বিএনপি আগামী বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অজুহাত খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নির্বাচনে কে আসবে আর কে আসবে না এ নিয়েও তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিশেষ করে এবার নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে বিএনপিসহ ১৩টি রাজনৈতিক দল। তবে রাজনীতির মাঠে থাকতে হলে নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া বিএনপির সামনে কোনো বিকল্প পথ নেই বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা মনে করেন, দলের ভেতরে মূল নেতৃত্বে আসার কেউ না থাকায়, দুর্বলতা ঢাকতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে টালবাহানা করছে বিএনপি। দলটি নিজেদের নেতৃত্ব সংকটকে আড়াল করতেই সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার অজুহাত খুঁজছে।
তারা বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে আমাদের কিছুই করণীয় নেই। যথা সময়ে নির্বাচন হবে। বিএনপিকে সুস্থধারার রাজনীতিতে ফিরে আসার আহ্বানও জানান তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংসদে প্রধান বিরোধী দল না হলেও, আলোচনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পরেই বিএনপির অবস্থান। এবার নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় অংশও নেয়নি দলটি। তাদের দাবি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তবে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারুক বা না পারুক, নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারুক বা না পারুক, বিএনপির আগামী নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে তাদের শরিকরা কী করবে? এটা কিন্তু বড় প্রশ্ন। ফলে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা আরো বলেন, রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে হলে বিএনপির সামনে দুইটি অপশন খোলা রয়েছে। আগামীতে রাজনীতি করতে চাইলে নির্বাচনে অংশ নেয়া। আর না হয় বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাওয়া। তাই নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকারের ওপর একটা চাপ জারি রাখতে চায় বিএনপি। নির্দলীয় সরকার ও খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না— এ দুই ইস্যুতেও হয়তো আগামীতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, নির্বাচনে আসা না আসা বিএনপির নিজস্ব ব্যাপার। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান যেহেতু নির্বাচন করতে পারবে না সেহেতু তারা নির্বাচনে যোগ দিতে ভেতরে ভেতরে খুব একটা ইচ্ছুক নয়। আওয়ামী লীগও তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো তৎপরতা দেখাবে না।
সূত্রমতে, প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল দলটি। ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা। এদিকে, নতুন নির্বাচন কমিশনও দায়িত্ব গ্রহণ করে বলেছে—বিএনপিসহ সব দলকে তারা নির্বাচনী ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চায়। জনগণকে তার ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে। আগামী সংসদ নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। তবে বিএনপি বলছে, নতুন নির্বাচন কমিশনে সবাই আওয়ামী লীগের লোক। তাই আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। আর তাদের অধীনে গঠন হবে নির্বাচন কমিশন। এরপরই নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। দলীয় এই সিদ্ধান্তে অনড় শীর্ষ নেতারা। কিন্তু হিসাব বলছে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দু-এক সময়ে স্বীকার করেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেয়া তাদের ভুল ছিল।
জানা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনা মানেই বড় দুই দলের ইস্যু। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে রাজনৈতিক অঙ্গনে সেভাবে আলোচনায় কেউই আসতে পারেনি। এটাই বাস্তবতা। এই আলোচনায় থাকতে পারত জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোও। তবে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকলেও জনগণ মনে করে তারা সরকারের গৃহপালিত দল। আর বামদলগুলো নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের লড়াইয়ের আড়ালে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব তাদের মাঠে দাঁড়াতে দেয়নি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক নয়া শতাব্দীকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন দণ্ডিত আসামি। নির্বাচন বিধি অনুসারে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তারেক রহমান দেশ থেকে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। সেও দণ্ডিত আসামি। তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে। বিএনপির এখন অবস্থা হচ্ছে মাহুত ছাড়া হাতির মতো।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি নামক দলটি রাজনীতিতে খেই হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন জনগণের ভোটের ওপর নির্ভর করে। বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায় কারণ এই দেশের মানুষ ভুলে নাই কীভাবে তারা দেশকে হত্যার লীলাভূমিতে পরিণত করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, নির্বাচনে অংশ না নিলে আরো পাঁচ বছর সংসদ বা ক্ষমতার বাইরে থাকতে হবে বিএনপিকে। ফলে দীর্ঘ এই সময়ে সংসদের বাইরে থাকার চাপ বিএনপি সহ্য করতে পারবে না। দলের অস্তিত্ব চরম সংকটে পড়বে। পার্লামেন্টে থাকলে তারা কথা বলার সুযোগ পাবে। প্রতিবাদ জানাতে পারবে।
আর বিএনপির বিদেশি মিত্ররা চায় বিএনপি নির্বাচনে যাক, সংসদে যাক। পক্ষান্তরে বর্তমান সরকার তিন মেয়াদ ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিরুদ্ধেও সমালোচনা আছে। অ্যান্টি-আওয়ামী লীগও তৈরি হয়েছে। ভোটারদের ভিন্ন চিন্তা আছে। তাই বিএনপির কৌশল হলো আগামী নির্বাচনের আগে যতটা চাপ সৃষ্টি করে সুবিধা নেয়া যায়। তবে টার্গেট নির্বাচন।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ