেন।’
বিষয়গুলো নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। এখন নতুন করে আশাব্যঞ্জক কোনেও কিছু বলেছেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, ‘এর বেশি আশাব্যঞ্জক কী বলবে? এটা দলীয় আলোচনা, সরকারি পর্যায়ের না। তিনিও সরকারে নেই, আমরাও সরকারে নেই। তিনি সরকারি দলের লোক, আমরাও সরকারি দলের লোক। এখন আলোচনা হতে হতে একটা সমাধান আসবে। অনেকবারই অনেক আলোচনা হবে। যেটা আপনারা উত্থাপন করেছেন সেটা সঠিক। যেটা আলোচনা হয়, আশ্বাস হয়, কিন্তু হয় না। কিন্তু এইভাবে হতে হতে একটা সময় সমাধান হতে হবে।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এক নেতা বলেন, আমরা দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের সীমান্তে হত্যা, তিস্তার পানি বণ্টন, নেপাল ও ভূটানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে ট্রানজিট সমস্যার সমাধান করার জন্য বলেছি। আমরা বলেছি, এটা দ্বিপাক্ষিক সমস্যা, এর সমাধান না হলে, এগুলো নিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো দুই দেশের সম্পর্ক অবনতির কাজে ব্যবহার করে। তাই সম্পর্ক ঠিক রাখতে হলে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে এই সুযোগ দেওয়া উচিত না। তাই আপনারা সমস্যার সমাধান করা উচিত।
ওই নেতা আরও বলেন, উনি (বিজয় মুরলিধর চৌথাইওয়াল) আমাদের বলেছেন, ‘ভারত সরকারকে এই সফরের বিষয়গুলো পজিটিভলি বলবো, সমস্যা সমাধানের দিকে এগিয়ে নিতে যে, বাংলাদেশের উদ্বেগগুলো আমরা বুঝেছি।’
এর আগে দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিজয় মুরলিধর চৌথাইওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন। দলটির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফরউল্লাহ, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও বিজেপির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। এছাড়া দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ