ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিত্রের সন্ধানে বিএনপি

প্রকাশনার সময়: ০৬ মার্চ ২০২২, ০৯:১২ | আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২, ১০:৪৭

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নিষ্ক্রিয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এবার নতুন মিত্রের সন্ধানে নেমেছে বিএনপি। জোরদার করা হয়েছে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক তৎপরতা। ২০২৩ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক চাঙা করার চেষ্টাও করছে দলটি। সমমনা সব দল ও মতকে নিয়ে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার তৎপরতাও চালাচ্ছে বিএনপি। তাতে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মতো পুরোনো জোট কাঠামো নাও থাকতে পারে। আসতে পারে বড় ধরনের চমক। লক্ষ্য— আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সরকার পতন আন্দোলন। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি সমমনা বাম, ডান ও ইসলামপন্থি কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। দলগুলোর কয়েকটি জোটে যোগ দিতে আগ্রহও দেখিয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে শেষ সময়ে রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতি ও হিসাব-নিকাশ চলছে। কিন্তু কোনো দলই এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। আলাপকালে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। বিএনপির নেতারা বলছেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী সব পক্ষকে এক জায়গায় আনতে পুরোনো জোট বহাল রাখা সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যে নতুন জোট গঠন ও আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে বিএনপি। প্রাথমিকভাবে অনেক দল স্ব স্ব দলীয় ব্যানারে আন্দোলন কর্মসূচি দেয়ার বিষয়েও একমত হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হতে আরো কিছু সময় লাগবে। চলতি মাসের শেষ দিকে বা এপ্রিল মাসের শুরুতে আসতে পারে বৃহৎ জোটের ঘোষণা।

দলের শীর্ষ নেতৃত্বের লক্ষ্য, সমমনা ডান-বামসহ সব রাজনৈতিক দল ও মতকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। তারপর সরকার পতনের আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটনা। রাজপথে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা। যদিও জোট বাড়ানোর এ উদ্যোগে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এখন আন্দোলনের প্রয়োজনে জোট বড় করা হলেও ভবিষ্যতে নির্বাচনে বড় ধরনের ছাড় দিতে হবে বলে মনে করেন তারা।

তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ঐক্যের এই নতুন ফর্মুলার নেপথ্যের কারণ যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে পাশ কাটানো। বিএনপির উপলব্ধি— জামায়াত হতে পারে এই জোটের জন্য বড় বাধা। তাদের জন্য অনেক দল বিএনপির সঙ্গে জোট গড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না। নতুন জোটের তাৎক্ষণিক লক্ষ্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যাওয়া। তবে নির্বাচনের সময় পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তারা আরো বলেন, নির্বাচনের আগে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে কূটনৈতিক নীতির পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক লবিং তৎপরতা আরো জোরালো করবে বিএনপি। এজন্য দলের বৈদেশিক কমিটি হোমওয়ার্কও করছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সবকিছুই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বহুমুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। এ জন্য তারা দলনিরপেক্ষ সরকারের বিষয়টি সামনে আনতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাদের গুরুত্ব দেশের বাইরেও তুলে ধরবে। করোনার কারণে মাঠের কর্মসূচি বন্ধ থাকার ফাঁকে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার কাজ প্রায় শেষ করেছে দলটি। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সরকারবিরোধীদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলছেন। আন্দোলন ইস্যুতে গোপনীয়তার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে মধ্যপন্থার একটি সিদ্ধান্তে আসতে চায় বিএনপি। কেননা জামায়াতের কারণে অনেক রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে আসতে চাইছে না। তবে জামায়াতের ভোটব্যাংক কথা মাথায় রেখেই তাদের নিয়ে নতুনভাবে হিসাব কষছে বিএনপি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনা হচ্ছে। এজন্য ইতোমধ্যেই দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেছেন। তৃণমূলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আগামী জুনের মধ্যে জেলা সম্মেলন শেষ করতে চায় বিএনপি। সব মিলিয়ে আন্দোলন বেগবান করতে নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব নয়া শতাব্দীকে বলেন, বিএনপি এ মুহূর্তে সেভাবে কোনো কর্মসূচি পালন করছে না। জামায়াতে ইসলামীও কোনো কর্মসূচি পালন করছে না। যে কারণে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির পক্ষ থেকে টুকটাক কর্মসূচি হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে যাদের আসার তারা আসছেন। বড় ধরনের জনসভা বা সেরকম কর্মসূচি এখন হচ্ছে না।’ জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নয়া শতাব্দীকে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হবে না। মানুষ আজ অসহায়ের মতো দিনযাপন করলেও সরকারের ভয়ে কেউ কিছু বলছে না। এ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াধীন। আমরা ইতোমধ্যেই সরকার ও সরকারদলীয় শরিক ছাড়া দেশপ্রেমিক সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। যুগপৎ আন্দোলনে সবাই শরিক থাকবে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালন করবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘এবারের ঐক্যে কী ভিন্নতা থাকবে তা সময় হলেই দেখা যাবে। কাজ শুরু করেছি। দেখা যাক কী হয়।’

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ