ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগে লেখাপড়া, পরে রাজনীতি! 

প্রকাশনার সময়: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:০৯

প্রিয় অনুজ, স্নেহ-ভালোবাসা নিও। আজ আমি যে কথাগুলি বলছি, তা অন্য কোন রাজনৈতিক অগ্রজ অনুজদের কভু এভাবে বলেছে কিনা বা আদৌ বলবে কিনা জানা নেই!

তোমরা যারা মহামূল্যবান যৌবনের মধ্যগগনে 'পলিটিক্যাল' তকমাটা গায়ে লাগিয়েছো, দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে দেশ ও জাতির সেবা করার অভিপ্রায় নিয়ে ছাত্ররাজনীতিকে লেখাপড়া, ব্যক্তিজীবন, পরিবার বা অন্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছো, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তোমরা মূলত একটা ঘোরের মধ্যে আছো!

কেউ আদর্শিক টানে আবেগ-ভালোবাসা একাকার করে, দেশ-জাতি উদ্ধারের মহতী অভিপ্রায়ে, কেউ অর্থ-ক্ষমতা-প্রভাব, নাম-ডাক-পরিচিতি, প্রভাব-প্রতিপত্তির নেশায় দিন-রাত বিরামহীন ছুটে চলছে রাজনীতির মাঠে, অঢেল সময় দিচ্ছো নৈমিত্তিক রাজনৈতিক আড্ডায়, সিনিয়রদের প্রটোকলে, মিছিল, মিটিং, সভায়, তপ্ত রাজপথে... একটা পরিচয়, পদ-পদবী নামক সোনার হরিণের পিছনে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর... এইতো হচ্ছে, হবে! এ নেশা বড় কঠিন নেশা, একবার এই নেশার ঘোরে পরলে, মরীচিকার মায়াজালে জড়ালে তা থেকে বেরিয়ে এসে 'অরাজনৈতিক' সাধারণ একজন হয়ে ওঠা বড্ড কঠিন, দুঃসাধ্য প্রায়!

তাই বলে তোমার 'নেতা' হওয়ার বহু আরাধ্য লালিত স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে, রাজনীতির মাঠ, চিরচেনা রাজপথের মায়া ত্যাগের কথা বলছি নাহ মোটেও। এদেশে 'অরাজনৈতিক' বা 'নিরপেক্ষ' বলে কিছু আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। ইতিবাচক পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে খোদ নিজে রাজনীতির যে মায়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো, তা থেকে সহসা বেরোবার উপদেশ-পরামর্শ তোমাদের কিভাবে দেই!

তবে শুভাকাঙ্ক্ষী অগ্রজ হিসেবে রাজনীতির বন্ধুর পথে চলার স্বীয় দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে কিছু টোটকা দিতে চাই, যা অনাগত আগামীতে তোমাদের করণীয় নির্ধারণে আলবৎ কাজে লাগবে বৈকি!

তোমাদের 'অপশনাল' আর 'কম্পালসারি'র একটা সহজ ফর্মুলা বলছি, হয়তো একজন বিবেকবান, স্বাভাবিক জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন বিচক্ষণ 'আশরাফুল মাখলুকাত', মানুষ হিসেবে তোমাকে করনীয় নির্ধারণে, জীবনের ভুল গলিপথ থেকে সঠিক রাস্তা খুঁজে নিতে সাহায্য করবে।

এদেশের জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি সকল চড়াই-উতরাই, আর ইতিহাসের পটপরিবর্তনে ছাত্ররাজনীতির সপ্রতিভ ভূমিকা-অবদান অনস্বীকার্য! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডীতে প্রবেশমাত্র জাতীয় রাজনীতির আঁতুড়ঘর, 'ছাত্র রাজনীতির পাঠশালা'য় তাই তুমি সাদরে আমন্ত্রিত। তবে মনে রেখো, একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে তোমার প্রতি বাবা-মা, পরিবার, স্বজনের আস্থা, প্রত্যাশা ও স্বপ্ন পূরণে তোমার জন্য লেখাপড়াটা কিন্তু মুখ্য! রাজনীতি, আড্ডা, ভ্রমণ, রিলেশন কিংবা অন্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে সঠিক বিদ্যা অর্জনকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেয়া, জ্ঞান অন্বেষণ করা আর অবশ্যই গর্ব করার মতো একটা 'ভালো রেজাল্ট' নিয়ে জীবন সংগ্রামে নামার তাগিদটা ভেতর থেকে অনুভব-অনুধাবন করা তাই 'কম্পালসারি'!

আর একজন শিক্ষার্থীর কাছে যেকোনো পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাত্ররাজনীতির চর্চাটা স্রেফ 'অপশনাল', অনিশ্চিত কোন মোহের বশে কম্পালসারিকে উপেক্ষা করে অপশনালের পিছু ছুটলে আম-ছালা দুটো হারানোর শঙ্কা অবশ্যই রয়েছে! লেখাপড়ার ফরজ বাদ দিয়ে হাত্ররাজনীতির নফল নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করলে একটা সময় সব হারিয়ে সঠিক উপলব্ধি হলেও সে আত্ম-উপলব্ধি তোমাকে একবুক দীর্ঘশ্বাস আর প্রচন্ডরকম হতাশা ছাড়া আর কিছুই দেবে না, এটা হলফনামায় লিখে দিতে পারি।

চলো ছোট্ট একটা হিসেব কষি, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আরাধ্য চাকরিটির নাম, বিসিএস। সর্বশেষ ৪১তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার জন, যার মাঝে নিয়োগ পেয়েছেন ২ হাজার ১৬৬ জন, অর্থাৎ প্রতি ২১৯ জনে একজন এই আরাধ্য সোনার হরিণের দেখা পেয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন। এই সংগঠন প্রায় ৫০ লাখ নেতা-কর্মী-সমর্থক। যদি ৫০ লক্ষের মাঝে অর্ধেক অর্থাৎ ২৫ লক্ষ সক্রিয় ধরি, তবে কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগর-জেলা-থানা-ইউনিয়ন সহ সকল ইউনিট মিলে পদধারী নেতার সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।

এবার ভেবে দেখো, এই ৫০ হাজারের মাঝে রাজনীতিকে কম্পালসারি বিবেচনা করে, রাজনীতিবিদ বা নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে কতজন সফল হয়েছে? একটা সচ্ছল, সুন্দর স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা পেয়েছে? বড় পদ-পদবী, অমিত সম্ভাবনা নিয়েও কতজন যে হারিয়ে গেছে সময়ের অতল গহীনে....

আনুপাতিক হারটা তাহলে কত? বর্তমান কঠিন বাস্তবতায় যদিও আরো কম, তবুও চরম আশাবাদী হিসেবে ধরে নিচ্ছি, কেন্দ্র সহ সকল ইউনিট মিলিয়ে এই ৫০ হাজারের মাঝে ৫ হাজার ছাত্রনেতা নিজেকে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ২৫ লাখের মাঝে মাত্র ৫ হাজার ছাত্রনেতা স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতির ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকে, আনুপাতিক হার, প্রতি ৫০০ জনে ১ জন!

তাহলে অবশিষ্ট ২৪ লাখ ৯৫ হাজার নিজের যৌবনের অমূল্য সময়, শ্রম, মেধা, আবেগ সব ঢেলে দিয়েও একসময় শূন্যহাতে অপাংক্তেয় হিসেব হারিয়ে যায় কালের অতল গহ্বরে। 'টয়লেট টিস্যুর রাজনীতি'তে ততদিনে তোমাদের ব্যবহারিক উপযোগিতা কার্যত শেষ, মাথাগোনা রাজনীতিতে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে তোমার!

আর এমন একটা সময় তুমি রাজনীতি থেকে ঝরে পরবে, বঞ্চিত হবে যখন ফের পড়ার টেবিলে বসার সময় শেষ, সরকারি চাকরির বয়স শেষ, বিয়ের বয়স যায় যায়, নেই কোন সামাজিক পরিচয়, উদ্যোক্তা হওয়ার বা একটা ভালো ব্যবসায়ের জন্যও নেই কোন পুঁজি! পরিবারের জন্য তখন তুমি 'বোঝা', মাথাব্যথা! আর এতদিন, মাস, বছর তোমাকে নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করা বড় ভাই বা সিনিয়র নেতা'র কাছে 'কিছু একটা করে দেবে' এহেন প্রত্যাশা নিয়ে ধরনা দিতে গেলে পদ পরিচয়, সামাজিক স্ট্যাটাস ছাড়া তুমি হাজারো নতুন মুখের ভীড়ে সেখানেও অনাঙ্ক্ষিত ভেজাল, অপাংক্তেয় 'উটকো ঝামেলা'!

সে ঘোর অমানিশায় মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দর্শনের কারণে ভিন্ন মতাদর্শের, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রতিহিংসা, মামলা-হামলার ঝুঁকি তো আছেই! সব মিলে অস্বাভাবিক দুর্বিষহ জীবন, এক সমুদ্র হতাশা আর অন্যের করুণা নির্ভর অনিশ্চিত জীবনের হাতছানি!

হ্যাঁ, এটাই বাস্তবতা! আশেপাশে তাকাও, হাজারো সাবেক দেখো, হিসেবটা মিলিয়ে নাও। রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে, বাস্তবতা অস্বীকার করে মনে মনে কলা খেয়ে পথ চলতে গেলে কিন্তু হোঁচট খেতে হবে! আর হোঁচটটা যদি এমন সময় খাও, যখন তোমার আর উঠে দাঁড়াবার, ঘুরে দাঁড়াবার শক্তিটুকু অবশিষ্ট নেই, তখন এমন করুণ পরিণতি তো অবশ্যম্ভাবী।

যে পরিমান মেধা-সময়-শ্রম ব্যয় করে তুমি ৫০ লাখের মাঝে পদধারী ৫০ হাজার বা সফল ৫ হাজারের একজন হবে, তার অর্ধেক এর কম সময়, শ্রম, মেধা তোমাকে দেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বিসিএসে ২১৯ জনের একজন করতে পারে, তুমি পেতে পারো ভালো মানের যেকোনো সরকারী/বেসরকারি চাকরি বা হতে পারো সফল উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, তুখোড় আইনজীবী, দেশসেরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার।

তাহলে কি তোমার ছাত্ররাজনীতিতে জড়ানোর সিদ্ধান্ত মস্ত ভুল? তোমার ধারণ করা আদর্শের তরে কাজ করার ভাবনা অহেতুক-অমূলক?

কখনোই না! তুমি 'পলিটিকাল' হিসেবে সাধারণ আর দশজন শিক্ষার্থীর চেয়ে নেতৃত্বগুণে, সাহসে-মেধা-মননে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় 'মাচ বেটার' একজন হিসেবেই সারভাইভ করার সক্ষমতা রাখো নি:সন্দেহে! তোমাকে কেবল সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিচক্ষণতার সাথে, একজন ছাত্র হিসেবে লেখাপড়াকে 'কম্পালসারি' করে রাজনীতিকে 'অপশনাল' ধরে এগোতে হবে। রাজনীতির জন্য কোনভাবেই লেখাপড়ার ক্ষতি করা যাবে না! রাজনীতি থেকে যা আসবে সেটা 'বোনাস'। এমন অনেককেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, যারা কেন্দ্রে বড় পদ দখল করে ছিলো, আছে কিন্তু গতানুগতিক 'আনকন্সট্রাকটিভ' রাজনীতির গড্ডালিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নূন্যতম সার্টিফিকেটটাও নিতে পারেনি, ছাত্রত্বও শেষ! একবার ভেবে দেখো সাবেক হয়ে অদূর ভবিষ্যতে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা প্রত্যাশিত প্রতিষ্ঠা আর কপালে না জুটলে তাদের পরিণতি কি হবে?

মনে রেখো, যোগ্য হিসেবে তোমার প্রাপ্য রাজনৈতিক পদ পরিচয় চাইলেই ক্ষমতাধর কলমধারী কেউ কেড়ে নিতে পারে, কিন্তু তোমার অর্জিত বিদ্যা, ভালো রেজাল্ট, সার্টিফিকেট তো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না! তাহলে যে জুয়ার রাজনীতিতে তোমার ভালোমন্দ, সাফল্য-ব্যর্থতার প্রায় পুরোটাই নির্ভার করছে অন্য কারো মেজাজ-মর্জি, খেয়াল-খুশী, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও ব্যক্তিস্বার্থের কতশত ইকুয়েশনের উপর, সেই রাজনীতির জন্য লেখাপড়া ছেড়ে, জীবন-যৌবন উজাড় করে দেয়ার চেয়ে বড় জুয়া আর কি হতে পারে?

দুটো উদাহরণ দেই, আমি ও সহোদর অনুজ গোলাম রুহানী যথাক্রমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার সভাপতি/সেক্রেটারি ক্যান্ডিডেট ছিলাম, ২০১৩ তে আমাদের হল কমিটির আগে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি Mehedy Hasan ভাই এক সন্ধ্যায় আমাদের দুই ভাইকে ডেকে বললেন, মাদারীপুর থেকে দুই ভাইকে দুই হলে নেতা বানানো সম্ভব হবে না, যেকোনো একজনকে নিয়ে চেষ্টা করবেন। সেদিনই আম্মুর সাথে আলোচনা করে, ভেবেচিন্তে আমি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার আর রুহানি লেখাপড়ায় মনোযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো, তখন হলের সবচেয়ে সক্রিয় কর্মীদের একজন হয়েও রাজনীতির পাশাপাশি লেখাপড়াটা ঠিক রেখেছিলো বলেই পছন্দের চাকরি, বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে।

প্রার্থী হিসেবে আমার মতই সর্বদিক বিবেচনায় যোগ্যতর হয়েও পদ বঞ্চিত হয় মুক্তিযোদ্ধা হলের Jahidul Islam। এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে, কমিটি ঘোষণার রাতে পদ বঞ্চিত হয়ে আমার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাদে পানির ট্যাংকের উপর আমরা দুজন ভীষণ মন খারাপ করে বসে ছিলাম! অতঃপর, শান্তনা পুরস্কার হিসেবে কেন্দ্রের বর্ধিত কমিটিতে একটা উপ-সম্পাদক এর পদ জুটলেও আমার ভাইটা ক্ষোভ-অভিমানে রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে নেয় নিজেকে, কিছুদিন পরেই ৩৩ তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে সে ছাত্রলীগের মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে যদি আর ১০ জনের মত লেখাপড়া ছেড়ে কেবল রাজনীতিকেই ধ্যানজ্ঞান মানতো, তবে জীবনপথে হোঁচট খেত নিশ্চিত, যেমন হোচঁট খেয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে হাহুতাশ করছে আমাদের সমসাময়িক অনেকেই!

তুমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলীয়ান হয়ে ছাত্রলীগ করা শুরু করেছো, এমনটা মোটেও নয় যে তোমার ধারণ করা আদর্শের চর্চা করতে, প্রিয় দল-সংগঠনকে সার্ভ করতে তোমাকে দীর্ঘমেয়াদী রাজনীতি-ই করতে হবে, বরং যেকোনো পেশায় গিয়ে তুমি স্বীয় অবস্থান থেকে আদর্শ আর প্রিয় দলের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারো। দেশকে এগিয়ে নিতে, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে রাজনীতি ছাড়াও যেকোনো প্লাটফর্ম থেকে অনন্য অবদান রাখার যথেষ্ট সুযোগ আছে!

তাই, শুরু থেকেই ছাত্র রাজনীতির পাঠ নেয়ার পাশাপাশি লেখাপড়াটা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে। যদি কেউ রাজনীতিকে লেখাপড়ার অন্তরায় হিসেবে দাঁড় করাতে চায়, তবে তা স্রেফ 'লেইম এক্সকিউজ' ভিন্ন আর কিছুই নয়! বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির আঁতুড়ঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির কালচার মানে মধুর ক্যান্টিনে নিয়মিত রাজনৈতিক আড্ডা, মিটিং-মিছিল, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেও বেশ ভালোভাবেই লেখাপড়াটা চালানো যায়।

তুমি যদি প্রোগ্রাম শেষে পড়ালেখার সময়ও অমুক ভাই কি করলো, তমুক আপু কি পরলো, কে পদ পাবে, কে পাবে না, এজন্য কার কি ইকুয়েশন, কে কার পিছনে লাগে, গুঁটি করে এসমস্ত আজাইরা ফাও আলাপ-আড্ডায় শত সহস্র কর্মঘণ্টা বিনষ্ট করো, তাহলে নিশ্চিতভাবেই নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছো! একদম বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আবাসিক হলে থাকা সক্রিয় ছাত্ররাজনীতির একজন কর্মীকে 'সাংগঠনিক কাজে' সব মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন বড়জোর দুই থেকে আড়াইঘন্টা সময় ব্যয় করতে হয়, যার চেয়ে ঢের বেশি সময় একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, অহেতুক শুয়ে-বসে ব্যয় করে। এখানে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়ার কালচার যৎসামান্য, সদিচ্ছা থাকলে রাজনীতিতে পুরো সক্রিয় থেকেও লেখাপড়ায় প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়। আ।আমার হলের অনুজ, কলা অনুষদের আরবি ডিপার্টমেন্টের Ashraf Uddin এর কথা মনে আছে, হল শাখা ছাত্রলীগের সবচেয়ে একটিভ কর্মীদের একজন হয়েও সে ডিপার্টমেন্টে অনার্স-মাস্টার্স দুটোতেই ১ম শ্রেণীতে ১ম হয়েছিলো। চাইলে এমন অনেকের নাম অনায়াসেই বলা যাবে, ছাত্ররাজনীতি যাদের লেখাপড়ায় মোটেও অন্তরায় হয়নি, 'একটিভ পলিটিক্যাল' একজন হয়েও যারা প্রত্যাশানুযায়ী ভালো ফলাফল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেছে। কারণ একটাই, তারা রাজনীতিকে 'অপশনাল' আর লেখাপড়াকে 'কম্পালসারি' ভেবেছিলো। তাই, রাজনীতির পদ-পরিচয়, পলিটিক্যাল হিসেবে সুযোগ-সুবিধা, প্রত্যাশিত ক্যারিয়ার মোটকথা সব সাফল্যই তাদের জীবনে ধরা দিয়েছে।

অনেক কথাই বলে ফেললাম, সারমর্ম হচ্ছে, আগে লেখাপড়া, পরে রাজনীতি! আল্লাহ্‌ না করুক, এত আবেগ-ভালোবাসা-শ্রম-ঘামের রাজনীতিতে বড় কর্তাদের হেয়ালীপনা, খেয়াল-খুশী, ইকুয়েশনে বঞ্চিত হলেও যেন তোমাকে জীবন যুদ্ধে যেন হার না মানতে হয়, অর্জিত জ্ঞান-বিদ্যাই যেন হয় তোনার জীবন পথে চলার আলোকবর্তিকা, আঁধারের দিশারী!

বিবেকের তাড়না থেকে ভাবনার খোরাকি দিলাম, একটু ভেবো দেখো। ফের ভালোবাসা নিও... অনাগত আগামীর তরে অনিঃশেষ দোয়া ও অফুরন্ত শুভকামনা রইলো, হে প্রিয় অনুজ!

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ